ওয়াজিরাবাদে থানায় হামলা অস্ত্র লুট , দুই পুলিশ নিহত

 

আবদুর রহমান খান

পাকিস্তানের প্রধান বিরোধীদল তেহরিক-ই-ইনসাফ ( পিটি আই) পার্টি অপরিচালিত রাজধানী ইসলামাবাদ মুখী লং মার্চে দলটির প্রধান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ওপর বন্দুক হামলার পর থেকে দেশব্যাপী সহিংস বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। ওদিকে পিটিআই দলের কর্মী-সমর্থকগন টানা তিন দিন ধরে রাজধানী ইসলামাবাদের প্রবেশ ও বাহির হবার সকল পথ অবরোধ করে রেখেছেন।

লং মার্চে বন্দুক হামলার পর স্থগিত করে দেওয়া কর্মসূচী মঙ্গলবার ( ৮নভেম্বর) পুনরায় শুরু হবার কথা থাকলেও এ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দলের নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী জানিয়েছেন, লাহোর এবং গুজরাওয়ালা বিভাগের নেতারা আজ (৯ নভেম্বর) বৈঠকে বসে লং মার্চ পুনরায় শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বিলম্ব না করে আগামীকাল রাওয়ালপিন্ডির পথে ঐতিহাসিক যাত্রা পুনরায় শুরু হবে এবং সেখানে লাখো জনতার সমাবেশে ইমরান খান ভাষন দেবেন।

থানায় হামলা -অস্ত্র লুট।

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে আজ বুধবার ওয়াজিরিস্থানের রাগজাই থানায় অজ্ঞাত আততায়ীদের হামলায় দু’জন পুলিশ সদস্য নিহত এবং আরো দু’জন আহত হয়েছেন। এ সময় হামলাকারীরা থানার একটি গাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং অস্ত্র-শস্ত্র লুট করে থানার আর একটি গাড়িতে করে পালিয়ে যায় ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুন ওয়ালা প্রদেশে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন , তারা যেন মহাসড়ক, টোল-প্লাজা এবং লিঙ্ক-রোড থেকে বিক্ষভকারীদের দ্রুত সরিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক যানচলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। উভয় প্রদেশের প্রাদেশিক সরকারকে সতর্ক করে লিখিত নির্দেশ পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সড়ক মহাসড়ক থেকে হটিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হলে তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, ইমরান খান তার লং মার্চের ভাষনে জাতীয় প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনীর ব্যাপের যে সব অবমানকর উক্তি করেছেন তার বিস্তারিত জানার জন্য সেনা কর্তৃপক্ষ চিঠি পাঠিয়েছে। সে অনুযায়ী ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গত এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের সরকার পতনের পর থেকেই পাকিতানে রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজপথে উত্তাপ ছাড়াতে শুরু করে। অর্থনৈতিক সংকটের কারনে রাজনৌতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আরো দু’টি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। পাকিস্তানের বর্তমান পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০২৩ সালে। আর দেশটির ক্ষমতার অন্যতম উৎস সেনাবাহিনীর চীফ অফ আর্মী ষ্টাফ জেনারেল কামার জাভেদ বাজোয়ার দায়ীত্বের মেয়াদ মাসে শেষ হচ্ছে এই নভেম্বরে। এ মাসে নতুন সেনা প্রধান নিয়োগ হবার কথা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে মূলতঃ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সাথে কর্ত্বত্বের টানাপোড়েনে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছে। ক্ষমতা ত্যাগের আগে ও পরে ইমরান খান তার সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য প্রকাশ্যে আমেরিকাকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু দেশটির সেনাপ্রধান উলটো আমেরিকাকে পাকিস্তানের পুরানো বন্ধু বলে প্রকাশ্যে মন্তব্য করেছেন।

এদিকে গত সপ্তাহে লংমার্চে বন্দুক হামলার প্রেক্ষিতে ইমরান খান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শারিফ, স্বরাষ্ট্রামন্ত্রী রানা সানুল্লাহউল্লাহ এবং সামরিক গোয়েন্দা প্রধান মেজর জেনারেল ফয়সল নাসের- কে এর নেপথ্য ইন্দনদাতা বলে অভিযোগ করেছেন। প্রাথমিকভাবে রাষ্ট্রের এই শীর্ষ স্থানীয় তিন কর্মকর্তরকে দায়ি করে এফ আই আর দাখিল করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহন করে নি। অতঃপর সুপ্রীমেকোর্টের ্নির্দেশের প্রেক্ষিতে সোমবার ( ৭ নভেম্বর) এফ আই আর গ্রহন করা হলেও অভিযুক্ত প্রধান তিন জনের নাম বাদ রাখা হয়েছে।

সমঝোতার আভাষ

দেশটির নতুন সেনা প্রধান নিয়োগের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ ও পিপিপি’র সমঝোতা সরকার , যাকে ইমরান বলছেন “ আমদানি করা সরকার “ এদের সাথে ইমরান নের একটা সমঝোতা আভাষ পাওয়া যাচ্ছে।

গতকাল ( নভেম্বর ০৮ ) লাহোরস্থ জামান পার্ক এলাকায় নিজ বাস ভবনে ইমরান খান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নতুন সেনা প্রধান নিয়োগের বিষয়ে তিনি শেহবাস শরিফ সরকারের সাথে কথা বলতে প্রস্তুত আছেন। তবে, শাহবাজ শারিফ সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়োগে কোনো অসুবিধার কিছু দেখছেন না তিনি। তারা যাকে উপযুক্ত মনে করেন তাকেই এ পদে নিয়োগ দিতে পারেন।

চাকুরীর মেয়াদ বাড়াতে অনাগ্রহী জেনারেল জাভেদ

গতমাসে নিরাপত্তা বিয়ক এক কর্মশালায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ স্পষ্ট ঘোষনা দিয়েছেন, তিনি তার চাকুরুরীর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোনো আর্জি জানাবেন না। নভেম্বরে তার মেয়াদ পুর্তিতেই তিনি অবসরে যাবেন। তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে উর্ধতন সেনাকর্মকর্তাদের এক সভায় তার মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

তবে, পাকিস্তানের ক্ষমতাশীন মুসলিম লীগ ( নেওয়াজ গ্রুপ) এর কোনো কোনো নেতা সেনা প্রধান জেনেরাল জাভেদের চাকুরীর মেয়াদ আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত অন্তত এক বছরের জন্য বারানোর পক্ষে।

এতে ইমরান খানের মনের ইচ্ছাও পূরন হবে বলে বলে তারা মনে করেন। ইমরান খান পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমঝোতার পক্ষে কথা বলছেন। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত হলে সংকট আরো জটিল হবে। সাবেক এ প্রধান মন্ত্রী পরামর্শ দিয়েছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত দায়ীত্ব পালন করতে জেনারেল জাভেদের চাকুরীর মেয়াদ বর্ধিত করা যথাযথ হবে । এর পর নতুন সরকার এসে নতুন সেনা প্রধান নিয়োগ দেবেন।

দেশটি যাতে আরো সংকটের দিকে না যায় এ জন্য সরকারী দলের নেতারাও প্রধান মন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে পরমর্শ দিয়েছেন, আগামি অক্টোবর-নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত জেনারেল জাভেদকে দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হোক। মন্ত্রীপরিষদ এবং পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হোক, তার পর এক০টি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে অধীনে সুষ্ঠ নির্বাচন দেওয়া হোক। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে শাহবাজ শরিফ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে পারলেও সংবিধান অনু্য্যাই তাকে ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছ দায়িত্ব হস্থান্তর করতে হবে।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ইমরানের প্রতি কিচ্ছুটা নমনীয় মনোভাব দেখানো হচ্ছে। বৈদেশিক অর্থ অব্যবস্থার দায়ে ইমরানের বিরুদ্ধে ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সী ( এফ আই এ ) কর্তৃক জারীকৃত এক নোটিশের কার্যকরিতা স্থগিত করে দিয়েছে লাহোর হাইকোর্ট ।