নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
বিভিন্ন উপায়ে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। তাদের কেউ সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। আবার কেউ বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে বাংলাদেশিদের সঙ্গে মিশে গিয়ে কৌশলে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকটি এনজিও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মানবিক সহায়তা পেলেও নিজেদের মতো করে স্বাধীনভাবে চলার চিন্তায় অনেকে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে আরেক ধরনের নতুন সংকট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সীমানায় কাটা তারের বেড়া থাকলেও তারা বনজঙ্গলসহ বিভিন্ন চোরাপথ দিয়ে সহজে বের হয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা।
সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু রোহিঙ্গা পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা এখন কৌশল পাল্টিয়ে দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে উড়াল দিচ্ছে বিদেশে। রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প থেকে বের করে বিদেশে পাচার করতে গড়ে উঠেছে ক্যাম্পভিত্তিক দালাল চক্র। তাদের পিছনে রয়েছে বিদেশি অবস্থানরত দালাল চক্র।
সূত্র জানায়, সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টাকালে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের পৃথক ২১টি অভিযানে গত দুই বছরে ছয়শত রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৬ জুন কক্সবাজার শহরের লিংকরোড থেকে ১৮ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। এর আগে ৩০ মে সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে মালয়েশিয়া পাড়ি দেওয়ার সময় কোস্টগার্ড দুই দালালসহ ৫৮ জন আটক হয়। তারও আগে ২০টি অভিযানে ৫১৭ রোহিঙ্গাকে আটক করে ক্যাম্পে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে ৩২ দালালকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুধু সাগর পথে রোহিঙ্গারা পালানোর চেষ্টা করছে না, তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বৈধভাবে বিদেশ পাড়ি দেওয়ারও চেষ্টা করছে। গত ১০ মে রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে পালানোর সময় ২৩ জন রোহিঙ্গা ধরা পড়ে। এছাড়া, দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাসপোর্ট করতে গিয়ে আরও অর্ধশত রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে।
রোহিঙ্গা মেয়েরা প্রথমে কিছুদিন স্থানীয়দের সঙ্গে বসবাস করে। পরে তারা স্থানীয় ভাষা রপ্ত করে, স্থানীয়দের মতো ড্রেস পরে। আচার-আচরণ সবকিছু স্থানীয়দের মতো শিখে ফেলে। এভাবে নানা কৌশলে দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশে যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গারা। এদিকে দালালচক্র রোহিঙ্গা নারীদের মালয়েশিয়া সহ ভিবিন্ন দেশে নিয়ে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীদের বিভিন্ন সময়ে বিদেশে পাচার করা দালালচক্রের গডফাদার মোহাম্মদ জুবায়ের, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ২-ইস্ট ব্লক এ-২ এর বাসিন্দা সিরাজুল হক ও জাহানারা বেগম এর মেয়ে তসমিন আরা এফসিন নাম্বার ৪০১৩৫৪ কৌশলে নাম ঠিকানা পরিবর্তন করেছে। এখন তার নাম সিমরান হোসেন লোপা, পিতা খলিলুর রহমান, মাতা মাজেদা বেগম। ঠিকানা- মুকিল্লা, ওয়ার্ড নং ৫ সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী। পাসপোর্ট নং-বিএফ-০১২০৫১৩। এইভাবে মহিলাটির ভাই ও ছোট বাচ্চার জন্যও অবৈধভাবে পাসপোর্ট তৈরি করার খবর মিলেছে। বর্তমানে তারা দালাল জুবায়ের এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ক্যাম্প ছেড়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিবেশীরা।
এবিষয়ে মহিলাটির ভাই আজিজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বলেন, তারা কোথায় আছে জানিনা। তসমিন আরার স্বামী আগে থেকে সৌদি আরবে বসাবাসরত। বর্তমানে সে অন্য আরেকজন দালালের সাথে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে দালালের মাধ্যমে মালেশিয়া চলে যেতে গোপনে ক্যাম্প ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তি জানান, মহিলাটিসহ তিনজন ব্যক্তি দালাল জুবায়ের এর মাধ্যমে মালেশিয়া যাওয়ার সব সহযোগিতা করে দেয় মেয়ের ভাই আজিজ।
এবিষয়ে শরণার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসান কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, নানা কৌশলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, সত্য। রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প থেকে বের হতে না পারে এ জন্য সাধ্যমতো প্রচেষ্টা রয়েছে।