ইসরায়েলের বিমান বাহিনী ইরানে সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যম। খবর আনাদোলুর।

ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন বলেছে, তেল আবিব ‘সীমিত প্রতিক্রিয়া’ দেখানোর পরিকল্পনা করছে, যা ইরানকে সর্বাত্মক যুদ্ধ এড়াতে সুযোগ দেবে।

কেএএন আরও বলেছে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকাকে প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হিসাবে রাখতে চায় এবং ইরানকে যুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্টে পরিণত করতে চায় না।

পরিকল্পিত ইসরায়েলি আক্রমণের প্রকৃতি সম্পর্কে বলেছে, ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া হতে পারে ইরানের অভ্যন্তরে হত্যাকাণ্ড বা একটি বিস্তৃত সাইবার আক্রমণ।

একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে কেএএন বলেছে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো হামলা চালানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রকে সে বিষয়ে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি বলেছেন, ইসরায়েল গত সপ্তাহান্তে চালানো ইরানি হামলার জবাব দেবে।

অন্যদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসরায়েলের পাল্টা যে কোনও আক্রমণকে ‘শক্তিশালী’ এবং ‘বিস্তৃত’ জবাব দিয়ে মোকাবিলা করা হবে।

এর আগে ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার পরিকল্পনা নিয়ে রবিবার রাতে তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে ইসরায়েলের পাঁচ সদস্যের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বৈঠকে হামলার বিষয়ে সবাই একমত পোষণ করেছেন। তবে কবে কীভাবে ও কী মাত্রায় হামলা চালানো হবে সে ব্যাপারে একমত হতে পারেননি মন্ত্রিসভার সদস্যরা।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছেন যে, যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা পাল্টা হামলার ব্যাপারে একমত। তবে দিনক্ষণ ও হামলার মাত্রা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়নি।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২ জানিয়েছে, প্রথম বৈঠকের পর খুব শিগগিরই এই বিষয় নিয়ে আবার বৈঠক হবে।

একাধিক হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, যখন হামলা চলছিল তখন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গান্তজ ও গাদি আইজেনকোট পাল্টা আক্রমণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট, আইডিএফ প্রধান হার্জি হালেভি এবং অন্যরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।

এদিকে আইডিএফ বলেছে, ‘পশ্চিমা নেতাদের সতর্কতা সত্ত্বেও যুদ্ধ মন্ত্রিসভা (ইরানের বিরুদ্ধে) আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক উভয় পদক্ষেপই অনুমোদন করেছে।’

ইসরায়েলি মন্ত্রী বেনি গান্তজ এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইরানের মুখোমুখি হতে আমরা একটি আঞ্চলিক জোট গড়ে তুলব। ইরানকে চূড়ান্ত মূল্য দিতে হবে এবং আমরা সঠিক উপায়ে এটি নিশ্চিত করব।’

ইরানের হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছিলেন ইরানের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ না নিতে। একই সঙ্গে তিনি নেতানিয়াহুকে তাঁর দেশের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে ‘সতর্কতার সঙ্গে ভাবারও’ পরামর্শ দেন।

প্রসঙ্গত, গত অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। তবে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক মিশনে হামলা চালিয়ে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের সাতজন কর্মকর্তা নিহত হয়, যার মধ্যে দুই উচ্চপদস্থ জেনারেল ছিল।

প্রতিক্রিয়ায় শনিবার গভীর রাতে ইসলামিক বিপ্লব গার্ড কর্পস এবং অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েল-অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইরান এই হামলা চালায়। যদিও বেশিরভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।