মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

দেশে জনসংখ্যা অতিমাত্রায় বাড়ছে। জনসংখ্যার তুলনায় কর্মসংস্থান কম। এজন্য বেকারত্ব বাড়ছে। সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারীরা সাধারণ মানুষের বেকারত্বের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ পথে বিদেশ যেতে প্রলোভন দিচ্ছে। বেকারত্বের কারণে বিদেশে গিয়ে বেশী অর্থ উপার্জন ও উন্নত জীবনযাত্রার আশায় বেশীরভাগ ক্ষেত্রে নিজের টাকা দিয়ে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ছে।

বুধবার (২৯ মার্চ) কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের সম্মেলন কক্ষে Consultation Meeting with Public Prosecutors and Lawyers on Human Trafficking Issue শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এ কথা বলেন। International Organisation for Migration (IOM) এর সহায়তায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে এসিস্ট্যান্ট টু ভালনেরেবল মাইগ্রেন্টস এন্ড কাউন্টার ট্রাফিকিং প্রজেক্টের আওতায় অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও প্রকল্প কর্মকর্তা সৈয়দা নুর-ই- নাবিলা তাবাসসুম, কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, ট্রাইব্যুনাল-২ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট একরামুল হুদা, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সুলতানুল আলম, এপিপি তাপস রক্ষিত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর বিচারিক অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে আরো বলেন, বেশীরভাগ মানবপাচার মামলার সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসেনা না। সাক্ষীদের অধিকাংশই ভিন্ন জেলার বাসিন্দা। যারা সহজে আদালতে এসে সাক্ষ্য দিতে চায়না। অনেকে সাক্ষ্য দিলেও উল্টাপাল্টা সাক্ষ্য দেন। আবার মামলায় অহেতুক আসামী বেশী করা হয়। নির্দোষ মানুষকেও এজাহারে আসামী করা হয়। যা মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে দেয়।

তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারে অনেকক্ষেত্রে পতিতা ও সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করে মানবপাচার ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। যা মানবপাচার আইনের অপব্যবহার।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আরো বলেন, মানবপাচার মামলা দায়েরের সময় এজাহারে এবং তদন্তে প্রচুর ত্রুটি ও দুর্বলতা দেখা যায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এজাহারে আসামীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকেনা। অনভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণবিহীন কর্মকর্তারা মামলা তদন্ত করে থাকে। ফলে মামলার যথাযথ তদন্ত হয়না, তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রসিকিউসনের কোন পরামর্শ নেননা। মামলার পারফেক্ট সাক্ষ্য ও এভিড্যান্স পাওয়া যায় না। বিচার প্রক্রিয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে বিজ্ঞ বিচারকগণ সাক্ষ্য ও যথার্থ এভিড্যান্সের অভাবে মানবপাচারকারীদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে যথাযথ শাস্তি দিতে পারেন না। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, পেশাদারিত্ব ও সচেতনতার সাথে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। প্রসিকিউসনকে আরো বেশী লজিস্টিক সাপোর্ট দিতে হবে। তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুরূপ সভা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারীরা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড সহ আরো বিভিন্ন দেশে মানবপাচার করতে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলকে নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম ফরিদ বলেন, মানবপাচার মামলায় সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হচ্ছে-বিচার প্রক্রিয়ায় সাক্ষী নাপাওয়া, আদালতে চার্জশীটভূক্ত সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে নাআসা। সাক্ষীকে খুঁজে বের করা। আবার অনেকসময় আসামীদের সাথে আপোষ করে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দেন। ফলে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। তখন আদালতে মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আদালতকে প্রকৃত আসামীদের শাস্তির আওতায় আনতে বেগ পেতে হয়।

আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট আহমদ কবির, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শওকত বেলাল, অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট খালেক নেওয়াজ, এপিপি অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ, এপিপি অ্যাডভোকেট প্রতিভা দাশ, এপিপি অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউসার, এপিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, এপিপি অ্যাডভোকেট আবুল কাসেম, এপিপি অ্যাডভোকেট রফিকুল আলম, এপিপি অ্যাডভোকেট দীলিপ কুমার দাশ, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহীন সহ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির প্যানেল আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।