মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নীচ তলার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত কক্সবাজার বিচার বিভাগের কোর্ট মালখানায় স্থান সংকটের কারণে যেকোন সময় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটতে পারে। যার ফলে মামলায় জব্দকৃত আলামত প্রদর্শন, যাচাই বাচাইয়ের অভাবে মামলার স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কোর্ট মালখানা’র দায়িত্বরত পুলিশ ইন্সপেক্টর আমিন কাদের খাঁন এ কথা বলেন।

গত ১২ নভেম্বর কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর সভাপতিত্বে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আমিন কাদের খাঁন আরো বলেন, মালখানা’য় স্তুপের উপর স্তুপ হতে হতে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মামলার অনেক আলামতের আকার, ধরন, রং, গুনাগুন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ধাতব আলামত মরিচা ধরে বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। নগদ টাকা গুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক আলামত পোকায় খেয়ে ফেলছে। মালখানা’য় রক্ষিত অন্তত নগদ টাকা গুলো আইনী বিধি বিধান অনুসরণ করে ব্যাংকে জমা করার ব্যবস্থা নিতে তিনি অনুরোধ জানান। মালখানা’র প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মহোদয়কে কোর্ট মালখানা পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান তিনি।

কোর্ট মালখানা’র ইনচার্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও সম্মেলনের সঞ্চালক মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম এসময় বলেন, মালখানায় প্রবেশ করতে হলে অনেকটা সেখানে থাকা মালামালের উপর পা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। মালামালের স্তুপের জটে মালখানার অবস্থা এত প্রকট আকার ধারণ করেছে, সেগুলো সরানো কিংবা নাড়াচাড়া করার কোন সুযোগ নেই।

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (ভা.) রাজীব কুমার বিশ্বাস এসময় বলেন, কোর্ট মালখানা’র পরিসর খুব সহসায় বাড়ানো দরকার। মালখানার যে তিন টি কক্ষ রয়েছে সেখানে মালামাল রাখার আর কোন জায়গা নেই। প্রয়োজনে বারান্দায় গ্লাস ফিটিং করে হলেও সাময়িকভাবে মালখানা’র কক্ষের পরিধি বাড়ানোর জন্য তিনি প্রস্তাব করেন। এজন্য তিনি সম্মেলনে সভাপতি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর সুদৃষ্টি কামনা করেন।

এ বক্তব্য শুনে মালখানার সমস্যা নিরসনে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, কোর্ট মালখানা’র ইনচার্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি, কোর্ট ইন্সপেক্টরকে সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করে দেন সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। কমিটিকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে এ বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দিতে সম্মলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে, প্রবীণ ও অভিজ্ঞ আইনজীবীরা বলেছেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নীচ তলার দক্ষিণ পাশে অবস্থিত কোর্ট মালখানাটির পশ্চিম পাশে জেলা তথ্য অফিস ও পূর্ব পাশে বিআরটিএ অফিস রয়েছে। বিচার বিভাগের জরুরি প্রয়োজনের স্বার্থে অন্তত তথ্য অফিস ও বিআরটিএ অফিস ২ টি অন্যত্র সরিয়ে সাময়িকভাবে হলেও দ্রুত মালখানা সম্প্রসারণ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অথবা মালখানা সম্প্রসারণে দ্রুত অন্য কোন কার্যকর বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। নাহয়, মালাখানায় রক্ষিত মালামালের জটে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশংকা রয়েছে। যা কক্সবাজার বিচার বিভাগের সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়াকে চরমভাবে ব্যাহত করতে পারে বলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা মন্তব্য করেছেন।