জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
যথাযথ সম্মান না দেওয়ায় অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে সাবেক ছাত্রনেতাদের বর্জনের কারণে বিবর্ণ, প্রাণহীন ও মলিন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের বহুল প্রত্যাশিত সুবর্ণজয়ন্তী ও হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। এতে ভিন্নমতের অনেক ছাত্রনেতাদের না দেখে
ক্ষুব্ধ হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ
হলের সাবেক শিক্ষার্থীরা।হল প্রশাসন ও হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের “অতি রাজনীতিকীকরণের কারণে” এমনটাই হয়ে বলে জানান সাবেক ছাত্রনেতারা। সাবেক ছাত্রনেতাদের বর্জনের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেও আসে নি। আবার অনেকেই এসে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছে।ফলে প্যান্ডেলের বিরাট অংশ খালি দেখা যায়।

১০ মার্চ (২০২৩) ইং শুক্রবার সকালে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের মাঠে হলের সুবর্ণজয়ন্তী ও হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে সংযুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র ওবায়দুল কাদের।
অনুষ্ঠানে অতীতে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ ছাড়া অন্যান্য ছাত্র সংগঠন থেকে
নির্বাচিত সাবেক একঝাঁক ছাত্রনেতাদের না দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের।

সব ক্ষেত্রে রাজনীতি না করার আহ্বান জানিয়ে ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল এলামনাই এসোসিয়েশনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “সব জায়গায় পলিটিক্স করতে চাই না। কিছু কিছু জায়গা রাজনীতি থেকে বাইরে রাখতে হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত অনুষ্ঠান এটা এলামনাইয়ের চরিত্র হওয়া ঠিক না। মন্ত্রীকে এনে প্রধান অতিথি করতে হবে এর সঙ্গে আমি একমত না। এখানে আমি মুহসীন হলের আবাসিক প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আসবো। একসঙ্গে বসে আড্ডা দিবো, হাসিখুশি করবো এটাই কাম্য। যারা প্রথম এ আয়োজন করেছেন পরবর্তীতে যেন এটা রাজনীতি মুক্ত থাকে”।

জানা যায়, দানবীর হাজী মুহাম্মদ মুহসীন এর নামে ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ‘ প্রতিষ্ঠা করা হয়। হলের প্রথম ব্যাচের ছাত্র হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য , সাবেক এমপি ও মন্ত্রী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সহ দেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ এই হলে মাথা গোঁজার ঠাঁই নিয়েছেন। শুরুতে ষাটের দশকের শেষ দিকে এনএসএফ , সত্তরের দশকে ছাত্রলীগ, আশি ও নব্বইয়ের দশকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আধিপত্য ছিল হলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সে আধিপত্য হারায় ছাত্রদল।
একসময়ের ছাত্রদলের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ১৯৮৯ সালের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্রলীগ, জাতীয় ছাত্রলীগ,আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ মিলেও ছাত্রদল কে পরাজিত করতে পারে নি। সেবার পূর্ণ প্যানেলে জয়ী হয়েছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে ১৯৯০ সালের ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও। সেবার কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সহ মুহসীন হলের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ হল সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ফলে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল থেকে বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতা উঠে এসেছে। এসব নেতাদের মধ্যে আছেন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ (বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত) ,ডাকসুর সাবেক জিএস এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি
কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সহ-সভাপতি মাহবুব মিয়া, সাবেক ছাত্রদল নেতা সানাউল হক নীরু, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সাবেক জিএস সাঈদ সোহরাব, সাবেক এজিএস এবং বর্তমান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ। হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে এসব নেতাদের সঙ্গে কেউ সসম্মানে যোগাযোগ করে নি। এমনকি হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কমিটিতে এসব জাঁদরেল নেতাদের রক্ষার রাখা হয় নি।
বিএনপির বাইরে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের সাবেক ছাত্র এবং গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের সাথে কেউ সসম্মানে যোগাযোগ করে নি। ফলে সাবেক ছাত্রনেতাদের বড় একটি অংশ আজকের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ছাত্র সংসদ এর সাবেক এজিএস এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল জানান, হলের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান সার্বজনীন হওয়ার কথা। দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবাই মিলে এটি করা উচিত ছিল। সাবেক ছাত্রনেতাদের কে চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের কমিটিতে হল সংসদ এবং ডাকসুতে নির্বাচিত সাবেক ছাত্রনেতাদের কে চরম অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এজন্য ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি ও আওয়ামী লীগপন্থী নীল দল থেকে নির্বাচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিরক্ত প্রকাশ করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।