জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

একই ব্যক্তি একদিকে কলেজের ইনডেক্স ধারী প্রভাষক, অন্যদিকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের সচিব। সরকারি নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ৩১ বছর ধরে তথ্য গোপন রেখে দুটি চাকরি করেছেন। অবশেষে বেরিয়ে এলো কেন তিনি নিজের স্বাক্ষরের স্থলে বহিরাগতের স্বাক্ষর দিয়ে পরিষদের বিভিন্ন কাজ সারতেন হাটহাজারী মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কানু কুমার নাথ।

এভাবে সরকারী কোষাগার (কলেজ হতে গৃহীত) থেকে মোট ৫০ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৯ টাকা উত্তোলনের অভিযোগে কানু কুমার নাথ (৫৮) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম এ মামলা দায়ের করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুল আলম জানান, কানু কুমার নাথ মিরসরাই থানার খাজুরিয়া গ্রামের বিনোদ বিহারী নাথের ছেলে। তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

দুদক ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী উপজেলার ৩ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসাবে কানু কুমার নাথ ১৯৯১ সালে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ৫ মে ফটিকছড়ি উপজেলার হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি পূর্বের চাকরির তথ্য গোপন করে ১৯৯৫ সালের ১ জুন কলেজে এমপিও ভূক্ত হয় প্রভাষক হিসেবে। তিনি ২০০২ সালে একই কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতিও পান। তার কলেজ ইনডেক্স নং-৪১১০৯০। কানু কুমার নাথ, একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্তের জন্য ৫ সদস্য বিশিষ্ট হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজের একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কলেজের তদন্ত কমিটির সদস্যগণ সরেজমিনে তদন্ত শেষে অভিযোগের বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পায়। ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র যাচাই করে দেখা যায়, কানু কুমার নাথ হেয়াকো বনানী ডিগ্রি কলেজে ১৯৯৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত সরকারী খাত (কলেজ হতে গৃহীত) থেকে বেতন ভাতা বাবদ মোট ৫০ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৯ টাকা উত্তোলন করেছেন। একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সরকারী তহবিল থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতেও একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।

দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির বিষয়টি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১১ এর বিধি ৩৩ এর উপবিধি ১(গ) ও ২(চ) এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার শাখা, চট্টগ্রামের বিভাগীয় তদন্তকালে প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে আসামী কানু কুমার নাথের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার শাখা, চট্টগ্রামের আদেশ মূলে তার বর্তমান বেতন স্কেলের নিম্ন বেতন স্কেলে অবনমিত করা হয়।

দুদকের সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, একই ব্যক্তি দুইটি পদে কর্মরত থেকে সরকারী কোষাগার (কলেজ হতে গৃহীত) থেকে মোট ৫০ লাখ ৫৭ হাজার ২৩৯ টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ করার অভিযোগে কানু কুমার নাথের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে কানু কুমার নাথের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় নি।