সোয়েব সাঈদ, রামু:
রামুতে বৌদ্ধদের স্বর্গপুরী উৎসবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন- বাংলাদেশের হাজার বছরের ধর্মীয় সম্প্রীতি যে কোন মূল্যে ধরে রাখতে হবে। কোনো একক ধর্মের মানুষই নয়, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খৃষ্টান সকল ধর্মের মানুষ এক হয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছে, তাই দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। আমাদের লালিত সম্প্রীতি নষ্টের জন্য এক শ্রেণীর মানুষ বারবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি বলেন, যারা মন্দিরে আগুন দেয়ার নেপথ্যে কাজকরে তাদেরকে নির্বাচনসহ প্রতিটি সামাজিক কাজে বয়কট করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের যে সম্প্রীতির সম্পর্ক রয়েছে সেটা যেন নষ্ট না হয়, আমরা যেন সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখি, সে ব্যাপারে সকলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের দুই পর্বের ধর্মসভায় সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞামিত্র বন বিহারের মহাপরিচালক বিজয় রক্ষিত মহাথেরো ও উখিয়া ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মপাল মহাথেরো। উদ্বোধনী ধর্মদেশনা করেন বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের অধ্যক্ষ, একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুণাশ্রী মহাথেরো।
সিনেমা হল ভেঙে তৈরি হচ্ছে মাদরাসা
সভায় ধর্মদেশনা করেন চট্টগ্রাম সারমেধ বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শীলজ্যোতি মহাথেরো, কক্সবাজারের উ-কুশল্যা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ, চকরিয়া কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাচন্দ্র মহাথেরো, রামুর কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ শীলপ্রিয় থেরো, চট্টগ্রামের এস. প্রজ্ঞামিত্র থেরো প্রমুখ ভিক্ষু সংঘ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থের। বক্তব্য রাখেন রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুসরাত জাহান মুন্নি, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ফরিদ বক্ত বাবুল। ধন্যবাদ জ্ঞাপনসহ সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন, উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা বাবুল বড়ুয়া, কল্যাণ বড়ুয়া, অনঙ্গ বড়ুয়া, তরুণ বড়ুয়া, টিটু বড়ুয়া, দয়াল বড়ুয়া, সোহেল বড়ুয়া, হীরু বড়ুয়া, বিপন বড়ুয়া, প্রজ্ঞামিত্র ভিক্ষু সমিতি, প্রজ্ঞা-সার যুব পরিষদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদযাপন পরিষদের দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে ছিল- শুক্রবার ভোরে প্রভাতফেরি সহকারে বুদ্ধ পূজা, সকালে অষ্টপরিস্কারসহ মহাসংঘদান, মহতী ধর্মসভা, ভিক্ষু সংঘের পিণ্ডদান, অতিথি ভোজন, দুপুরে স্বর্গপুরী উদ্বোধন, বিকালে স্বর্গপুরী মেলা, ধর্মালোচনা সভা, সন্ধ্যায় স্বর্গপুরী উৎসর্গ, প্রদীপ প্রজ্বলন, প্রয়াত ধর্মগুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো এবং প্রয়াত সারমিত্র মহাথরোর নির্বাণ সুখ কামনা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। রাতে অনুষ্ঠিত হয় বৌদ্ধ কীর্তন অনুষ্ঠান।
প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ শীলমিত্র থেরো জানান- রামুর স্বর্গপুরী উৎসবটি কালের সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে মূলত জীবদ্দশায় মানুষ যে কর্ম করে সেই কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন কুলে তার জন্মান্তর ঘটতে পারে এমন ধারণা দেওয়া হয়। সংসারে মানুষ জন্মমৃত্যুর গোলকধাধাঁয় পড়ে ভবচক্রে ঘুরতে ঘুরতে কখনো স্বর্গও লাভ করতে পারে। কিন্তু সেখান থেকেও নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে তাকে চ্যুত হতে হয়। নিজ নিজ কর্মগুণে বা কর্মদোষে মানুষ বিভিন্ন কুলে জন্ম গ্রহণ করছে এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকেই বিগত ৩৭ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথেরো উক্ত স্বর্গপুরী উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা নববর্ষে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার এ স্বর্গপুরী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উৎসবে বৌদ্ধদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে স্বর্গপুরী উৎসব সম্প্রীতির মহামিলন মেলায় পরিণত হয়।
এদিকে স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লী থেকে দলীয় ভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বৌদ্ধ কীর্তন সহকারে স্বর্গপুরী উৎসবে হাজার হাজার পুণ্যার্থীর অংশ গ্রহণে স্বর্গপুরী উৎসব সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিণত হয়। সম্প্রীতির এ উৎসবে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ ও সার্বিক সহযোগিতা সম্পন্ন হওয়ায় উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আরও খবর পেতে যুক্ত থাকুন CoxsbazarNEWS.com এর সাথে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।