মহেশখালীর খাইরুল আমিন হত্যা মামলা : সাবেক মেয়রসহ ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

প্রকাশ: ডিসেম্বর ১, ২০২২ ১:৪৭ pm , আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২২ ১:০৪ am

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ছবি: বাঁয়ে খাইরুল আমিন, মাঝে সাবেক পৌর মেয়র সরওয়ার আজম, ও ডানে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান মৌলভী জহির উদ্দীন।

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের মহেশখালীর চাঞ্চল্যকর খাইরুল আমিন সিকদার হত্যা মামলায় মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র, একজন আইনজীবী সহ ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একইসাথে প্রত্যেককে ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৩ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

ঘটনার ৩২ বছর পর মামলাটির রায় ঘোষণা করা হলো। রায় ঘোষণার সময় দন্ডিতদের ৬ জনের মধ্যে ৫ জন আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। দন্ডিতদের মধ্যে ৪ জন পরস্পর সহোদর ভাই।

বৃহস্পতিবার ১ ডিসেম্বর কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন। একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাষ্ট্র পক্ষে অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম মামলাটি পরিচালনা করেন।

যাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে তারা হলো : মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম, অ্যাডভোকেট হামিদুল হক, মহেশখালী উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান হাফেজ মৌলভী জহির উদ্দীন ও নাসির উদ্দিন। দন্ডিত এ ৪ জনই মহেশখালীর গোরকঘাটার মৃত মোজাহের মিয়ার পুত্র। দন্ডিত অপর ২ জন হচ্ছে-মহেশখালীর বৃহত্তর গোরকঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, মৃত হাজী আবুল হোসেনের পুত্র শামশুল আলম ও মহেশখালী পুটিবিলার সাধন প্রকাশ সাধন্যা। দন্ডিত সাধন প্রকাশ সাধন্যা পলাতক রয়েছে।

মামলার ২৬ জন আসামীর মধ্যে ২০ জনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। তারমধ্যে ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

১৯৯০ সালের ৯ এপ্রিল বিকেল পাঁচটার দিকে মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন কক্সবাজার জেলা পরিষদের তৎকালীন সদস্য ও তরুণ রাজনীতিবিদ খাইরুল আমিন সিকদার (২৮)। তিনি গোরকঘাটার মৃত হামজা মিয়া সিকদারের ছেলে। এ ঘটনায় পরদিন নিহত খাইরুল আমিন সিকদার এর বড় ভাই মাহমুদুল করিম সিকদার বাদী হয়ে ২৫ জনকে আসামী করে মহেশখালী থানায় ফৌজদারি দন্ডবিধির ১৪৭/১৪৮/১৪৯/৪৪৭/৩০২/৩৪/১০৯ ধারায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মহেশখালী থানা মামলা নম্বর : ০৪/১৯৯০ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ৪২/১৯৯০ (মহেশখালী) এবং এসটি মামলা নম্বর : ১৫৫/২০০২ ইংরেজি।

বিচার ও রায় :

সিআইডি’র তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) ১৯৯০ সালের ২৪ নভেম্বর নতুন আরো একজন আসামীকে যুক্ত করে মোট ২৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করেন। চার্জশীটের ২৬ জন আসামীর মধ্যে ইতিমধ্যে ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে। ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট মামলাটি চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে আদালতে বিচার শুরু করা হয়।

মামলায় ৩৪ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে সাক্ষীদের জেরা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও আলামত প্রদর্শন, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বৃহস্পতিবার উল্লেখিত ৬ জন আসামীকে ফৌজদারী দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্থ করে বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন উপরোক্ত সাজা প্রদান করেন।

রায়ে বিচারকের পর্যবেক্ষন :

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-১ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মামলাটির বিভিন্ন জটিলতার কারণে যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা খুবই কঠিন ছিল। হত্যাকান্ডটি সঠিক ও নিখুঁতভাবে নিষ্পত্তি করার প্রয়োজনে হত্যাকান্ডের ঘটনাস্থল তিনি নিজে পরিদর্শন করেছেন। হত্যাকান্ডটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক হত্যাকান্ড অর্থাৎ পলিটিক্যাল মার্ডার। নির্বাচনে হেরে পরজিত পক্ষ প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বিজয়ীপক্ষের উপর পরিকল্পিত এ হামলা চালায়।

হত্যাকান্ডের সময়ে হামলাকারীরা তরুণ থাকলেও ঘটনার দীর্ঘ ৩২ বছর পর তারা সকলেই এখন বয়োবৃদ্ধ। সকলের সন্তান, নাতি নাতনী, সংসার জীবন রয়েছে। আসামীরা আদালতে হাজির আছে।

রাষ্ট্র পক্ষ ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে ঘটনা প্রমাণ করলেও এ অবস্থায় সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আসামীদের মৃত্যুদন্ড বা আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করা সমীচীন হবেনা। বিজ্ঞ বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন পর্যবেক্ষনে বলেন, সবদিক বিবেচনায় হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীদের লঘু শাস্তি হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে।