মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং একই আদালতের আওতাধীন সকল আদালতে ই-কস্টলিস্ট অর্থাৎ অনলাইনে দৈনিক কার্যতালিকা চালু করা হয়েছে। একই সময়ে কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও একই আদালতের আওতাধীন অন্যান্য সকল আদালতে ই-কজলিস্ট চালু করা হয়। ফলে কক্সবাজার জেলা পুরো বিচার বিভাগ ই-কজলিস্টের আওতায় এসেছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে ই-কজলিস্ট চালু করা হয় বলে জানিয়েছেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়রা সহকারী মাহমুদুল হাসান নোমান। তিনি আরো জানান, তারও প্রায় এক সপ্তাহ আগে থেকে পরীক্ষামূলকভাবে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও একই আদালতের আওতাধীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ, সহকারী জজ এর আদালত সমুহে ই-কজলিস্ট চালু করা হয়। তবে গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে চূড়ান্তভাবে ই-কজলিস্ট চালু করা হয়েছে বলে জানান, মাহমুদুল হাসান নোমান।
এছাড়া কক্সবাজারের তিনটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেও একই সময় থেকে ই-কজলিস্ট চালু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর জ্যেষ্ঠ বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শামীম।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সেরেস্তা সহকারী মোহাম্মদ ইমরান হোসেন জানান, ‘সকল বিচারিক সেবা এক ঠিকনায়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে গুগুল এ “আমার আদালত” শিরোনামে একটি অ্যাপ চালু করা হয়েছে। গুগুল থেকে আমার আদালত এ্যাপ সার্চ করে যে কেউ অতি সহজে মামলার বিগত ধার্য তারিখের ফলাফল, সংক্ষিপ্ত আদেশ, পরবর্তী ধার্য তারিখে করনীয় কি, কি কার্যক্রমের জন্য মামলাটি রয়েছে, মামলার পরবর্তী স্টেপ কি নিতে হবে ইত্যাদি জানতে পারবেন।
একই আদালতের আপীল সহকারী মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, ই-কজলিস্ট ছাড়াও “আমার আদালত” এ্যাপ এ গিয়ে বিচার বিভাগ ও বিচার সংক্রান্ত আদালত প্রশাসন, আইনজীবী, নাগরিকদের আরো প্রয়োজনীয় অনেক তথ্য সহজে জানার অবারিত সুযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারের উখিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী কাউসার হোসেন বলেন, মামলার আপডেট কজলিস্ট (দৈনিক কার্যতালিকা) ডেইলি অনলাইনে দেওয়ার পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার্থে হার্ডকপি অর্থাৎ কজলিস্ট রেজিস্ট্রারও আগের মতো রাখা হয়েছে। যা থেকে অতি সহজে আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী, বিচারপ্রার্থী, সংশ্লিষ্টরা নিজ নিজ মামলার তথ্য সংগ্রহ ও করণীয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
উখিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের সেরেস্তাদার অনন্ত মোহন দে জানান, E-Causelist Management System (ECMS) পরিচিতি ও পরিচালনা বিষয়ে কক্সবাজার বিচার বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, বেঞ্চ সহকারী, স্টেনোগ্রাফার, স্টেনো টাইপিস্ট সহ সহায়ক কর্মচারীদের এক ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণ গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটানা ৪ দিন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসপায়ার টু ইনোভেট (এ টু আই) প্রকল্পের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখার উদ্যোগে এ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে উখিয়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মৈত্রী ভট্টাচার্য মডারেটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টরা সকলে ই-কজলিস্টের বিষয়ে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছেন বলে জানান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা প্রথম আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসেন।
প্রতিদিন আদালতের ই-কজলিস্ট তৈরিতে এবং আদালতের সহায়ক কার্য পরিচালনায় ৪ দিন ব্যাপী নেওয়া এ গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ অনেক সহায়ক হয়েছে বলে জানান, কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বেঞ্চ সহকারী মফিজুর রহমান। এতে বিচার প্রার্থীদের সেবা দেওয়া আরো সহজ, সাবলীল ও গতীশীল হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অবকাঠামোগত সমস্যা, জনবল স্বল্পতা, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সংকট সহ অনেক সমস্যা বিরাজমান থাকা সত্বেও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির সকল আদালতে ই-কজলিস্ট চালু করা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল। এ উদ্যোগ কক্সবাজার বিচার বিভাগকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
ই-কজলিস্ট চালু করার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, হাতের লেখা কজলিস্ট থেকে ই-কজলিস্ট চালু একটা যুগান্তকারী বিষয়। স্মার্ট অধ্যায়ের সূচনা। বিচার ব্যবস্থায় নতুনত্ব। অ্যাডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, ই-কজলিস্টের মাধ্যমে আইনজীবী, আইনজীবী সহকারী, বিচারপ্রার্থী সহ সংশ্লিষ্ট সকলে সহজে মামলার অগ্রগতি সহ আপডেট সকল তথ্য জানতে পারবেন।