মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
৩ কোটি ৬ লক্ষ মূল্যের এক লক্ষ ২ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট পাচারের মামলায় ৭ রোহিঙ্গাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (১৩ মে) কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এ রায় প্রদান করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামীরা হলো-কালা মিয়া ও মৃত রহিমা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ হোসেন (৪২), আবদুস সালাম ও রহিমা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোঃ হোসেন জোহার (১৯), লোকমান হাকিম ও রহিমা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোঃ জুবায়ের (২২), জাকারিয়া ও কালা বানুর পুত্র রোহিঙ্গা লাল মোহাম্মদ (২৫), আবদুর রহমান ও রশিদা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোঃ ইয়াসিন (১৯)। তারা সকলেই কক্সবাজারের টেকনাফের নয়াপাড়া মোছনী রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পের শরনার্থী। দন্ডিত অপর ২ জন হচ্ছে-টেকনাফের হ্নীলা নাইট্যং পাড়ার মৃত লাল মিয়া ও হালিমা খাতুনের পুত্র রোহিঙ্গা মোঃ বশির আহমদ (৪৫) এবং টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্ব লেদার আ: রশিদ ও আনোয়ারা বেগমের পুত্র রোহিঙ্গা মোঃ আলম (২০)। রায় ঘোষণার সময় আসামীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্র পক্ষে একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান এবং আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না, আসামীদের ডিফেন্স দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম-৪ মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটের দিকে কোস্ট গার্ডের একটি টিম এক অভিযান চালিয়ে টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের পূর্ব পাশে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশী সমুদ্র সীমায় প্রবেশ করার পর একটি ফিশিং বোটকে আটক করে। একইসাথে ফিশিং বোট থেকে উল্লেখিত ৭ জনকেও আটক করা হয়। ফিশিং বোটটি তল্লাশি করে বস্তাভর্তি ৩ কোটি ৬ লক্ষ মূল্যের এক লক্ষ ২ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় কোস্ট গার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার ইলিয়াস হোসেন মন্ডল বাদী হয়ে রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ হোসেন, রোহিঙ্গা মোঃ হোসেন জোহার, রোহিঙ্গা মোঃ জুবায়ের, রোহিঙ্গা লাল মোহাম্মদ, রোহিঙ্গা মোঃ ইয়াসিন, রোহিঙ্গা মোঃ বশির আহমদ এবং রোহিঙ্গা মোঃ আলমকে আসামী করে টেকনাফ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৭৫, তারিখ : ২৬/০৪/২০২২ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৩৭৫/২০২২ ইংরেজি (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর : ৪২৪/২০২৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায় :
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলায় ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামী পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করা হয়। ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১০ (গ) ধারা ও ৩৮ ধারায় আসামী রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ হোসেন, রোহিঙ্গা মোঃ হোসেন জোহার, রোহিঙ্গা মোঃ জুবায়ের, রোহিঙ্গা লাল মোহাম্মদ, রোহিঙ্গা মোঃ ইয়াসিন, রোহিঙ্গা মোঃ বশির আহমদ এবং রোহিঙ্গা মোঃ আলমকে দোষী সাব্যস্থ করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, একইসাথে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। রায় ঘোষণার পর সাজা পরোয়ানা মূলে আসামী আসামী রোহিঙ্গা আবদুল হামিদ হোসেন, রোহিঙ্গা মোঃ হোসেন জোহার, রোহিঙ্গা মোঃ জুবায়ের, রোহিঙ্গা লাল মোহাম্মদ, রোহিঙ্গা মোঃ ইয়াসিন, রোহিঙ্গা মোঃ বশির আহমদ এবং রোহিঙ্গা মোঃ আলমকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী তুষার ধর জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করার মাত্র এক বছর ৩ মাস ৭ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এ রায় সম্পর্কে রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোঃ রেজাউর রহমান রেজা বলেন, এ রায়ে রাষ্ট্র পক্ষ সন্তুষ্ট। এ রায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ রায় মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে সমাজে একটা ম্যাসেজ যাবে। তিনি আরো বলেন, আদালতে বিচারাধীন মাদকের মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।