মুহাম্মদ আবু বকর ছিদ্দিক:

ভূমি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া ও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারী, ই-পর্চা, ডিজিটাল রেকর্ডরুম থেকে মৌজা ম্যাপ ও পর্চা ডাকযোগে সরবরাহসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে। এতে ভূমি সেবা সারা দেশের ন্যায় রামুতে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রামু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার।

এ সময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজ করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ নাগরিকের সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘স্মার্ট ভূমি সেবায় ভূমি মন্ত্রণালয়’-এ স্লোগানকে সামনে রেখে দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব ভূমি সেবা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের অঙ্গীকার। প্রতিবেদক আবু বকর ছিদ্দিককে তিনি আরও জানান
রামু উপজেলায় এ পর্যন্ত ১,০২৭ টি মুজিববর্ষের ঘর উদ্বোধন করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ের ২য় ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১৯০ পরিবারকে ঘর ও জমি প্রদান করা হয়েছে। রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের হাজির পাড়া এলাকায় ৭৩টি, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পূর্ব জুমছড়ি এলাকায় ৪০টি, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রাম এলাকায় ৪০টি, রাজারকুল ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়া এলাকায় ৩০টি, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ঘোনারপাড়া এলাকায় ০২টি, চৌধুরীপাড়া এলাকায় ০১টি, হাসপাতালপাড়া এলাকায় ০৪টি সহ সর্বমোট ১,০২৭ টি মুজিববর্ষের ঘর প্রদান করা হয়েছে।

বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের ভূমি বিষয়ক সেবা অর্থাৎ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারীর আবেদনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়। অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান অনলাইনে ডি.সি.আর ফি এবং বর্তমান ভূমি উন্নয়ন কর সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে গ্রহণ করা হয়। অনলাইনে সৃজিত খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি প্রাপ্তির আবেদন গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সরবরাহ করা। গণশুনানি, আপত্তি বা আপিল দাখিল ও নিষ্পত্তির কার্যক্রম চলমান আছে।
সেবা গ্রহীতাদের সেবা সম্পর্কিত বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাব সরাসরি উত্তর প্রদানের জন্য সেবা বুথে একজন কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন।

রামু উপজেলায় অনলাইনে ভূমি সেবায় কার্যক্রম শুরু হবার পর সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। তারা এ কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে জমিজমার যাবতীয় কাজ কর্ম নিয়ে ছুটে আসছে সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিস সমূহে। ঘরে বসে সেবা পেতে ১৬১২২ নাম্বারে কল করে সেবা নিতে শুরু করেছেন তারা। এনআইডি সহ জমির তথ্য প্রদান, কল সেন্টার কর্তৃক আবেদন দাখিল, মোবাইলে টোকেন নাম্বার প্রাপ্তি ও টোকেন নাম্বারে মোবাইলে ফি প্রদান, মোবাইলে আবেদন, আইডি ও ডেলিভারির তারিখ প্রাপ্তি, ডাক বিভাগের মাধ্যমে আবেদনকারীর ঠিকানায় খতিয়ান সরবরাহ, খতিয়ান (পর্চা), জমির ম্যাপ সংক্রান্ত যে কোন সেবার জন্য ১৬১২২ নাম্বারে কল করাসহ নানা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও ই নামজারি সংক্রান্ত তথ্যাদি ১৬১২২ নাম্বারে কল করে পাওয়া যাচ্ছে। সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বিশেষ কিছু তথ্য। যার স্বচ্ছতা এতো ছিল না বহুদিন ধরে। এর মধ্যে মাত্র ২০ টাকায় ফরম পূরণ, নোটিশ জারীর ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন ফি ১ হাজার টাকা এবং মিউটেশন খতিয়ান ফি ১০০ টাকা মোট খরচ পড়ছে ১ হাজার ১৭০ টাকা। একান্ত আলাপ চারিতায় সাংবাদিকের কাছে এসব কথা বলেন,রামুর এসিল্যান্ড নিরুপম মজুমদার।

তিনি আরও জানান ভূমি সেবা অনলাইনে শুরু হওয়ায় সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে দারুণ আগ্রহ দেখা দিয়েছে। দালাল মুক্ত অবস্থায় নিজেরাই নিজেদের যাবতীয় কাজ সেরে নিতে ভূমি অফিসে আসছে। এতে সময় সাশ্রয় হচ্ছে,খরচ কমছে, হয়রানি বন্ধ হয়েছে তাদের। সম্পূর্ণ দালাল মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ভূমি অফিস সমূহ। এরপরও কেউ ভূমি অফিসের কারও দ্বারা হয়রানির শিকার হলে আমার সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানিয়েছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ভূমি সেবা সমূহকে একটি প্লাটফরমে আনার চিন্তা করছে। রেজিস্ট্রেশন, জরিপ, নামজারি সহ প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম যদি এক প্লাটফর্মে আনা যায়, তবে জন ভোগান্তি অনেকাংশে কম যাবে, সুফল পেতে শুরু করবে মানুষ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট সেবাদান অত্যন্ত জরুরী, আর তা শুরু হয়েছে অনলাইনে ভূমি সেবাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে। সেবা গ্রহীতা দেশে বা বিদেশে অবস্থান করলেও সেখান থেকেই ই-সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। সীমানা বিরোধ শূণ্যের কোঠায় আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ডিজিটাল জরিপের কারণে ভবিষ্যতে মানুষ এর সুফল পাবে। সচেতন হতে হবে মানুষকে।

ভূমি ক্রয়ের পর যত দ্রুততম সময়ের মধ্যে নামজারী নিষ্পত্তি করতে হবে। এর বিলম্ব ঘটলে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে অনেকে রেজিস্টার্ড বণ্টননামা ব্যতীত ওয়ারিশমূলে নামজারি নামজারী করেন, যা পরে সমস্যা তৈরী করে। এ ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড বণ্টননামা থাকা অতি জরুরী।
রামু ভূমি অফিসের রেকর্ড রুম সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টধারী ফাইল গোছালো ভাবে রাখা হয়েছে যাতে ফাইলগুলো সহজে পাওয়া যায় এবং রেকর্ড রুম সহ পুরো ভূমি অফিস সিসি ক‍্যামরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

রামু উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো কিরিটী রঞ্জন চাকমা জানান, জনগণকে সঠিক ভূমি সেবা দেয়ার জন্য আমরা সংযুক্ত কাগজপত্র পুঙখানুপুঙখ ভাবে যাচাও বাছাই করার পাশাপাশি সরেজমিন তদন্ত করে থাকি। সরেজমিন তদন্তে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়, যা ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে কার্যকর।
রামু উপজেলার ইউনিয়ন তহশীলদার মোহাম্মদ সাহেদ জানান, কক্সবাজার জেলার মধ্যে রামু উপজেলায় সর্বোচ্চ মুজিববর্ষের ঘর প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, সরকারের খাস জমির অবৈধ দখলদারকে উৎচ্ছেদ করে অসহায় ও গৃহহীনদের জমি ও ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়।
রামুর সচেতন মহল জানান, রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিরুপম মজুমদার, কানুননো কিরিটী রঞ্জন চাকমা, ইউনিয়ন তহশিলদার মোহাম্মদ সাহেদ সহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে রামু উপজেলায় গৃহহীনদের জমি ও ঘর দেয়া এবং মুজিব বর্ষের ঘরগুলো পেয়ে চিরকালের জন‍্য স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই।