সাইফুল আলম

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক উল্লেখ করেন -কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে,তুমিও তার ব্যতিক্রম নও। মানুষ হিসেবে এই চিরন্তন বানী আমরা সবাই বিশ্বাস করি তবে কিছু অপ্রত্যাশিত মৃত্যু পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কর্তব্য পালন করতে গিয়ে মৃত্যু তার মধ্যে অন্যতম।যেখানে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কিংবা অন্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রায়সই নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হয় পুলিশ সদস্যদের। এরকম কর্তব্য পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের নিহত সদস্যদের স্মরনে আজ পহেলা মার্চ পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালিত হচ্ছে। কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরন করে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পুলিশ সদর দপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৭ সাল থেকে এ দিবসটি পালন করছে বাংলাদেশ পুলিশ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সারাদেশে পালিত হচ্ছে পুলিশ মেমোরিয়াল ডে।যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,ভারত সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরন করে বছরে একটি দিন বিশেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকে।

বাংলাদেশ পুলিশের আত্নত্যাগের কথা বলতে গেলে শুরুটা করতে হয় ২৫ শে মার্চ কাল রাতের ইতিহাস থেকে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে ২৫ শে মার্চ কাল রাতে (২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহর) রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাক হানাদারদের ব্যুলেটে প্রথম শহীদ হন বাংলাদেশ পুলিশের গর্বিত সদস্য। এমনকি স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বীর বাঙ্গালী হিসেবে প্রথম পাক হানাদারদের বুকে যে ব্যুলেট টি নিক্ষেপ করেছিলেন তিনিও বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য।নয় মাস লড়াই সংগ্রামের সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধে শুধু বাংলাদেশ পুলিশেরই প্রায় দেড় হাজার বিভিন্ন পদের পুলিশ সদস্য শহীদ হয়েছিলেন।পুলিশের আত্নত্যাগের ইতিহাস শুরু তখন থেকেই।বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবগাঁথা এরকম ইতিহাস নিশ্চয়ই বাহিনীর একজন সদস্য হিসেবে আমাকে গৌরবান্বিত করে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে আজ অবদি অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবোজ্জল ইতিহাস রয়েছে। এরকম গৌরবোজ্জল ইতিহাস অক্ষুন্ন রেখে জননিরাপত্তা ও স্বাভাবিক আইন শৃংখলা নিশ্চিত করতে গিয়ে প্রতি বছর সন্ত্রাসী আক্রমন কিংবা বিভিন্নভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিহত হয়ে থাকেন।বিশেষ করে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এর সংখ্যা বহুগুন।
শুধুমাত্র মহামারি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে গিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ৮৭ জন পুলিশ সদস্য শাহাদাত বরন করেন। অপ্রত্যাশিতভাবে নিহত এরকম পুলিশ সদস্যদের আত্নত্যাগ কে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করতে এবং তাদের হতভাগা পরিবারের সদস্যেদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করতেই মূলত পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন করা হয়ে থাকে।এতে করে একদিকে যেমন নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবার সম্মানীত বোধ করবেন একই সাথে জন নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা সহ জনকল্যান ও রাষ্ট্রের প্রয়োজনে যেকোন ঝুঁকি নিতে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য আরো অনুপ্রানিত হবে।
বিনম্র শ্রদ্ধা কর্তব্য পালনে নিহত সকল বীর পুলিশ সদস্যদের।প্রত্যাশা করি বাহিনী আর সহকর্মীদের ভালবাসা, সহযোগিতায় বেঁচে থাকুক তাদের পরিবার।

“ কর্তব্যের তরে দিয়ে গেলে যারা আত্নবলিদান,প্রতিক্ষনে স্মরনে রাখিবো ধরি তোমাদের সম্মান”

লেখক- সাইফুল আলম
অফিসার ইনচার্জ
জেলা গোয়েন্দা শাখা, কক্সবাজার।