এম.মনছুর আলম,চকরিয়া (কক্সবাজার):
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলেই বাঙালীর মনেপ্রাণে জেগে ওঠে দেশাত্ববোধ। প্রতি বছর বিজয় দিবসের উল্লাসে বাঙালীর জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন । লাল-সবুজের ভালবাসায় বর্ণিল হয়ে ওঠে সবকিছু। আর এই দিনটি ঘিরে জাতীয় পতাকা হয়ে ওঠে ঐক্যের প্রতীক, আবেগের বহি:প্রকাশ। এ যেন আত্মার টান। চারদিকে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালাদের পথচলায় উড়ছে বিজয়ের নিশান, যেন ভিন্ন এক পরিবেশ। শুধু জাতীয় পতাকা নয়, পোশাক পরিচ্ছদেও দেখা যায় লাল-সবুজের ছোঁয়া। আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক লাল-সবুজে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে পুরো জাতি। লাল-সবুজের এ পতাকা আমাদের শেখায় দেশও জনগণের পক্ষে কথা বলা, বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের পরিচিত করে স্বাধীন সার্বভৌম অকুতোভয় জাতি হিসেবে, সাহস যোগায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।
স্থানীয়রা বলেছেন, বিজয়ের মাসে অনেকেই বাড়ির ছাদে, শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সামনে এমনকি গাড়িতেও জাতীয় পতাকা ওড়ান। এর ফলে বিজয়ের মাস এলেই জাতীয় পতাকার চাহিদা বেড়ে যায়। আর এই সুযোগে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা হাট-বাজারে ঘুরে ঘুরে জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন। শুধু পতাকা নয়, হাতে ও মাথায় বাঁধার মতো লাল-সবুজ ব্যাচও বিক্রি করছে। আর ১৬ ডিসেম্বরে লাল-সবুজ পতাকা হাতে দেখা মেলে অসংখ্য শিশু-কিশোরদের।
এদিকে, মহান বিজয় দিবস ঘিরে ফেরিওয়ালাদের জাতীয় পতাকা বিক্রির পালা শুরু হয় ডিসেম্বরের প্রথম দিন থেকেই। কাঁধে একটি বাঁশ নিয়ে তাতে মাথা থেকে গোড়া পর্যন্ত ছোট-বড়, মাঝারি আকারের দেশের লাল-সবুজের পতাকা সাজিয়ে বিক্রি করেন ফেরিওয়ালারা। বিজয় দিবসকে সামনে রেখে পুরো পৌরশহর ও প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে পতাকা বিক্রেতাদের পদচারণা বেড়েছে। লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে পৌরশহর একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হাঁটছে ওরা। এসব ফেরিওয়ালাদের কাঁধে আমাদের জাতীয় পতাকার সারি দেখলে মনে হয় লাল-সবুজের ভালোবাসা পুরো নাগরিক জীবনকে ওরা ছুঁয়ে দিয়েছে। শিশু থেকে শুরু করে নানা শ্রেণীর মানুষ লাল-সবুজের অন্তত ছোট্ট একটি পতাকা কিনে জানান দিচ্ছে দেশপ্রেমের কথা। লাল-সবুজের পতাকা কাঁধে নিয়ে তারা কেবল জীবিকার পথই বেছে নেননি, এ পেশার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্মৃতি।
অপরদিকে, বিজয় দিবসকে সামনে রেখে সারাদেশে মতো কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরশহর ও ১৮ ইউনিয়নে গ্রামীণ জনপদ, হাট-বাজার জাতীয় পতাকা ফেরিওয়ালাদের পথচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে বিজয় দিবসকে ঘিরে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার নানা অলিগলিতে পতাকা বিক্রির ফেরিওয়ালার সংখ্যা দ্বিগুণ দেখা মেলেছে। দিবসের শেষ সময়ে বিক্রিও হচ্ছে প্রচুর।
শিবচর এলাকার এক মৌসুমী পতাকা বিক্রেতার সঙ্গে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ স্কুলের সামনে কথা হয়। তার নাম মো: খাইরুজ্জামান। বাবার নাম এমরান হোসেন। বয়স-১৮বছর। বাড়ী মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার বহরাতলা গ্রামে। তিনি
এইচ এস সি প্রথম বর্ষের ছাত্র। পড়া-লেখার পাশাপাশি সারা বছর সংসারে অন্যান্য কাজ করলেও গত ৯ ডিসেম্বর থেকে পতাকা বিক্রি করার জন্য এখানে এসেছেন। এ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত তিনি পতাকা বিক্রি করবেন।
তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসের এ সময়টাতে পতাকা, মাথায় ও হাতে বাধার ব্যাচ এবং বিজয় দিবসের অন্যান্য সামগ্রী ভালই বিক্রি হতো। এতে ১৫ দিনে পতাকা বিক্রি করে অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা যেতো। কিন্তুু এবার বিশ্বকাপের খেলা চলার কারণে মানুষের মাঝে পতাকা কেনার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখছি না। তাই এবার অন্য বছরের তুলনায় বিক্রিও কম। তারপরও দিনে ৭শ থেকে ৮শত টাকা বিক্রি হয়।
চকরিয়া পৌরশহরের পুরাতন বাস স্টেশন এলাকায় মাদারীপুর থেকে আসা পকাকা বিক্রেতা মুছা আলী বলেন, জাতীয় পতাকা বিক্রি করে আমি গর্বিত। আমি মনে করি, পতাকার মাধ্যমে আমি দেশের মানুষের কাছে শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের স্মৃতি তুলে দিচ্ছি। জাতীয় পতাকা দেখলেই মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি বিজড়িত কথা। এ পতাকার জন্য বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে এ পতাকা ফেরি হিসেবে বিক্রি করতে বের হন। আমরা প্রায় ১৫-২০ জন লোক বিভিন্ন জেলা থেকে এ উপজেলা ও পৌরশহর এলাকায় এসেছি।দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় আমরা ছুটে চলেছি জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে। জাতীয় পতাকা বিক্রি করতে নিজেকে অনেক গর্ববোধ করি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।