সম্মানিত মানবিক সহকর্মীবৃন্দ,
পাল্স পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

আজকের (১৯ মার্চ) মতবিনিময় সভায় আপনাদের আন্তরিক উপস্থিতি আমাদের সম্মানিত করেছে।

আমি কৃতজ্ঞতা জানাই জার্মান সরকার, মাল্টেজার ইন্টারন্যাশনাল এবং বাংলাদেশ সহ আটটি দেশের “টুগেদার প্লাট ফরম” এর সকল লোকাল হিউম্যানেটেরিয়ান পার্টনারদের।

আমরা যারা স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের ছোট ছোট সংগঠনগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদে সীমিত সক্ষমতা নিয়ে, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, দুর্যোগকালীন সময়ে মানবিক বিপর্যয়ে সহায়তা প্রদান/সাড়াদানে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা অনেকেই আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা/মধ্যস্থতাকারীদের সাথে পার্টনারশিপ করার সময় তাদেরও কি দক্ষতা-স্বচ্ছতা আছে? ক্ষতিগ্রস্ত গোষ্ঠীর প্রতি কি জবাবদিহিতা আছে? তাদের আন্তর্জাতিকভাবে কি কি প্রতিশ্রুতি আছে? কিংবা প্রকল্প বাস্তবায়নে সৃষ্ট ঝুঁকির শরীকানায় সহযোগিতা করবে কিনা? মানবিক সহায়তা প্রদানে স্থানীয় নেতৃত্ব সৃষ্টিতে বিনিয়োগ করবে কিনা? …… এসব বিষয় গুলো আমরা অনেকে আমলে নেই না!

আজকের আলোচনায়/মতবিনিময়ে সকলে মিলে এসব বিষয়গুলো নিয়ে কিছু জানার চেষ্টা করা এবং আমাদের পরবর্তী করণীয় কি হতে পারে, সেই বিষয়ে একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া। ইতোমধ্যে পাল্স কর্তৃক সরবরাহকৃত “ডকুমেন্টস কিট” এ গ্রান্ড-বার্গেনিং প্রতিশ্রুতি এবং লোকালাইজেশন সম্পর্কিত কিছু সংগৃহীত রেফারেন্স কাগজপত্র দেয়া হয়েছে। আশাকরি এসব ডকুমেন্টস আমাদের পুনরায় কিছুটা হলেও বর্তমান “লোকালাইজেশন” কর্মসূচি এবং আমাদের করণীয় বিষয়ে চিন্তার পরিধিকে আরও বিকশিত করবে।

প্রিন্সিপাল অফ পার্টনারশিপ, চার্টার ফর চেঞ্জ নীতিমালা, ২০১৬ সালে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হিউম্যানিটেরিয়ান সামিটে গ্রান্ড বার্গেনিং প্রতিশ্রুতি এবং ২০১৬ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত “নিউ ওয়ে অফ ওয়ার্কিং” সিদ্ধান্তসমূহ ‘লোকালাইজেশন’ এর অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।

যেহেতু “গ্রান্ড বার্গেনিং” একটি বিভিন্ন রাষ্ট্র, জাতিসংঘের কিছু অঙ্গসংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা সহ মোট ৬৭ প্রতিনিধি কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি ৫১টি প্রতিশ্রুতি সম্বলিত দলিল। যার সময়সীমা বিভিন্ন সময় কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। যা বর্তমানে গ্রান্ড-বার্গেনিং-৩.০।

আমি মনে করি, এই সুযোগটা আমাদের হাতছাড়া করা যাবে না। গ্রান্ড-বার্গেনিং প্রতিশ্রুতি C4C নীতিমালায় অনুস্বাক্ষরকারী এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সিভিল সোসাইটি, স্থানীয় সরকার এর মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে নিজ নিজ আদি-দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, সংগঠনের সক্ষমতাকে আরো যুগোপযোগী কিভাবে করা যায়, যাতে পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আমরা নিজেরাই স্থানীয়ভাবে মানবিক বিপর্যয়কালে সময়মত দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করতে পারি। আজকের মতবিনিময়ের মাধ্যমে দাতা সংস্থা সমূহের প্রতিশ্রুতি বিবেচনায় নিয়ে, সকল অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে একটি স্থানীয় “লোকালাইজেশন এডভোকেসি চাহিদা ক্যানভাস” তৈরি করা। যাতে আমরা সুনির্দিষ্ট সময়ে অনুস্বাক্ষরকারী দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর প্রতিনিধিদের সাথে বিষয় ভিত্তিক আলোচনা, প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে, ন্যায্য ও মর্যাদাপূর্ণ অংশীদারী, প্রকল্পের অপ্রত্যক্ষ ব্যয় নিশ্চয়তা এবং মানসম্পন্ন তহবিল সংগ্রহের মধ্যে “লোকালাইজেশন” কর্মসূচিকে আরো বেগবান করতে পারি। ফলশ্রুতিতে দেশে বিভিন্ন মানবিক বিপযয় এবং দুর্যোগকালীন সময়ে দক্ষতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য স্থানীয়ভাবে টেকসই মানবিক সাড়াদান গোষ্ঠী/সংগঠন সৃষ্টি হবে বলে আমার বিশ্বাস। পাশাপাশি দাতা সংস্থা/অনুদান সরবরাহকারী দেশ সমূহের মানবিক অনুদানের সিংহভাগ মানবিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের কাছে সরাসরি পৌঁছাবে।

এই আয়োজনে স্থানীয় সংগঠন হিসেবে নানান সীমাবদ্ধতার মাঝে আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।

অনেক কৃতজ্ঞতা। নিরন্তর শুভ কামনা।

স্থানীয় নেতৃত্ব দীর্ঘজীবী হোক।

আবু মোরশেদ চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক
পালস, কক্সবাজার।