জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

দিন দিন জ্যামের নগরীতে পরিণত হচ্ছে বন্দননগরী চট্টগ্রাম। দুুপুরে ভ্যাপসা গরম আর যানজটের অত্যাচারে দুর্বিষহ নাগরিক জীবন। সাইকেল, রিকশা, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল যে যানবাহনে চড়েন না কেনো, যানজটের বিপত্তি যেন নিশ্চিত। পা ফেলবার যেন উপায় নেই। নগরীর সড়ক কিংবা ভেতরে অলিগলি সবখানেই যানজট। এ বীভৎস উৎসবে একটু শান্তিতে চলাচল কিংবা বেঁচে থাকার যেন ফুরসত নেই।

বাণিজ্যনগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা যায় তীব্র যানজট। থেমে থেমে চলছে গাড়ির চাকা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছে চাকা। বাধ্য হয়েই পায়ে হাঁটা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। রোজা রেখে ক্লান্ত শরীর নিয়ে পায়ে হেঁটেই বা যাওয়া যায় কদ্দূর। বাসা কিংবা অফিস, স্কুল কিংবা কলেজ নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতেই হবে। নিজেকে লোকাল বাসের নষ্ট ফ্যান, শক্ত সীটের পাশে বসিয়ে রাখার মতো ইচ্ছে নেই নাগরিকদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কগুলোতে যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করা। পুরো নগরীতে গাড়ি পার্ক করার তেমন জায়গা নেই। সড়কেই সব গাড়ির নিরাপদ পার্কিং। অধিকাংশ সড়কের জায়গা দোকানদারের দখলে। এমন চিত্র সকাল থেকে শুরু হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানজট। একপর্যায়ে যানজটে কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে কারো দুই থেকে তিন ঘণ্টাও লেগেছে। একদিকে প্রচণ্ড গরম তার ওপর তীব্র ট্রাফিক জ্যামে হাঁপিয়ে তুলছে রোজাদারদের।

বুধবার সকাল থেকেই নগরীর অক্সিজেন, দুই নম্বর গেইট, জিইসি, দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদ, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, নিউ মার্কেট, নতুন ব্রিজ এলাকাসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটে শত শত গাড়ি আটকে পড়তে দেখা যায় । এছাড়া নগরীর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও শত শত গাড়ি যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর জিইসি ও টেকনিক্যাল মোড়ের যানজটের কারণে ফ্লাইওভারেও জটের সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি দেখা গেছে, নগরজুড়ে নানা সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও গ্যাস কোম্পনীগুলো নগরীর বিভিন্ন সড়ক খোঁড়াখুঁিড় করছে। বর্ষার আগে নাব্যতা বাড়াতে বিভিন্ন ড্রেন পরিস্কার ও পুনঃর্নিমাণে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। চলছে ড্রেনেজের কাজ। ষোলশহরে উন্নয়ন কাজের কারণে রাস্তা সংকুচিত হয়ে গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়েছে।

নগরীর জিইসি মোড়ে আটকে থাকা ব্যবসায়ি মিরাজ হোসেন জানান, নতুন ব্রীজ থেকে যানজট এড়ানোর জন্য বহদ্দারহাট হয়ে ফ্লাইওভারে উঠেছি। উড়াল সেতু নামক ফ্লাইওভারেও ৩৫ মিনিট জ্যামে আটকে ছিলাম। এখন এখানেও আটকে আছি আধা ঘণ্টা ধরে। যানজটের কারণে হয়তো রাস্তায় ইফতার করতে হবে। বাসায় আর বউ বাচ্চার সাথে ইফতার করা হবে না।’

সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ জানান, নগরীর উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিম বিভাগে প্রায় ৬শ ট্রাফিক পুলিশ এবং ট্রাফিক সার্জেন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। যানজট নিরসনে তারা তীব্র রোদ গরম উপেক্ষা করে সড়কে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ ও যাত্রীদের দুর্ভোগ লাঘবে কাজ করছে। কিন্তু বিভিন্ন সড়কে কতিপয় গাড়ি চালকের আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা, অবৈধ ইউটার্ন, উন্নয়ন কাজের জন্য সংকীর্ণ এবং বিধ্বস্থ সড়কের কারণে বিভিন্ন পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের প্রতিটি সদস্য এবং সার্জেন্টরা সার্বক্ষনিক যানজট নিরসনে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, ‘রোজাদারেরা যাতে নির্বিঘ্নে বাসায় পৌঁছে ইফতার করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের সড়কে পুলিশের বাড়তি প্রস্তুতি রয়েছে। ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম থেকে যানজট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচি মাথায় রেখে, সকাল ও বিকেলে বিশেষ জোর দিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার করা হয়েছে।’