এম.মনছুর আলম, চকরিয়া :
দেশজুড়ে ভাইরাল হওয়া হাসান-ফাহমিদার ভালবাসার বিয়ের সমাপ্তি ঘটলো। ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে রইল মাহমুদুল হাসান ও ফাহমিদার দম্পতির বিয়ের কাহিনী। তাদের বিয়েটা লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ কাহিনীকেও হার মানিয়েছেন। ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদা শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। প্রেমিক হাসানের ফাহমিদাকে নিয়ে সুখের ঘর বাঁধা হলোনা। স্বামীর কাঁদে নববধূর লাশ, সত্যিই বড় বেদনা দায়ক।
সোমবার ভোর ৭টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদা কামাল (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজিউন)।
ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদা কামাল (২০) কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের সন্তান মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী।
হাসানের ফুফাতো ভাই মো. জুবায়ের বলেন, সোমবার সকাল ৭টা দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ফাহমিদার মৃত্যু হয়। ফাহমিদার অকাল মৃত্যুতে পুরো দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
তিনি জানান, ফাহমিদাকে আর বাঁচানো গেল না। তার কপালে জুটল না সুখের সংসার। বাদ আসর ফাহমিদার নিজবাড়ি দক্ষিণ বাকলিয়া হাজী আবদুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ফাহমিদার শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা এভারকেয়ার, পরে ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে দীর্ঘ এক বছর চিকিৎসার পরেও কোন ধরণের উন্নতি হয়নি। হাসাপাতালের চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন, ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। এমনকি পরিবারের সদস্যদের ইঙ্গিত দেয় ফাহমিদা বেঁচে থাকার কোন ধরণের আশা নেই। তিনি জীবন সায়াহ্নে রয়েছেন।
একবুক কষ্ট নিয়ে তার পরিবারের লোকজন ফাহমিদাকে চট্টগ্রামে বাড়িতে নিয়ে এসে মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করান। সেখানে চলতে থাকে তার চিকিৎসা। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে ততোই ক্রমাগত ভাবে ফাহমিদার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ফাহমিদার এহেন অসহ্য কষ্ট ও বুকভাঙা যন্ত্রণা দেখে প্রেমিক হাসানের সহ্য হয় না। তার কষ্ট প্রেমিক মাহমুদুল হাসান ভাগ করে নিতে চায়। এমন পরিস্থতিতে মাহমুদুল হাসান কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে তার পরিবারকে নিয়ে এসে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। মৃত্যু পথযাত্রী ক্যান্সার আক্রান্ত ফাহমিদাকে মাহমুদুল হাসানের বিয়ে করার প্রস্তাবে পরিবারের সবাই হতবিহ্বল। হাসানকে তার পরিবারের লোকজন বিভিন্ন উপায়ে বোঝানোর সব ধরনের চেষ্টা করলে সে কারো কথা কর্ণপাত করেনি। কিন্তু প্রেমিক মাহমুদুল হাসান নীতিগত ভাবে তার সিদ্ধান্তে ছিল অটল।
এদিকে তাকে বিয়ে করার বিষয়টি জানানো হয় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা ফাহমিদাকে। অবিশ্বাস্য প্রস্তাব শুনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার প্রেমিক হাসানের দিকে। ফাহমিদার মুখে ফুটে ওঠে নির্মল সুখের স্বর্গীয় হাসি।
অবশেষে বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত ৯ মার্চ ২০২২ তারিখ বাদ-এশা মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন সম্পণ্ন হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি, গলায় সোনার হার। বর হাসান পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। আকদ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। দুজন মিলে কেক কাটে, মালাবদল করে খাওয়ানো হয় খেজুর। দীর্ঘ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালের বেডে তাদের এমন বিয়ে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। মাহমুদুল হাসানের ভালোবাসার এমন নজিরকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসিয়েছিল। তাদের সেই দিনের বিয়ে নিয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন দেশজুড়ে অনেকে। মাহমুদুল হাসান-ফাহমিদা এই বিয়ের ঘটনাকে ‘ব্যতিক্রম’ হিসেবেও মন্তব্য করছেন। তাদের বিয়েটি শুধু চট্টগ্রাম নয়, দেশের ইতিহাসে সাক্ষী হিসেবে রইল বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনেরা।