এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া:

পাহাড় আর মাতামুহুরী নদীর অপরূপ মিতালীতে ভরপুর নতুন পর্যটন জোন নিবৃত্তে নির্সগ পার্ক ঘিরে হঠাৎ করে দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার দুর্গম জনপদের ইউনিয়ন সুরাজপুর-মানিকপুর। আর এই নতুন পর্যটনজোন ঘিরে স্থানীয়ভাবে তৈরী হয়েছে অর্থনেতিক সমৃদ্ধির অমিত সম্ভাবনা। শতভাগ বিদ্যুাতায়ন আর যোগাযোগ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তনের কল্যাণে জনগনের জীবনধারাও পাল্টে যেতে শুরু করেছে। পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ উন্নত হওয়ায় বর্তমানে ইউনিয়নে অবস্থিত নতুন পর্যটন স্পটে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে দেশ-বিদেশী পর্যটক-দর্শনার্থীদের।

সম্ভাবনার এই জনপদেও লেগেছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের আগাম হাওয়া। বিশেষ করে চেয়ারম্যান পদে এই ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ থেকে এবার নৌকার টিকেট কে পাচ্ছেন তা নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও সর্বসাধারণের মাঝে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা চলছে। কারণ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর থেকে গেল তিনবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম।

মুলত একসময় ইউনিয়নটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে জেলাব্যাপী পরিচিতি থাকলেও এখন বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা একেবারে নাজুক। পরিসংখ্যান মতে, ২০০৩ সালে ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার প্রথম নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আজিমুল হক প্রতিদ্বন্দি বিএনপির প্রার্থী নাছির উদ্দিন সিকদারকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও প্রায় আটশত ভোটের ব্যবধানে বিএনপির একই প্রার্থীকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামীলীগের আজিমুল হক।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান আজিমুল হক আজিম। ওই নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলেও না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ভোটযুদ্ধে ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা ও চকরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রুস্তম শাহরিয়ার। অবশ্য ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন সাইফুল কবির চৌধুরী। ভোটের ফলাফলে বিজয়ী হন আওয়ামীলীগ তথা নৌকার প্রার্থী আজিমুল হক আজিম।

পরিসংখ্যান মতে, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পর অনুষ্ঠিত তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলের মতো এই ইউনিয়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী প্রতিটি কেন্দ্রে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মতে, এই ইউনিয়ন একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এখন বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা আগের মতো নেই। পক্ষান্তরে বেড়েছে আওয়ামীলীগের ভোট ব্যাংক ও সাংগঠনিক গতিশীলতা।

এর নৈপথ্য কারণ উল্লেখ্য করে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বাদল শর্মা বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম যেমন এলাকার উন্নয়নের জন্য নিবেদিত, তেমনি সাধারণ জনগনের জন্য উদার মানসিকতা নিয়ে দিবারাত্রি কাজ করেন। তাঁর দক্ষতা আর গুনাবলীর কারণে বিএনপি সমর্থন করলেও খেটে-খাওয়া মানুষ এখন আওয়ামীলীগের পতাকা তলে আবদ্ধ হয়েছে।

আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আছেন তিনবারের চেয়ারম্যান চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক আজিমুল হক আজিম। তিনি ছাড়াও ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও চকরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রস্তম শাহরিয়ার।

গতবারের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাইফুল কবির চৌধুরী ভোটযুদ্ধে থাকলেও এবারের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন কী না এখনো পরিস্কার নয়। তবে এবার বিএনপি দলীয় প্রতীকে সারাদেশে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেনা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও সাবেক ভিপি রস্তম শাহরিয়ার। তিনি বলেন, গতবারও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে মুল্যায়ন করা হয়নি। সেই ছাত্র রাজনীতি থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত আওয়ামী লীগের জন্য সারাজীবন প্ররিশ্রম করেছি, ত্যাগ দিয়েছি। আশাকরি এবার দল থেকে আমাকে মুল্যায়িত করবেন।

গতবার তো দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, এবার তো আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে সতর্কতা দিয়েছেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেইধরণের বার্তা এখনো উপজেলা বা জেলা আওয়ামী লীগের কাছে আসেনি। তবু বলছি, গতবার বিদ্রোহী ছিলাম না, মুলত বিএনপির প্রার্থীকে পাহারা দিতেই আমি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আমি ভোটযুদ্ধে ছিলাম বলেই বিএনপির প্রার্থী আমার অঞ্চলে কম ভোট পেয়েছে। এতে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হতে সুবিধা পেয়েছে।

আওয়ামীলীগ নেতা রস্তম শাহরিয়ার আরও বলেন, জাতির পিতার আদর্শের একজন কর্মী হিসেবে এবারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করি। তবে শেষ কথা হলো মনোনয়ন না পেলেও এবার দলের সিদ্বান্ত থেকে বিচ্যুতি হবো না।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টানা তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া বর্তমান চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম এবারও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তিনি বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সাবেক যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক চেয়ারম্যানের ছোটভাই। কী কারণে এবারও নৌকার টিকেট পেতে চান উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আমি যখন ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিই ওইসময় বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। সেইদিন শত প্রতিকুল পরিবেশ অতিক্রম করে জনগনের ভোটে আমি বিজয়ী হয়েছি। তারপর থেকে এলাকার উন্নয়ন ও জনগনের নাগরিক সেবা নিশ্চিতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। পাশাপাশি আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও ভোট ব্যাংক তৈরীতে কাজ শুরু করি। যার ফলশ্রুতিতে প্রমাণিত হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু হয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার মধ্যদিয়ে একসময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন এখন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁিট।

তিনি বলেন, টানা তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সার্বিক সহায়তায় ইউনিয়নের অভুতপুর্ব উন্নয়ন কর্মকা- সাধিত করেছি। একসময় ভাঙাচোরা রাস্তায় যেখানে মানুষ পায়ে হেটে চলাচল করতে পারতো না, এখন সেখানে উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থার বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে। আর তাতে দুর্গম জনপদের প্রভৃতি এলাকায় মানুষ প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করছে অনায়সে। যেখানে নিকট অতীতে সন্ধ্যা নামলেই মানুষ কুপি বাতি নিভিয়ে ঘুমিয়ে পড়তো, আজ সেই জনপদের ঘরে ঘরে সরকারের অন্যতম সুফল বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করেছি। জনগনের দৌড়গোড়ায় সরকারের বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি ইউনিয়ন কমিউনিটি হাসপাতাল ও তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিক। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে সবধরণের সরকারি পরিসেবা ও সহায়তা সামগ্রী সহজে পৌছাঁনোর লক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। যা ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ছিলনা। অস্থায়ী ভাড়া অফিসে চালানো হতো পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম।

তিনি আরও বলেন, আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে ইউনিয়নের ভুমিহীন মানুষের মাথা গোঁজার ঠাই হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে দুইটি আশ্রয়ন প্রকল্প। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে নির্মিত দুইটি আশ্রয়ন প্রকল্পে বর্তমানে ৫০টি করে মোট একশত ভুমিহীন পরিবার শান্তিপুর্ণ পরিবেশে বসবাস করছেন। একইভাবে ইউনিয়নে আগে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও লেখাপড়ার উন্নতিকল্পে আমি নিজে জমি দান করে আরও তিনটি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। মানিকপুরে একটি উচ্চ বিদ্যালয় থাকলেও সুরাজপুরের শিক্ষার্থীরা মাতামুহুরী নদী পার হয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সুবিধা পেতে কষ্ঠ হতো। আমি জমি দান করে সুরাজপুরের এলাকাবাসিকে একটি উচ্চ বিদ্যালয় উপহার দিয়েছি। যেটি সুরাজপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে সাতশত শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশহিসেবে সর্বশেষে ২০২০ সালে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো.কামাল হোসেন ও চকরিয়া উপজেলার বর্তমান ইউএনও সৈয়দ সামসুল তাবরীজ এর সহযোগিতায় পাহাড় নদীর অপরূপ মিতালীতে ভরপুর নতুন পর্যটন জোন নিবৃতে নির্সগ পার্ক গড়ে তোলার সারা বাংলায় দুর্গম পাহাড়ি জনপদের ইউনিয়ন সুরাজপুর-মানিকপুরকে নতুনভাবে পরিচিতি করেছি। আজ ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনসাধারণ নতুন এই পর্যটন জোন নিয়ে বেশ উৎফুল্ল। কারণ এই পর্যটন স্পট ঘিরে তৈরী হয়েছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নতুন সম্ভাবনা।

এবারের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন প্রত্যাশা করে আজিমুল হক আজিম বলেন, অবশ্যই দলের মনোনয়ন বোর্ড আমাকে মুল্যায়িত করবেন। কারণ তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বপালন কালীন সময়ে ইউনিয়নের অভুতপুর্ব উন্নয়ন করেছি। জনগনের কল্যাণে কাজ করেছি। আমার কাজের মাধ্যমে জনগনের মাঝে আওয়ামীলীগের প্রতি আস্থা বেড়েছে। সরকারের অগ্রগতি উন্নয়নে বিশ^াস করে আমার ইউনিয়নবাসি। আমি বিশ^াস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ম শেখ হাসিনা আমাকে উন্নয়নের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখার সুযোগ দেবেন। ইনশাল্লাহ আমি এবারও নৌকার সম্মাণ অক্ষুন্ন রাখতে পারবো।

ইউনিয়নবাসির কাছে আমার প্রতিজ্ঞা, এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হলে ইনশাল্লাহ দুর্গম জনপদের সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করবো। পর্যটন স্পট নিবৃতে নির্সগ পার্ককে আধুনিকমানের পর্যটন জোনে তৈরী করতে কাজ করবো। আর মাতামুহুরী নদীতে কাঠের সেতুর বদলে একটি স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ করবো। যার মাধ্যমে দু:খ দুর্শশার বদলে সেতুবন্ধন হবে সুরাজপুরের সঙ্গে মানিকপুরবাসির।