আলমগীর মাহমুদ

 

শ্রীমঙ্গল সিলেট ট্যুরের এ ক’দিন স্মৃতির বাতায়নে আজ দখিনা হাওয়া। একসময় শুধুই আকতার চৌধুরী আছে আমি ঘুরতে গেলে সঙ্গসুখ পাবো আশায় বুক বাঁধতাম…

বান্দরবান, নারিকেল জিঞ্জিরা, এবার শ্রীমঙ্গল, সিলেটেসহ তৃতীয়বার।

প্রত্যেক সফরে সঙ্গী হবার সুবাদে এখন আমার আর আকতার চৌধুরী একজন নয় সবাই যে-ন আকতার চৌধুরী–

তাঁদের সঙ্গসুখ ক’দিন আকতার চৌধুরী না থাকার শূন্যতাও আমারে রেখেছিল ভুলিয়ে। অনুভবে আসেনি আমার কেউ নেই!

এমন সঙ্গসুখের মানুষগুলো কক্সবাজারের বাইরে বানিয়ে রেখেছিল ‘আর এক একচিলতে কক্সবাজার ‘…

সায়ীদ আলমগীরতো জন্মসালের সাথে এসএসসি সাল মিলিয়েই আমারে বানিয়েছিল ক্লাসফ্রেন্ড–

খোরশেদ হেলালী খাবার দাবারে অনাগ্রহ দেখে মাংস উনার বরাদ্দটুক আমার পাতে দিয়ে বলেছে ‘বেশী মাইন্ড গইরজ্যম- আঁই গোস্ত ন খাইদে…যেন পূর্বজনমের কোন বন্ধু…

মাহী মুচকি হাসির আলমগীর স্যার আলমগীর স্যার দরদের কুঠিরে নামিয়েছে বর্ষা…

লিটন… হাজার নিশ্চুপ, ভদ্র অবয়বে যে ভালবাসা লালনের দূ’চারলাইন পেয়েছি অভুলা।

মঞ্জুর… কক্সবাজার শহরের মানুষ এত ভদ্র নম্র, না দেখলে বুঝা ছিল মুশকিল!

শাহীন রাসেল… দরদের চাদরে মোড়িয়ে কাউরো পরাণ দখল করার সাম্রজ্যে যেন অদ্বিতীয় মহারাজ।

কনক… ব্যতিক্রমী মানষের মানসভূমিওয়ালা ভাবনার অনন্য ফটোখেচইন্না। সবাই আমরা তুলেছি নান্দনিক প্লেসে তার ছবি যেন রেললাইনে মুসাফির।

আলাউদ্দিন সিকদার… ছবির হাত ভাল।মনভূমি উর্বর। কনকের সাথে মনে মনের মিলটা যেন’ প্রতিভার বন্ধু ‘ প্রতিভার বন্ধু।

শরীফ আজাদ… বলেছিলাম হারালে বুঝবি, জ্বলবি, হউক চারদিন্যা বন্ধুত্ব! জানন দিয়েছে সে জ্বলছেই…

আকাশ… পুরো ট্যুরেই আমারে রেখেছে গুণে গুণে… যেন দরদের মানুষ হারিয়ে অথবা দখলে যাবার ভয়…

জসিম আজাদ… কোন জায়গায় কোনখানে সে আমার প্যাকেট আমারে দেয়নি বইতে… স্যার… স্যার বলে সাইট সিন ও কথার একাগ্রতায় হেঁটে হেঁটেই কে কার বুঝা ছিল মুশকিল!

মোস্তফা ভাই… স্মৃতির মনঃভূমিতে ডুবে থাকা প্রতিভার এন্টারর্টিকা মহাদেশ।শ্রীমঙ্গল উনি যখন সবাইর বের হবার অপেক্ষায় হোটেলের বাগানের দোলনায়…

তখনই তন্ময়তায় একাগ্রচিত্তে ধরেছে…’আঁই ভাত ন খাইয়ুম গোস্যা অইয়ুম
আঁর মনত জ্বালা বিয়াগগুনর বউ সুন্দর পাইয়ে আঁর বউওয়া কালা।’

আকতার চৌধুরী… পুরো সফরে যা যখন যতদুর পেয়েছি, পুরোটাই যেন পাঠশালা।
নির্দিষ্ট সময়ের আগে টারমিনাল এরপর সাইট সিনে রেডি হয়ে নির্দিষ্ট স্থানে নির্ধারিত সময়ের আগে চলে আসা।

খাবার পর খিচুড়ি আলাপে হোটেলে বসে না থেকে সাথে সাথে স্থান ত্যাগ…

যেন পান সিগেরেটের অভ্যেসধারীরাও অভ্যাস ভুলে না যায় তার ব্যবস্থা করে দেয়া… এরূপ অনেক। যাহ লিডারশীপে মরিয়ম স্যালাইনের বেশে করে কর্ম।

আনচার ভাই… বিশেষ এক প্রতিভার জগত সন্মানের কারাগারে রয়েছে বন্দীদশায়। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে কয়েদী প্রতিভা যে নাড়ায় তার বহিপ্রকাশ মাদবপুর লেইকে ‘আনচার বইগিয়ই দৃশ্যে’

ইমাম খাইর ভাই… যার পাশ থেকে সরতে পারিনি একটুও। ডাক দিয়ে দরদে যেভাবে ফিরতি ট্রেনের পাশাপাশি সিটে বসিয়েছে তাতে নুতন এক শিক্ষা পাঠ হয়েছে মোর ‘বেশী দরদেরও আছে বিপদ আপদ’

আমারে বেশি দরদে বসিয়েছে জানালার পাশে বেরুতে গেলে উনার সিট মাড়িয়ে যাত্রাপথ…

রাত এগারোটা। ঠিক তখনই উনি ঘুমিয়ে। পা গুলো টানা টানা। আমার বেরুতে গেলেই উনারে জাগাতে হয়।যেন এক অলিখিত কারাগারেই পড়ে গেলাম।

ঘড়ির কাঁটা যখন সাড়ে এগারোটা। প্রকৃতির হালকা পাতলা ডাক ডাকতে রয়। যতই অবস্থা যন্ত্রনায় রূপ নিতে চলে আমি খাইর ভাই চোখ মেলছে কিনা দেই…

একসময় সহ্যক্ষমতা হারালে ভাবি ডাক দি।দিব দিব ভাবনি। অচেতন মন নিজেরে কয়’ বেঁচেরা অসুস্থ কাউরে জানতেও দেয়নি নিরাপদ ভেবে তরে বসিয়েছে তরে।

তুই তর হালকা যন্ত্রণা হালকার সুখ নিতে রোগীর সুখ ঘুম তাতে আঘাত করবি…!

এমন ভাবনায় কথা বেরুয় না।নিজেরে কই আর একটু ধৈর্য ধর, আর একটু ধৈর্য ধরে… নিজেরে বুঝাতে কখন যে সাড়ে পাঁচটায় ঘড়ির কাঁটা… এক একটা ঘন্টা যেন গেল এক একটা বছর।সময়টা যে যন্ত্রণার।

অতি আদরের, অতি সন্মানের যে কতবড় বিপদ অপেক্ষায় রয় হাঁড়ে হাঁড়ে পেলাম টের।

মনে মনে কানমলা খেয়ে শপথ নিলাম ‘আল্লাহ প্রথম বারের মতো আমারে মাফ করো ‘ আমি আর কোনদিন এমন দরদের স্বাদ নিবো না!

ইসলাম মাহমুদ… স্মৃতির বাতিঘরে প্রত্যেক ভ্রমনে ভ্রমণকারীদের মধ্যে কিছু মানুষ দেখিনি,শুনিনি,খেতে না পারলে দেখায়ইনি, তারপরও মুখে হাসি অন্যের খাবার সুখে রয় চিন্তা..

যারা দিনশেষে ধন্যবাদও করেনা আশা..এমন মানুষই ইসলাম ভাই। আমাদের স্মৃতির কূঁড়েঘরের হাছানরাজা।

সরোয়ার সাঈদ ভাই… দেহায়বের সাথে স্বভাবের পুরোটাই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ যার। সেইই আমাদের সরোয়ার সাঈদ।

দেহ দেখে অনুমানে নিলে গর্বওয়ালা মনে হতে পারে। ব্যবহার, মেশা, প্রত্যেক কাজে, কর্মে, ত্যাগে মনের বিশালতা, আবার তাহ কেউ না দেখে মত ঢেকে রাখার প্রবণতা।

পরের গাট্টি নিজের কাঁধে নিয়ে গাট্টিওয়ালারে ঘুমাতে দেয়ার মানুষই এই সরোয়ার সাঈদ।
গেলকাল যখন ফিরতি ট্রেনে আমরা। তিনটি টিকেট না পাওয়ায় ষ্টেন্ডিং নিতে হয়। সিট পাওয়া সাপেক্ষে বসা।

এই পুরো ট্রেনে হেঁটে হেঁটে সবাইর খবর নিচ্ছে নিচ্ছে ভাবে যে তারা তিনজন টি,টি,র মত ঘুরে ঘুরে বুঝতে দেয়নি তাঁদের যে বসার সিট নাই।

সেই তাঁরা লাকসাম এসেই পেয়েছে সিট। সিটে বসতেই সেই তারা যে নিজের অজান্তেই পড়েছে ঘুমিয়ে…

ঘুমন্ত চেহেরাটায় যে ক্লান্তির ছাপ। সুন্দর চেহেরায় এমন ক্লান্তির ছাপ পড়লে সুন্দর চেহেরাও কি বিভীষিকাময় রূপ নেয়…

গেলকাল চুপি চুপি সরোয়ার সাঈদের সে ক্লান্ত চেহেরাটা দেখেই মনের ক্যামরায় তাহ রেখেছি বন্দী করে…

এমনসব মানুষেরা রয় বলে নদী বয়,ফুল ফোঁটে, পাখি ডাকে ‘শ্রীমঙল-সিলেট ট্যুর হয় সফল’

 

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ, উখিয়া কলেজ।