রাজু দাশ ,চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়া সবুজ-শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির ঘর দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি করা হতো গ্রামের এ ঘর। এসব ঘরে গরমের দিনে ঠান্ডা এবং শীতের দিনে গরম অনুভূত হয়। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় কালের বিবর্তনে খড়ের তৈরি ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে।
কয়েক বছরের আগে যেখানে চকরিয়া পৌরশহর ও উপজেলা বিভিন্ন গ্রামে ৮-১০টি ছনের তৈরি ঘর চোখে পড়ত। তবে বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়ন মিলেও সেই সময়ের খড়ের তৈরি ঘর তেমনটা আর চোখে পড়েনা বর্তমানে টিনের অত্যাধুনিক ব্যবহারের ফলে খড়ের ছাউনির তৈরি ঘর বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে উপজেলার গ্রাম-গঞ্জে মাঝে মাঝে ২/১টি খড়ের ছাউনির ঘর দেখা যায়।
জানা যায়, মাটি ও খড় দিয়ে নির্মিত ঘর এ অঞ্চলের প্রাচীন ঐতিহ্য। এ ঘর পরিবেশবান্ধব হলেও যুগের তালে হারিয়ে যেতে বসেছে। ইটের ঘরের মত মাটির ঘর নির্মাণ করতে হয়। মাটি খনন করে ভিত্তি স্থাপন করে, কাঁদা-মাটি দিয়ে ইটের মত স্তর বাই স্তর গেঁথে তুলতে হয় মাটির ঘর। এক স্তর অর্থাৎ এক ফুট গেঁথে প্রায় ৭/৮ দিন ধরে শুকাতে হয়। এরপর আবার একটি স্তর গাঁথতে হয়। এভাবে ১২/১৩টি স্তর গেঁথে তার উপর আবার বাঁশ ও খড় দিয়ে ছাউনি দিত হয়। এ ঘরের দরজা-জানালা ইটের ঘরের মতই তৈরি করতে হয়। এ ঘর অঞ্চল বিশেষে একইভাবে দোতলা তিনতলা ঘরও নির্মাণ করা হতো। কালের বিবর্তনে এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে এক সময়ের মাটির ঘর। এখন আর এ অঞ্চলের মানুষ মাটির ঘর নির্মাণ করে না। ব্যয় বহুল হলেও আধুনিক ও দীর্ঘস্থায়ী টিনসেট ইটের ঘর নির্মাণ করছে। ঝড় বৃষ্টিতে মাটির ঘর ভেঙ্গে পড়লে কিংবা নতুন করে ঘর নির্মাণের প্রয়োজন হলে মানুষ কষ্ট করে হলেও টিনসেট ইটের ঘর নির্মাণ করছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের মল্লিক পাড়া গ্রামে বছর খানেক আগেও তাদের এলাকায় অনেকের বাড়িতে খড়ের ছাউনি ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন আর নেই। কিছুদিন আগে খড়ের ছাউনি ফেলে টিনের ছাউনি দেন তারা। শীত ও গরমে উভয় দিনে ছনের ছাউনির ঘর বেশ আরামদায়ক। এছাড়াও বছর বছর খড় পরিবর্তন করতে হয়। এ কারণে অনেকে খড়ের ঘরকে ঝামেলা মনে করেন। একারণে খড়ের ছাউনির ঘরের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে জীবন মানের ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর তাই হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালিদের চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী এ চিহ্নটি। হয়তো সেই দিন আর বেশি দুরে নয়, খড়ের ছাউনির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আগামী প্রজন্ম রূপকথার গল্পে এ ঘরকে স্থান দিতে স্বাছন্দবোধ করবে। তবে আবার কেউ বা পূর্বপুরুষদের স্মৃতি ধরে রাখতে ২-১ টি খড়ের ছাউনির ঘর টিকিয়ে রেখেছেন।
পৌরশহরে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও গ্রামের প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে খড় দিয়ে ঘরের ছাউনি দিত। গরমের দিনে ঠান্ডা আর শীতের দিনে গরম, তাই তারা এ ঘরকে এসি ঘর বলে। উচ্চবিত্তরা শখের বসে কখনও কখনও পাকা ঘরের চিলকোঠায় ছন অথবা টিন ব্যবহার করতো। এদিকে টিনের অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে সে ছন গ্রামগঞ্জ থেকে হারিয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন গ্রামে পূর্বের ন্যায় সেই ছনের ঘর তেমনি আর চোখে পড়ছে না।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।