জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গতকাল সোমবার রাতে হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাজ্জাদ হোসেন নামে এক ইন্টার্নী ডাক্তার। হামলাকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল বলে জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। অবিলম্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং শাহবাগ থানায় বিচারের দাবিতে অভিযোগ দায়ের করবে বলে জানান তিনি।
জানা যায়,
আহত ছাত্রের নাম একেএম সাজ্জাদ হোসেন।তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র ছিলেন।বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তার হিসাবে কর্মরত আছেন।তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায়।
ঘটনার সূচনা প্রসঙ্গে একেএম সাজ্জাদ হোসেন জানান, গতকাল সোমবার দুপুর পর্যন্ত সায়কিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে ডিউটি করেছি। বিকালে ঘুম দিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় কলেজের রীডিং রুমে পড়তে আসছি। ৯টার দিকে ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।
শহীদ মিনারে গেলাম।মূল বেদির পাশে(উপরে না)মাটির ওপরের রেলিংয়ে বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। রাত সাড়ে নয়টার দিকে কয়েকটা ছেলে এসে বললো ভাই আপনার পরিচয় কি? আমি বললাম আমি ঢাকা মেডিকেলের ছাত্র।
কোন ইয়ারে পড়েন?
আমি বললাম আমি ইন্টার্ন ডাক্তার হিসাবে আছি।
প্রথম দফায় হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,”তারা
এরপর আইডি কার্ড চাইল। বললাম সাথে ব্যাগ নাই।আইডি কার্ড তো সবসময় সবাই সাথে নিয়ে ঘুরে না।
এরপর বললো- কেন নাই? চিল্লাতে চিল্লাতে বললো আমার সাথে তো ঢাবির আইডি কার্ড আছে।
আমি বললাম ভাই ক্যাম্পাসের পাশেই তো আসছি। আইডি কার্ড কি সবাই সাথে নিয়ে ঘুরে?
এই প্রশ্ন করার৷ সাথে সাথে থাপড়ানো শুরু করলো। ৩-৪ টা থাপ্পড়ের অবাক হয়ে বললাম -ভাই কি করলাম আমি।
দ্বিতীয় দফায় হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন ,”
প্রথম দফায় মাইরের পর আরো ৪-৫ জন আসলো। আমার নাকি এটিচুড প্রবলেম হেন তেন।
এইটা(শহীদ মিনার) ঢাবি ক্যাম্পাসের জায়গা। আমি এইখানে কি করি বলে যতক্ষণ পারলো মাইর চললো। আমার মুখে মাস্ক ছিল। টেনে ছিড়ে ফেললো।কানের নিচে মারার পরে মাথা ঘুরানো শুরু করলো।।আমি বসে পরলাম,এরপর মাথায় লাথি মারা হইল। আমার মাথায় সেন্ডেলের বারি পর্যন্ত লেগে ছিল।
আমি কেন এখনো যাই না এখান থেকে এইটা বলে চিল্লাইতে চিল্লাইতে ইচ্ছামত মারা হইল। আল্লাহ সাক্ষী এতকিছুর পরেও আমি একটা সিঙ্গেল গালিগালাজও করিনাই। খালি বলছি আল্লাহ বিচার করবে।
হামলায় আহত হওয়ার পর রিক্সা নিয়ে বকশিবাজার সিগনালের গেইটে ফিরলাম।এক রুমমেটকে ফোন দিলাম। সে এসে রুমে নিয়ে গেল।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”এক কানে কম শুনতেসি ।এরপর থেকে,নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। মাড়িও কেটে গেছে দাঁতের। গালের পাশে ফুলে আছে। চোখ ডান পাশেরটা লাল হয়ে আছে।
ইমার্জেন্সীতে গেলাম। পুলিশ কেইস সীলসহ ইঞ্জুরি নোট লিখল। ইএনতে রেফার করলো। নাক দেখে বললো নাকের সেপ্টাম ইঞ্জুর্ড হয়েছে।
কান দেখে বলছে কানের পর্দায় ব্লিডিং স্পট আছে,হিয়ারিং লস আছে কিনা বুঝতে পরশু অডিওগ্রাম করতে হবে।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্রতি হতাশ হয়ে আফসোস করে তিনি বলেন,” ইন্টার্নশীপে জয়েন করার পর থেকে ঢাবির/বুয়েটের অনেক স্টুডেন্টই হাসপাতলে আসতে দেখসি। যতটুকু হেল্প করার চেষ্টা করসি।স্যারদের কাছেও রোগীর কোন দরকারে গেলে বলছি স্যার রোগী ঢাবির স্টুডেন্ট। পাশের ক্যাম্পাস,নিজেদের লোক ভেবেই এইটা করতাম।
আজকে সবকিছুর প্রতিদান পাইলাম।
পুরো জীবদ্দশায় কারো সাথে মারামারি করসি বলে মনে পরে না। আমি হলে আছি আজকে ৬ বছর ধরে।যারা চিনেন তারা জানেন কতটুকু নম্রতার সাথে চলতে চেষ্টা করি। এরপরেও রক্ষা পাইনাই এমন অভিজ্ঞতা থেকে।
শহীদ মিনারের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যেই শহীদ মিনার প্রথম বানানো হয়েছিল ঢামেকের হলে,ঢামেকের স্টুডেন্টদের দ্বারা সেই শহীদ মিনারে ঢামেকের পরিচয় দেওয়ার পরেও এইভাবে মাইর খাওয়া লাগল।আমি কোনদিন শহীদ মিনারকে আমার ক্যাম্পাসের বাইরের কিছু ভাবি নাই। এমনকি ঢামেকের আউটডোর গেইটের নামও শহীদ মিনার গেইট।
সমাজের মানুষের প্রতি হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন,”কি চমৎকার দেশে বাস করি এইটাই ভাবতেছি। যখন তখন যে যারে পারতেছে এতগুলা মানুষের সামনে মারতেসে। মানুষও মজা দেখতেসে। একটা সিংগেল মানুষও প্রতিবাদ করে নাই।
হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি প্রদানের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এবং শাহবাগ থানায় বিচারের দাবিতে একটি অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানান তিনি।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আল্টিমেটাম: এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সংগঠন “ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ ” এর সভাপতি ডাক্তার মোঃ মহিউদ্দিন জিলানী এবং সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মারুফ উল আহসান শামীম
আজ ৯ আগস্ট(২০২২) মঙ্গলবার দুপুরে এক বিবৃতিতে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আল্টিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।