বার্তা পরিবেশক:
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো: আশরাফুল কামাল বলেছেন, প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা মামলাজট নিরসন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এজন্য আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে। সেই বিকল্প হতে পারে একমাত্র মেডিয়েশন বা মধ্যস্থতা।
বৃহস্পতিবার (৩০নভেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিচারক-আইনজীবীদের মেডিয়েশন বিষয়ক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস) এর উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ও কক্সবাজার জেলার বিচার বিভাগের সমন্বয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল বলেন, কোন নতুন মামলা গ্রহণ না করে বর্তমানে বিচার বিভাগে যে মামলার পাহাড় জমে আছে সেগুলো নিষ্পত্তি করতেই ২৫/৩০ বছর লেগে যাবে। প্রচলিত বিচার মামলাজট নিরসন ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আবার আরবিট্রেশনেও বিরোধ বা মামলা নিষ্পত্তি করতে ২/৩ বছর লেগে যায়। আরবিট্রেশনে খরচ বেশি। একমাত্র মেডিয়েশনের মাধ্যমে কম সময়ে, কম খরচে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। তাই বিচার ব্যবস্থায় মেডিয়েশনের ব্যাপক প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। বিচার ব্যবস্থাকে নতুন রিফর্ম করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব ব্রিটিশ আইনে এখনও বিচার চলছে এটা ভাবতে অবাক লাগে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব দ্রুত মেডিয়েশন আইন করুন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে মেডিয়েশনের জন্য আলাদা আইন করা হয়েছে। মেডিয়েশন পদ্ধতি প্রয়োগ করে পৃথিবীর অনেক দেশ মামলাজট নিরসন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিচারপতি আশরাফুল কামাল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট কয়েকটি সার্কুলারের মাধ্যমে মেডিয়েশন প্রয়োগ করার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টে মেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। বিচারক-আইনজীবী মিলে এই মেডিয়েশন পদ্ধতিকে এগিয়ে নিতে হবে।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিমসের চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস এন গোস্বামী। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. নূরে আলম, কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মোঃ আবু হান্নান, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিশাত সুলতানা, সুপ্রীম কোর্টের সহকারী এ্যটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আনিচ উল মাওয়া আরজু, জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ কামরুল হাসান, সিনিয়র সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আখতার উদ্দিন হেলালী প্রমুখ। অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, ভারতের গুজরাট ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অপূর্বা প্যাটেল, বিমসের মধ্য প্রাচ্য বিষয়ক পরিচালক ইউসরা আইও হাসুনা।
অনুষ্ঠানে মডারেটর হিসেবে দায়িত্বপালন করেন অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়েটর ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নওশাদ ইফতেখার।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ল’টাইমসের পক্ষ থেকে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতিকে দুই সেট আইনের বই উপহার দেওয়া হয়; সমিতির পক্ষে সভাপতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম এবং পাঠাগার ও তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহীন উক্ত উপহার প্রধান অতিথির নিকট থেকে গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠান সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিলেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিশাত সুলতানা, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নওশাদ ইফতেখার, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিষ্টার এস এম আবুল আলা সিদ্দিকী, অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়েটর অ্যাডভোকেট আফসানা বেগম, অ্যাক্রিডিটেড মেডিয়েটর তন্ময় রহমান শান্তা, অ্যাডভোকেট জুবায়ের খালেদ ও অ্যাডভোকেট উজ্জ্বল দাশ। উক্ত অনুষ্ঠানে কক্সবাজার বিচার বিভাগে নিয়োজিত অন্যান্য আরও বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবীবৃন্দ ও বিমসের দায়িত্বশীল উপস্থিত ছিলেন।