জাহাঙ্গীর আলম
যে জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ঝড়-তুফান ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সমুদ্রে মাছ ধরে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের আমিষ জোগান, সেই জেলেদের জীবন কীভাবে কাটে, সেটি আমাদের নীতিনির্ধারকেরা আরো বেশী গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে আশা করছি।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৪–৫ গুণ বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কোনো উন্নতি হয়নি। সামগ্রিকভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। কিন্তু তাঁদের মধ্যে যাঁরা সমুদ্রে মাছ ধরেন, তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয়। অনেকের স্থায়ী ঘরবাড়িও নেই। কোনোভাবে অন্যের জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন। উপকূলীয় জেলেদের জীবনমান উন্নয়নের বিষয়টি দেখতে হবে সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের নিরিখে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, উপকূলীয় অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি। সেখানে বছরের দীর্ঘ একটি সময় মানুষের কাজ থাকে না। কক্সবাজারের এক জেলে আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমাদের জীবনটাই অভিশপ্ত।’ এ অবস্থা থেকে উপকূলীয় জেলেদের বের করে আনতে প্রয়োজন টেকসই কর্মসূচি।
জেলেদের বছরের একটা বড় সময় বেকার বসে থাকতে হয়। কিন্তু এ সময়ে তাঁদের সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না। ফলে মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাঁদের জীবন বাঁচাতে হয়।
সমুদ্রগামী জেলে তো বটেই, সব মৎস্যজীবীর জীবনমান উন্নয়নে শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। জেলেরা যাতে মহাজনদের ঋণচক্রে আবদ্ধ না থাকেন, সে জন্য তাঁদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করতে হবে। উপকূল ও চরাঞ্চলের অনেক স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকেরা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন না। এ বিষয়েও সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
জেলের ছেলে জেলে হবে এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ। জেলেরা ও মানুষ, আসুন তাদের প্রতি সদয় হই।
জাহাঙ্গীর আলম, সহকারি পরিচালক ও আঞ্চলিক টিম লিডার, কোস্ট ফাউন্ডেশন।