বার্তা পরিবেশক:
পাঁচ বছর আগে ৭০০,০০০-এরও বেশি রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও পুরুষ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন, পাশাপাশি এর সাথে ছিল এর আগে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয়া কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার সর্বশেষ ঘটনাটি এখন একটি প্রলম্বিত সংকটে পরিণত হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের আর্থিক সহায়তা ও সংকট সমাধানের জন্য জোরদার প্রচেষ্টার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে।
এই মানবিক সংকটের শুরুতে বাংলাদেশের সরকার, স্থানীয় জনগণ ও মানবিক সংস্থাগুলো দ্রুত শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ায় ও কক্সবাজারে তাদের আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করে, যেটি বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির।
পাঁচ বছর পর অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থী ইউএনএইচসিআরকে বলেছেন যে তাঁরা নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পরিস্থিতি তৈরি হলে তাঁদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান; এবং তাঁরা চান তাঁদের চলাফেরার স্বাধীনতা, নিবন্ধন ও নাগরিকত্বের একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা। পাশাপাশি তাঁদের প্রয়োজন সেখানে বিভিন্ন সেবা ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ।
এই প্রায় ১০ লাখ রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে রয়েছেন অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ অবস্থায়, আর বেঁচে থাকার জন্য তাঁরা মানবিক সহায়তার উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল। মানবিক কর্মকান্ডের তহবিল ক্রমশ হ্রাসমান হওয়ায়, তাঁরা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। মানবিক সহায়তা বিষয়ক একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে সবচেয়ে বেশি অপূর্ণ চাহিদার মধ্যে রয়েছে সঠিক পুষ্টি, আশ্রয়ের উপকরণ, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, এবং জীবিকার সুযোগ। ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তায় কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন নৌপথে বিপজ্জনক ভ্রমণের।
সুরক্ষার প্রয়োজন – বিশেষ করে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য – প্রায়ই পর্যাপ্তভাবে প্রতিবেদনগুলোতে উঠে আসে না। নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা, বিশেষ করে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, লোকলজ্জার ভয়ে চাপা পড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের কথা তাই তেমন জানা যায় না; আবার তাঁরা অনেক সময় আইনি, চিকিৎসা, মনোসামাজিক ও অন্যান্য সেবা পান না।
শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, ও জীবিকার সুযোগের জন্য সহায়তা জোরদার করতে হবে। এই কার্যক্রমগুলো শরণার্থীদের চূড়ান্ত প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করবে এবং একই সাথে তাঁদের বাংলাদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ ও কর্মক্ষম থাকতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে প্রায় ১০,০০০ রোহিঙ্গা শিশু ইতিমধ্যেই মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে শিক্ষাগ্রহণের জন্য নিবন্ধিত হয়েছে, যা মিয়ানমারের ভাষায় পড়ানো হচ্ছে। মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের টেকসই ও সম্প্রসারিত বাস্তবায়নের জন্য সহায়তা প্রয়োজন। এটি শরণার্থী শিশুদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে এগোনোর জন্য একটি মাইলফলক, এর মাধ্যমে একটু বেশি বয়স্ক শিশুদের – যাদের এর আগে শেখার কোন সুযোগই ছিল না – তাদের শিক্ষার ব্যবধান কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
এছাড়াও ইউএনএইচসিআর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও সহায়তার আবেদন জানাচ্ছে, যেন প্রাপ্তবয়স্ক ও কিশোর রোহিঙ্গা শরণার্থীরা কারিগরি শিক্ষা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির মত বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নমূলক কারযক্রম থেকে উপকৃত হতে পারেন। এর মাধ্যমে শরণার্থীরা তাঁদের নিজ সম্প্রদায়কে সাহায্য করতে পারবেন, বাংলাদেশে মর্যাদার সাথে বাস করতে পারবেন, এবং সর্বোপরি তাঁদের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি হলে সেখানে নতুন জীবন গড়ে তুলতে পারবেন।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী সুরক্ষা ও সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা অত্যন্ত জরুরী, কিন্তু আর্থিক সহায়তা অপর্যাপ্ত। ২০২২ সালের মানবিক কার্যক্রম – যা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও পাঁচ লাখেরও বেশি স্থানীয় জনগণ মিলিয়ে মোট ১৪ লাখ মানুষের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে – পরিপূর্ণ করতে করতে প্রয়োজন ৮৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আজ পর্যন্ত এর মাত্র ৪৯ শতাংশের তহবিল পাওয়া গেছে, যার পরিমাণ ৪২৬.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সবার একসাথে কাজ করতে হবে, যেন রোহিঙ্গারা এই নিদারুণ শরণার্থী জীবন চালিয়ে যেতে বাধ্য না হন। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে বিশ্বকে আরও জোরদারভাবে কাজ করতে হবে যেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে, মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে ও টেকসইভাবে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করা যায়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।