আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস ফোর্সের সাবেক প্রধান কাশেম সোলাইমানির চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জোড়া বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এই বিস্ফোরণের ঘটনায় কারা জড়িত সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কারভাবে কোনও তথ্য জানায়নি ইরান। তিবে মধ্যপ্রাচ্যে চলমান হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের মাঝে ইরানে প্রাণঘাতী এই হামলায় ইসরায়েল জড়িত থাকতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক হাসান আহমেদিয়ান কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, কেরমানে জেনারেল কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থলের কাছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর ইরানে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, কারা এই হামলা চালিয়েছে?
তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি অবশ্যই এই হামলা যারা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, কারা এটা করেছে?
‘‘অতীতে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বিশালসংখ্যক বেসামরিক মানুষকে হত্যার ইচ্ছা দেখিয়েছে। ইসরায়েল হয়তো ইরানের বিরুদ্ধে উত্তেজনা বাড়াতে চায়, যাতে তেহরান এমন কিছু করতে বাধ্য হয়, যা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে (সংঘাতে) টেনে আনবে। এগুলো সবই সম্ভাবনা।’’
• মধ্যপ্রাচ্যে ‘‘যুদ্ধের মেঘ’’
আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, কয়েক দিনের আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির পর মধ্যপ্রাচ্যে এখন ‘‘যুদ্ধের কালো মেঘ’’ জড়ো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে এখন যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। এখানে অনেক বেশি হিংস্রতা, উত্তেজনা, অনেক দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। লোহিত সাগর থেকে শুরু করে ইরান-ইরাকের সীমান্ত, ইয়েমেন উপসাগর পর্যন্ত অর্থাৎ এই অঞ্চলের সর্বত্রই এখন আরও উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।’’
বুধবার ইরানের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় কেরমান শহরে কাশেম সোলাইমানির সমাধিস্থল থেকে কয়েকশ মিটার দূরের এই বিস্ফোরণে ১০৩ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় কুদস ফোর্সের শীর্ষ কমান্ডার কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। বুধবার ইরানের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, কাশেম সোলাইমানির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শত শত মানুষ তার সমাধিস্থলের দিকে যাওয়ার সময় জোড়া বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে ১৭১ জন আহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কেরমানের সাহেব আল-জামান মসজিদের কাছে সোলাইমানির কবর থেকে কয়েকশ মিটার দূরে এই বিস্ফোরণ ঘটে।
কেরমানের ডেপুটি গভর্নর বিস্ফোরণের এই ঘটনাকে ‘‘সন্ত্রাসী হামলা’’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা সন্ত্রাসী হামলা।’’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিস্ফোরণের একাধিক ভিডিওতে বেশ কিছু মরদেহ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।