ইব্রাহিম খলিল মামুন :

মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা কক্সবাজার-৪ (টেকনাফ-উখিয়া) আসনে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে হঠাৎ আলোচনায় এসেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। বর্তমানে তিনি বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। বিদেশে অবস্থানরত শফিউলের পক্ষ থেকে তাঁর ভাই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। তাঁকেই বদির শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আলোচনায় রয়েছেন বদির শ্যালক উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। তিনি রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা তিনবারের চেয়ারম্যান। এবার তিনিও দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীর কাছে জাহাঙ্গীর সফল জনপ্রতিনিধি ও দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত।

মাদক চোরাচালান ও রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের কারণে এ আসন গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশ-বিদেশে পরিচিত। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে বদি এমপি নির্বাচিত হন। তবে নানা কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। পরে তাঁর স্ত্রী শাহীনা আক্তার নৌকা প্রতীকে ওই আসন থেকে নির্বাচিত হন।

বদি বলেন, ‘উখিয়া ও টেকনাফে আমার মতো জনপ্রিয় ব্যক্তি দলে নেই।’ এবার দলীয় মনোনয়ন তিনি পাবেন দাবি করে বলেন, ‘আমি এলাকার মানুষকে চাল, ডাল, তেলসহ নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছি এবং এলাকার উন্নয়ন করেছি। অনেকেই আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দলের মনোনয়ন চাচ্ছেন।’

বদির পাশাপাশি তাঁর সহধর্মিণী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার, এমপির চাচা জাফর আলম চৌধুরী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি রাজা শাহ আলম, জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুদ্দিন খালেদ, দুলাল মল্লিক, সোনা আলী, মনোয়ারা মুন্নী চৌধুরীও দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।

শফিউলের ভাই অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, ‘ভাইয়ের কথা মতো দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। আশা করি, উখিয়া-টেকনাফের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে তাঁকেই মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ।’

দলীয় নেতাকর্মী জানান, এ আসনে বদি অথবা তাঁর শ্যালক জাহাঙ্গীরের বাইরে কারও নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কারণ নানা বিতর্ক থাকলেও বদি সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। একইভাবে জাহাঙ্গীরও টানা ১৫ বছর জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত শফিউলকে মনোনয়ন দিলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সব আসনেই একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছে। দলের মনোনয়ন বোর্ড যাঁকে মনোনয়ন দেবে, সবাই তাঁর পক্ষেই কাজ করবে। সবার আমলনামা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে।’

জানা যায়, আশির দশকে উখিয়া-টেকনাফের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক ছিলেন বদির বাবা এজাহার মিয়া কোম্পানি। তাঁর রাজনীতির শুরু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। পরে এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বিজয়ী হন।

বদির বিরুদ্ধে লড়বেন তাঁর ‘পুত্র’ ইসহাক

বদির বিরুদ্ধে লড়তে চান টেকনাফের যুবক মোহাম্মদ ইসহাক (২৯)। তাঁর দাবি, বদির সন্তান তিনি। সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে তিনি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। এ জন্য মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছেন তিনি।

সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করতে বদির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সহকারী জজ আদালতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে মামলা করেন ইসহাক। এখনও তার নিষ্পত্তি হয়নি। ইসহাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আবদুর রহমান বদি আমার জন্মদাতা বাবা। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তিনি আমাকে গাড়ি-বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অনেকবার। পারিবারিকভাবে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সম্মানহানির অজুহাতে তিনি আমাকে সন্তানের স্বীকৃতি দিতে নারাজ।’

স্থানীয়রা জানান, ইসহাক যে বদির সন্তান, তা তাদের পরিবারের লোকজনসহ এলাকার সবাই জানেন। ইসহাকের চেহারা, শারীরিক গঠন হুবহু বদির মতো। তবে লোকলজ্জার ভয়ে বদি সন্তানের স্বীকৃতি দিতে পারছেন না। বদি বলেছেন, ইসহাক তাঁর সন্তান নয়। আদালতে মামলা চলছে, সেখানে সবকিছু প্রমাণ হবে।

– সমকাল