ইমাম খাইর, সিবিএন:
এবার জিআই পণ্য হচ্ছে কক্সবাজারের লবণ। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিসিককে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বলেন, জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের একটা হিড়িক পড়েছে। এই সময় কক্সবাজারের লবণকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। বিষয়টি ইতোমধ্যে আঞ্চলিক দাবি হিসেবে দেখা দিয়েছে। লবণকে ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা দিলে চাষিরা উদ্বুদ্ধ হবে। কক্সবাজারের মান বাড়বে।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লবণ মিলসমূহের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কিত অর্ধবার্ষিক পর্যালোচনা সভার প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক (গ্রেড-১) এর উদ্দেশ্যে আশেক উল্লাহ রফিক এই নির্দেশনা দেন।
যৌক্তিকতা তুলে ধরে এমপি আশেক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজেই টাঙাইলের শাড়ি পরে সংসদে গিয়েছেন। এভাবেই টাঙাইলের শাড়িকে ব্রান্ডিং করেছেন। সংসদের সেশনে যোগ দিয়েছেন। কক্সবাজারের লবণশিল্পকেও সেভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের একটি জনসভায় বলেছিলেন, ‘আমি কক্সবাজারের নুন খাই, কক্সবাজারের গুণ গাই। এরপর তো আর কথা থাকতে পারে ন। লবণ কেন আমদানি করবো? প্রয়োজনে রপ্তানি হবে। সেই সক্ষমতা আছে আমাদের।’ এ সময় মহেশখালীর পানের কথাও তুলে ধরেন আশেক উল্লাহ রফিক এমপি।
সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের বক্তব্যে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক।
তিনি বলেন, সারাদেশের লবণ উৎপাদনের সিংহ ভাগই কক্সবাজারের। লবণকে ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি মানে কক্সবাজারকে স্বীকৃতি, দেশের উন্নতি। জিআই পণ্য মানে ভৌগলিক নির্দেশক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করে এই লক্ষ্যে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করবো। তিনি আরো বলেন, কক্সবাজারকে কিভাবে আরো এগিয়ে নেওয়া যায়, সেই দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করছে সরকার।
বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, যে কোন শিল্প টিকে থাকতে হলে পৃথিবীর সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হবে। এডভান্স টেকনোলজি দরকার।
লবণশিল্পসহ কক্সবাজারের যে কোন বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিসিকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক।
মিল মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কক্সবাজার শুধু সমুদ্রসৈকতের জন্য নয়, দেশের অর্থনীতিতে আপনারা ভূমিকা রাখছেন। আপনাদের সহযোগিতা করা বিসিক পরিবারের মূল কাজের একটি অংশ। লবণ আইনের সঙ্গে যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, সেটি মাথায় রেখে সব ধরণের সহায়তা দেওয়া হবে।
নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় বিএফআরআইয়ের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বিসিক কক্সবাজার জেলা অফিস।
বিসিক চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিসিকের জিএম (এক্সটেনশন) অখিল রঞ্জন তরফদার, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো: শফিকুর রহমান, নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর সাইকা সিরাজ ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের পরিচালক ফরিদ আহমেদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিসিকের সম্প্রসারণ বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক ও লবণসেল প্রধান সরওয়ার হোসেন।
মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে লবণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করেন নিউট্রিশন ইন্টারন্যাশনালের কক্সবাজার জোনাল কোঅর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার মো. রুহুল আমিন।
তিনি তথ্য দেন, কক্সবাজার জোনে নিবন্ধিত মিলের সংখ্যা ৮৩টি। সেখানে ভোজ্য ৫৪ ও শিল্প ২৯টি। আপগ্রেডকৃত মিল ৪৮। বর্তমানে চালু ভোজ্য মিলের পরিমাণ ২৬টি। তাতে ২২টি সনাতন এবং ৪টি মেকানিক্যাল। ২৭টি লবণ মিলে ল্যাবরেটরি রয়েছে। সেখানে সচল রয়েছে ১৭টি।
অনুষ্ঠানে অভিযোগ ওঠে, প্রতিলবণ মৌসুমে রাতারাতি মিলের সংখ্যা বেড়ে যায়। আসাধু একটি চক্র লবণ আমদানি করতে তৎপর হয়ে উঠে। তাদের কারণে প্রকৃত মিলাররা ক্ষতিগ্রস্ত।
লবণ মিল মালিক/চাষিদের বক্তব্য:
বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে লবণ উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাস্তাঘাট উন্নত না থাকার কারণে পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটায়। মিল মালিকরা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। লবণের সঠিক মূল্য নির্ধারণ না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগিদের হাতে নিয়ন্ত্রিত। লবণ মাঠে যথেচ্ছা পলিথিনের ব্যবহার করছে চাষিরা। তাতে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
চিন-পাকিস্তানে ভ্যাকুয়াম সল্ট নাই। আমাদের দেশে গুটি কয়েক ভ্যাকুয়াম মিলের কারণে জাতীয়ভাবে লবণের ক্ষতি হচ্ছে কিনা, ভেবে দেখা দরকার। সাদা ধবধবে লবণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিসিকের মুন্সিগঞ্জ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের প্রকল্প পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, কক্সবাজারের ডিজিএম মো. জাফর ইকবাল ভুইয়া, এজিএম রিদুয়ানুর রশীদসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।