মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু:
কক্সবাজারের রামু উপজেলার ১১ টি ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২ টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী (১১ নভেম্বর) বৃহস্পতিবার। এ ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা দিন রাত উৎসব মুখর পরিবেশে গানে গানে স্লোগানে সড়ক থেকে ঘর পর্যন্ত ভোট ভিক্ষা করেছেন। মঙ্গলবার রাত ১২ টায় শেষ হচ্ছে প্রচার-প্রচারনা। বরাবরের মত এবারেও ভোটারদের মন জয়ে প্রার্থীরা দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি। রাস্তাঘাট, চায়ের দোকান, বাসা থেকে অফিস রামুর সর্বত্রই এখন আলোচনায় ইউপি নির্বাচনে কারা এগিয়ে। সেই নির্বাচনের হাওয়া কেমন চলছে তা জানতেই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ঘুরে বেড়িয়েছে গণমাধ্যম কর্মীরা। কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিস ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রামু উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৭ জন এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ২ ইউনিয়নে ৫ জন লড়ছে। উৎসবমুখর পরিবেশেই চালিয়েছে প্রচারণা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামিলীগের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ শফিউল্লাহ, সহ-সভাপতি আবু তাহের কোম্পানি জানান এ উপজেলার বাইশারী ও দোছড়ি ইউপিতে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দুইজনকে বহিষ্কার করেছে জেলা আওয়ামিলীগ। যদিওবা বিদ্রোহী দুই জনেই আওয়ামিলীগের সভাপতি ছিলেন। তাদের বহিষ্কার করা দুই ইউপিতে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত। বাইশারী ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের আলম কোম্পানি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবে। আর দোছড়িতে মোঃ ইমরান নৌকা প্রতীক নিয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে জিতবে। তবে স্থানীয়দের মতে বিদ্রোহী প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর এর সাথে লড়াই হাড্ডা হাড্ডি হবে। তবে এই পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে আলম কোম্পানি। দোছড়িতে বর্তমান চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী আলহাজ্ব হাবিবউল্লাহ বা ইমরান মেম্বারের মধ্যে যে কেউ একজন হতে পারে দূর্গম এই ইউনিয়নের অভিভাবক। রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সূত্র জানায়, রামু ১১ টি ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নৌকার প্রার্থীদের জিততে লড়তে হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান সহ জনপ্রিয় শক্তিশালী নেতাদের। উপজেলা আওয়ামীলীগের দেয়া তথ্য ও প্রতিটি ইউনিয়ন সরেজমিন ঘুরে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে , রামুর প্রানকেন্দ্র ফতেখাঁরকুলে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে নৌকার প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল হক চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ভুট্টো’র সাথে। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে আরো রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম। এ ইউনিয়নে দুই জনেই নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন। নৌকা না পেয়ে তারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম গেল ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই চেয়ারম্যান হন। চাকমারকুলে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে। তবে প্রচার প্রচারণা ও জনপ্রিয়তার কারণে লড়াই হবে নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম সিকদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল আলম প্রকাশ এন. আলমের মধ্যে। কাউয়ারখোপ ইউনিয়নে ৭ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের সদস্য শামসুল আলম, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী যুবলীগ নেতা ওসমান সরওয়ার মামুন ও জাসদ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর অবস্থান ভালো। খুনিয়াপালংয়ে ৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও মাঠে এগিয়ে রয়েছে নৌকার মাঝি বর্তমান চেয়ারম্যান সাংবাদিক আবদুল মাবুদ ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হক।

দক্ষিণ মিঠাছড়িতে ৯ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে আওয়ামীলীগ প্রার্থী খোদেস্তা বেগম রীনার সাথে বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের।এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো। ৫ বছর ক্ষমতায় থাকা কালে অনেক অনিয়মের অভিযোগ তুলছে ভোটাররা। ঈদগড়ে ৪ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। আওয়ামীলীগ প্রার্থী নুরুল আলম, বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ ভুট্টো ও বিএনপি নেতা নুরুল আজিম মাইজ্যার মধ্যে যে কেউ হতে পারে এই ইউনিয়নের অভিভাবক।
গর্জনিয়ায় চেয়ারম্যান পদে ৬ জন মাঠে রয়েছেন। এখানকার সমীকরণে জয়ের মালা পরতে পারেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী মুজিবুর রহমান বাবুল কিংবা গোলাম মৌলা চৌধুরীর মধ্যে যেকোনো একজন। এখানে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম,আজিজ মওলা। কচ্ছপিয়ায় ৬ জন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হচ্ছে চর্তুমুখী। শেষ হাসি হাসতে পারে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কোম্পানি অথবা বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন মেম্বার কিংবা বর্তমান চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাঈল ( নোমান)। তবে পরিস্থিতি উল্টোদিকে গেলে এমনটা হতে পারে জামায়েতে ইসলামের সমর্থিত প্রার্থী তৈয়ব উল্লাহ শেষ হাসি হাসবে। রাজারকুলের ৪ জন প্রার্থী থাকলেও নৌকার মাঝি সরওয়ার কামাল সোহেল ও বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমানের মধ্যেই লড়াই হবে।
রশিদনগরে ৩ জন প্রার্থী থাকলেও মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছে মোঃ হান্নান সিদ্দিকী ও এমপি কমলের অনুসারি বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ আলম। এখানে নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মোয়াজ্জম মোর্শেদ। জোয়ারিয়ানালার প্রার্থী ৬ জন হলেও লড়াই হবে ত্রিমুখী। বর্তমান চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী কামাল শামসুদ্দীন আহমদ প্রিন্সকে জিততে হলে ডিঙ্গাতে হবে বিএনপি নেতা গোলাম কবির এবং জামায়াত নেতা রাশেদুল ইসলামকে। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছে যুবলীগ নেতা আবছার কামাল সিকদার, আনছারুল আলম ও এম. এম নুরুচ্ছাফা। এবিষয়ে রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক শামসুল আলম মন্ডল বলেন, রামুর প্রতিটি ইউনিয়নেই এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। সুস্থ ভোট হলে ১১ ইউনিয়নে নৌকা জয় পাবে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগ নৌকার প্রার্থীদের জয়ী করতে দিনরাত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছে। মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট ভিক্ষা চাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যারা নৌকার বিরোধীতা করছে কিংবা বিদ্রোহীদের পক্ষে কাজ করছে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বাকিদের বহিষ্কার করা হবে। তিনি আরো বলেন, মানুষ নৌকায় ভোট দিতে চায় এটা আমি বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে বুঝেছি। ১১ নভেম্বর রাতে এটির প্রমাণ পাবেন সকলে।