হ্যাপী করিম, মহেশখালী:
বছর দুয়েক আগেও সোনাদিয়া এলাকায় গেলে চোখে পড়ত বিশাল সবুজ বন। সেই প্যারাবন নিধন করে এখন গড়ে উঠছে একের পর এক চিংড়ি ঘের বিষয়টি অজানা নয় পুলিশ প্রশাসন, পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের।
মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া বাংলাদেশ অর্থ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’র (বেজা) জায়গা অবৈধভাবে দখল করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এতে ছোট হয়ে আসছে জেলার ঐতিহ্যবাহী সাগরদ্বীপ সোনাদিয়া। ইতিমধ্যে সেখানে ম্যানগ্রোভ প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের ও লবণ মাঠ করা হয়েছে। কোটি কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পরিবেশবাদী নেতারা।
জানা যায়, সোনাদিয়া দ্বীপের পূর্ব পাড়া থেকে পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৭ শ জন নারী পুরুষের বসবাস, মোট ৮৫৪ ভোটার, মৌজা সীট সংখ্যা ৬টি জে.এল নং-১৯ খাস খতিয়ানের জমির পরিমাণ ২৯৬২.২২ একর, ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পরিমাণ ৩.১৫ একর, চরভরাট-বন বিভাগের জমির পরিমাণ ১০০০,০০ একর প্রাকৃতিক বনায়ন এতে ২,৭১২ একর জমি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমির পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী এ দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। দীর্ঘমেয়াদি লিজ দলিলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) কে দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এই দলিল সম্পাদন করে দেন জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ সোনাদিয়া ঘটিভাঙ্গা সাথে লাগানো বেজা’র জমি। অধিগ্রহণকৃত বেজার জমিতে ম্যানগ্রোভ প্যারাবন নিধন করে চিংড়িঘের ও লবণ মাঠ নির্মাণ করে চলেছেন কতিপয় ভূমিদস্যু সিন্ডিকেট।
জানতে চাইলে অর্থনৈতিক জোনের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তন্বয় হাসান বলেন, এটি সরাকারের উন্নয়ন প্রকল্পের জায়গা। এই জমি দখলের ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
কুতুবজোম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ কামাল অভিযোগ করে বলেন, জমি দখলের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ করে কোন ফল পায়নি। অজ্ঞাত কারণে তাঁরা নিরভ ভূমিকা পালন করছেন। ঐতিহ্যবাহী এই সোনাদিয়া দ্বীপ সরকারি জমি দীর্ঘদিন থেকে দখল করে মানুষ অবৈধভাবে চিংড়িঘের লবণের মাঠ ও বিভিন্ন পাকা স্থাপনা ঘরবাড়ি তৈরি করেছে।
মহেশখালী, সোনাদিয়া ও কুতুবদিয়া মিলিয়ে কক্সবাজার–২ আসনের সরকারদলীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক। সোনাদিয়াসহ এলাকাজুড়ে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ সম্পর্কে মুঠোফোনে প্রতিনিধি’কে তিনি বলেন, এসব থেকে এলাকার মানুষেরও উন্নতি হতে হবে; পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ করা যাবে না। কথা ছিল, প্রকল্পগুলোতে এলাকার মানুষেরা চাকরি পাবেন। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, দক্ষতা না থাকার যুক্তিতে অনেককে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। সাংসদের আরেকটি বড় দাবি, এত প্রকল্প করতে গিয়ে এলাকার পরিবেশ–প্রকৃতির যেন বড় ধরনের ক্ষতি না হয়।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীকি মারমা বলেন, অর্থনৈতিক জোনের হস্তান্তরকৃত জমিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার কথা আমরা বেজা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আর সরকারি প্যারাবন সম্পত্তি কেউ দখল করতে পারে না। শিগগিরই আমরা সরেজমিনে পরিদর্শন করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।