ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজারে “সামাজিক কু-প্রথা এবং জেন্ডার বিষয়ক ধারণা পরিবর্তনে আমাদের করণীয়” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও এফআইভিডিবি এর যৌথ আয়োজনে ২০ মার্চ বিকালে শহরের কলাতলীর একটি আবাসিক হোটেলের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ সামছুদ-দ্দৌজা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে কক্সবাজার জেলায় জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য বেশি রয়েছে, এই জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং সামাজিক কু প্রথা প্রতিরোধে জাতি, ধর্ম, বর্ণ পেশা নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক কু-প্রথার উদাহরণ দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন, রমজান মাসে মেয়ের বাবার বাড়ি থেকে ইফতার পাঠানো, বিবাহে যৌতুক দেওয়া, বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়ের পক্ষকে বেশী খরচের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ ইত্যাদি।
এছাড়াও তিনি বক্তব্যে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, বিবাহ পরবর্তী পারিবারিক নির্যাতন এবং বিচ্ছেদের প্রসঙ্গে বলেছেন। এসকল সামাজিক কুপ্রথা প্রতিরোধে, জেন্ডার সমতা আনয়নে এবং সমাজের নারীদের জীবনকে আরও সহজতর করতে সকল পর্যায় থেকে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে তিনি উপস্থিত সকলকে আহব্বান জানান।
তিনি সকল মানুষকে তার পারিবারিক ও সামাজিকভাবে পারস্পরিক সম্মান এবং সামাজিক কাঠামোর দিকে নজর দিতে বলেছেন। তাছাড়া তিনি ধর্মীয় অনুশাসন জেন্ডার বৈষম্য প্রতিরোধে প্রভাব বিস্তার করবে বলে মনে করেন এবং এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের কাজ করার কথা বলেন। তিনি পর্যটন নগরী কক্সবাজারের নারীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিশোর গ্যাং ঠেকাতে প্রশাসনকে আরো সোচ্ছার ভূমিকা পালনের অনুরোধ জানান।
প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এসবিসি প্রকল্প) এস এম তাহেরুজ্জামানের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেকনাফ ফিল্ড অফিসে কর্মরত প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোঃ রমজান আলী এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ম্যানেজার সামিউল হক চৌধুরী।
এফআইভিডিবির ট্যাকনিকাল কোরর্ডিনেটর জেম্মা রেবিরিউ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মোঃ সাহেল আহমেদ, মনিটরিং এন্ড ইভালুয়েশন কোঅর্ডিনেটর হামেদ হাসান, টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর- প্রটেকশন মোঃ শাহিনসহ সংশ্লিষ্ট উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে মোঃ রমজান আলী বলেন, গত এক শতাব্দীতে নারীরা অনেক দূর এসেছে। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, রাজনীতি এবং সামাজিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই তারা নিজেদের প্রতিভা ও যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ বাকি আছে। লিঙ্গ বৈষম্য, সহিংসতা, নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য এবং অন্যান্য সমস্যা আজও নারীদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে যাচ্ছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সামিউল হক চৌধুরী বলেন, সমাজিক কু-প্রথা ও জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল- এফআইভিডিবি মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এরই পাশাপাশি সামাজিক কু-প্রথা প্রতিরোধে সমাজের সকল স্তর থেকে কাজ করার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন ইমাম সাহেবরা তাদের মসজিদে খুতবায়, এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এ বিষয় আলোচনার মাধ্যমে জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। অনুরূপভাবে, অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় গুরুরা তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, ও প্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারেন, মিডিয়াকর্মীরা তাদের খরদার কলমে পত্র পত্রিকায় লিখে সচেতনতা তৈরী করতে পারে, আইনজীবীবৃন্দ সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য ও সহিংসতা বিষয়ে আইনি সুযোগ- সুবিধা নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং নারী ও শিশুদের বিনা খরচে আইন সহায়তা দিয়ে নারীদেরকে সহযোগীতা করতে পারে। আরো যারা প্রশাসনের সাথে যুক্ত আছেন তারা নারীদের নিরাপত্তা বাড়াতে পাশাপাশি অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে সুবিচারের ব্যবস্থা করতে পারেন। সর্বশেষ, তিনি সকল স্তরের মানুষকে নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজের পরিবার ও সমাজে সামাজিক কুপ্রথা ও জেন্ডার ভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে সচেতনতা হতে বলেন।
অতিথিদের বক্তব্য পরবর্তী বাংলাদেশের এবং কক্সবাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক কু-প্রথা এবং জেন্ডার অসমতার বর্তমান চিত্র, এবং প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ও এফআইভিডিবি CPPC প্রকল্পের কাযক্রমের কিভাবে জেন্ডার সেনসিটিভিটি ও ট্রান্সফরমেটিভ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছেন তা সম্পর্কিত পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজানটেশান প্রদর্শন করেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রজেক্ট সাপোর্ট কোঅর্ডিনেটর আহমদ উল্লাহ আল আজাদ।
Centrality of Protection in Protracted Crises (CPPC) প্রকল্পের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালায় সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ, মিডিয়া ব্যক্তিত্ত্ব, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, আইনজীবী এবং নীতি নির্ধারণী মহল বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহণ করেন।