অনিয়ন্ত্রিত টমটম, সিএনজি অটোরিকশা…..
মোঃ কামাল উদ্দিন, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহরের ব্যস্ততম হাসপাতাল সড়কে সীমাহীন যানজটে অতিষ্ঠ চকরিয়া পৌরবাসী। বিশেষ করে চকরিয়া পৌরশহরের প্রবেশপথ শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাসটার্মিনাল থেকে মাতামুহুরি ব্রীজ এলাকার মধ্যে অন্যতম হাসপাতাল সড়কটিতে দিনের বেশির ভাগ সময় যানজট লেগেই থাকে। রোগীর পাশাপাশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এদিকে প্রশাসনের নীরবতা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
হাসপাতালের ব্যস্ততম এই সড়কে দেখা যায়, রাস্তা দখল করে দোকানিরা ফলের ব্যবসা, রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে জিনিস কিনে এনে ব্যবসা সহ লোড-আনলোড অব্যাহত রেখেছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা ও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লোড-আনলোড চলে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। আর এর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষকে। দিনের অধিকাংশ সময় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ইজিবাইকসহ ছোট বড় যানবাহন সড়কের ৬০ শতাংশ দখল করে রাখায় ঘটছে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনা। সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে যানজট লেগে থাকায় প্রায় সময় অ্যাম্বুলেন্স ও রোগী বহনকারী গাড়ি যানজটে আটকে থাকতে দেখা যায়। বিশেষ করে চকরিয়া পৌরশহরের চিরিংগা সোসাইটি এলাকায় গড়ে ওঠা অবৈধ টমটম, সিএনজি, অটোরিকশা, ছারপোকা গাড়ির স্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখল করে অবৈধ ফল ব্যবসায়ী ও হকার ব্যবসায়ীদের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অন্যদিকে ভারী যানবাহন বাইপাস সড়কে ঢুকে পড়াকে দায়ী করছেন বিভিন্ন স্ট্যান্ডের গাড়িচালকেরা। ১ এপ্রিল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের থানা রাস্তার মাথা থেকে জনতা মার্কেট চত্বর পর্যন্ত বেশ কিছু চালের আড়ত ও স্টিলের দোকান রয়েছে। তারা অধিক মুনাফার লোভে দিনের ব্যস্ততম সময়ে সড়কে গাড়ি রেখে চাল ও বিভিন্ন সরঞ্জাম লোড-আনলোড করছেন। এছাড়াও শহরে যানযটের অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে টমটম, অটোরিকশা ও সিএনজি স্ট্যান্ডগুলো। এসব অনুমোদনহীন স্ট্যান্ডের কারণে যানজটের আকার দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। অ্যাম্বুলেন্স চালক আবুল বাশার বলেন, একবার এই সড়কে ঢুকে পড়লে বের হতে ৩০-৪০ মিনিট লাগে। কখনো কখনো ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা এবং জায়গা পেলেই সিরিয়াল না মেনে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া এই সড়কে যানজটের মূল কারণ।
এ সড়কে চলাচলকারী একাধিক ব্যক্তি জানান, থানা রাস্তার মাথা থেকে মাতামুহুরি ব্রীজ পর্যন্ত যানজট নিরসনে টমটম ও সিএনজি স্ট্যান্ডসহ সব স্ট্যান্ড স্থানান্তর করতে হবে। অন্যথায় এর কোনো প্রতিকার সম্ভব নয় বলেও দাবি করেন তাঁরা। এদিকে যানজট নিরসনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, পৌরশহরের থানা রাস্তার মাথা চার রাস্তার সংযোগস্থল। এখানে চকরিয়া উপজেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন হাজার-হাজার মানুষ আসে। ফলে বেশির ভাগ সময়ে যানবাহনের বিশৃঙ্খলতার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুলিশ এখানে নীরব ভূমিকা পালন করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, যানজট বাঁধলে পুলিশকে দেখা যায় না। তা ছাড়া যানজট তীব্র অথচ তাদের থানা রাস্তার মাথা ও জনতা মার্কেট এলাকায় মোটরসাইকেল ধরার জন্য বসে থাকতে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টমটম শ্রমিক নেতা বলেন, আমরা চকরিয়া ট্রাফিক পুলিশকে প্রতিমাসে মাসোহারা দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। মাসোহারা না দিলেই বিভিন্ন অযুহাতে আমাদের গাড়ি ধরে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে যানযট নিরসনের বিষয়ে মেয়র আলমগীর চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চকরিয়া পৌরশহরে যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ টমটম স্ট্যান্ড ও ফুটপাত দখল কারী ফল ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে কথা হয়েছে। খুব দ্রুত উপজেলা প্রশাসন ও পৌর প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান বলেন, পবিত্র মাহে রমজানকে সামনে রেখে আমরা যানজট নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। খুব দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ফুটপাত দখলকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।