চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিস যেনো দুর্নীতির আখঁড়ায় পরিনত হয়েছে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না ওই অফিসে। টাকায় কথা বলে। টাকায় ফাইল খুলে। না হয় হয়রানির শিকার হতে হয় চরপাথরঘাটার সেবাপ্রার্থীদের।

অভিযোগ উঠেছে, তহশিলদার উজ্জ্বল কান্তি দাশ এই অফিসে যোগদানের পর থেকেই দেদারছে চলছে ঘুষ বাণিজ্য আর অনিয়ম কার্যক্রম। সেবা নিতে গেলে পদে পদে দিতে হয় ঘুষ। একাধিক সেবাপ্রার্থীদের এমন অভিযোগ। এমনকি অধিগ্রহণের অনেক জমি পুনরায় উপজেলায় প্রস্তাব যাচ্ছে এই ভূমি অফিস থেকে। যার নাটেরগুরু তহশিলদার। কিছুদিন আগেও এই অফিসের পিয়ন মো. শহিদকে অনিয়মের অভিযোগ স্ট্যাণ্ড রিলিজ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তহসিলদারেউজ্জ্বল কান্তি দাশ ভুমি মালিকদের কাছে প্রথমে বর্তমান রেটে হিসাব করে বড় এমাউন্ট ধরিয়ে দেয়, পরে সমঝোতার মাধ্যমে চুক্তিতে পূর্বের রেটে বা জমির আকার পরিবর্তন করে খাজনার রসিদ কেটে দেয়। নামজারির মোকদ্দমা নিস্পত্তির পূর্বে আবেদনকারী ও বিবাদী উভয় পক্ষে সরেজমিনে গিয়ে নোটিশ প্রদানের নিয়ম থাকলেও তা না করে শুধুমাত্র কাগজ কলমে নোটিশ জারি করার কারণেই বিরোধপূর্ণ জমির নামজারি প্রস্তাব বা প্রতিবেদন তিনি গোপনে পাঠান বলেও অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী। এমনকি খসড়া খতিয়ান, নামজারী সহ বিভিন্ন কাগজপত্র তুলে দেয়ার নামেও তিনি টাকা আদায় করেন।

স্থানীয়রা আরও জানান, সরকারী নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে বন্ধের দিনও তহসিলদার অফিস করেন। অন্যদিকে জমি সংক্রান্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ অফিসকে ঘিরে গড়ে উঠেছে স্থানীয় একাধিক দালাল ও ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট। সকাল থেকেই জমির দালালেরা এখানে হাজির হন। দালালদের কাজ করতে করতে সাধারণ মানুষের কোন কাজেই হাত দেন না তহশিলদার উজ্জ্বল। তিনি নিজেই দেন দরবারের পাশাপাশি অফিসের পিয়ন শুভকে দিয়েও গোপন রুমে গিয়ে সেবাপ্রার্থীদের কাছে ঘুষের দরদাম করান। দরদামে না হলে সেবাপ্রার্থীদের সময়ক্ষেপন করা, বিদ্যুৎ না থাকার বাহনা, ইন্টারনেটে সমস্যা, সার্ভার ডাউনসহ ৭ দিনের সমন্বয় কাহিনী শোনান সেবাপ্রার্থীদের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভেতরে তৈরি করেছেন আরেকটি গোপন কক্ষ। যে কক্ষে কোন সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়নি। ক্যামেরা রয়েছে তহশিলদারের ফাইলপত্রের উপর। শুধু সিঁড়ির গোড়ায় আর বাহিরে। যাতে বড় কর্তা আসলে আগাম দেখা যায়।

মো. ফরিদ নামে এক ভূক্তভোগী বলেন, ‘একটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিবো। জমি চরপাথরঘাটা মৌজার মধ্যে। জমির খাজনা পরিশোধের রশিদ প্রমাণ স্বরুপ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। গত তিন দিন গিয়েও খাজনা দিতে পারিনি। খাজনা দিতে নাকি ৭ দিন অপেক্ষা করতে হবে। অনলাইনের নামে নানা কাহিনী। ৭০ টাকার অনলাইন খাজনা দিতে ৫০০ টাকার ঘুষ দাবি করে।’

চরপাথরঘাটা এলাকার মো. শাহ জাহান বলেন, ‘গত বুধবার সকালে খাজনা দিতে গেছি। তহসিলদার উজ্জ্বল বাবুকে বলছি খাজনা দিবো। তিনি শুনেও না শোনার মতো করে থাকলেন। পরে পিয়নকে বলেন কাগজগুলো দেখতে। পিয়ন কি বলছে কি জানি। তহসিলদার বলল অনলাইনে একাউন্ট করতে হবে। ৭ দিন সময় লাগবে।’

কিন্তু পরক্ষণেই সৈন্যেরটেক এসে কম্পিউটার দোকানে অনলাইনে আবেদন করি। তারপর অফিসে গিয়ে যখন ঘুষ দিয়েছি। তখন সমন্বয় ও খাজনা পরিশোধ হয়ে গেছে। ১৩০ টাকার খাজনা দিতে গিয়ে ২০০ টাকা ঘুষ নিছে পিয়ন শুভ। এই অফিসে তহসিলদার উজ্জ্বল বাবুর যে হাব ভাব মনেহয় তিনিই রাজা। আমরা যারা জমির মালিক খাজনা দিতে যাই তাঁরা গোলাম। ওই ভূমি অফিসটা দুর্নীতির আঁখড়া হয়ে গেছে। ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করতে হয়না এখানে। আমরা এসিল্যান্ডের নানা সুনাম শুনি। কিন্তু এসব ব্যাপারে উনার উচিত ব্যবস্থা নেওয়া।’

সূত্র জানায়, এ অফিসের কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশের বিরুদ্ধে স্থানীয় সংবাদপত্রে একাধিকবার নানা অনিয়ম ও কর্মকান্ড নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তাকে বদলি করা হচ্ছে না।

এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (তহশিলদার) উজ্জ্বল কান্তি দাশ বলেন, ‘পিয়ন শুভের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। অফিসে গিয়ে খোঁজ নিব। অনলাইনে খাজনা দিতে গেলে সমন্বয় করতে হয়। অনেক সময় বিদ্যুৎ থাকে না। সার্ভারের সমস্যা হয়। তাই মানুষজনকে সেবা দিতে পারি না। আমরা যে হয়রানি করি তা নয়।’

তহশিলদারের কাছে জানতে চাওয়া হয় অধিগ্রহণের অনেক জমির প্রস্থাব কি করে চরপাথরঘাটা ভূমি অফিস থেকে যাচ্ছে, সরকারের নানা সংস্থা জমিগুলো যে অধিগ্রহণ করেছে তা কি ভূমি অফিসের বালামে লিখা নাই। এরপরেও কি করে আপনারা এসব খতিয়ান সৃজনে সহযোগিতা করছেন এমন প্রশ্ন করলে তহশিলদার উজ্জ্বল কান্তি দাশ আলাদা ভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল এর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে হবে। কিছুতেই হয়রানি করা যাবে না। এটা ভূমিমন্ত্রীর এলাকা। আমি কঠোর ভাবে নির্দেশ দিয়েছি সেবাপ্রার্থীরা যেন কোন ভাবেই হয়রানির শিকার না হয়। অনলাইনে এখন খাজনা কাটা যায়। তবে প্রথমবার আবেদন করে একটু অফিসে এসে সমন্বয় করতে হয়। দ্বিতীয়বার আর করতে হয় না। নিজেই ঘরে বসে খাজনা দিতে পারবেন। তবুও কেউ হয়রানি হলে সরাসরি আমাকে জানাতে পারে। আর বদলির বিষয়টি জেলা রাজস্ব শাখার বিষয়।’