মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর বাতিল হওয়া প্রার্থীতা ফেরত পেয়েছেন। মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর প্রার্থীতা ফেরত পেতে হাইকোর্টের বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ আপীল করে রীট পিটিশন দায়ের করলে আদালত শুনানি শেষে রোববার ১২ ডিসেম্বর মোহাম্মদ ইসমাইল এর বাতিল করা মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষণা করে আদেশ দেন। যার রীট পিটিশন নম্বর : ১২২৮৬/২০২১। বিশ্বস্ত সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত ২৯ নভেম্বর টেকনাফ পৌরসভার মেয়র পদে মনোনয়নপত্র বাছাই এর দিনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী মোহাম্মদ ইসমাইল এর মনোনয়নপত্রের সাথে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ না থাকায় রিটার্নিং অফিসার ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এস. এম শাহাদাত হোসেন তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। অথচ মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর মূল সনদ হারানোর বিষয়ে থানায় জিডি দায়েরের কপি, মার্কসীট, প্রবেশপত্র ও টেস্টোমোনিয়াল মনোনয়নপত্রের সাথে দাখিল করেছিলেন। পরে মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে মোহাম্মদ ইসমাইল আপীল কর্তৃপক্ষ ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ এর কাছে আপীল করে এবং মোহাম্মদ ইসমাইল সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল সনদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ সেখানেও রিটার্নিং অফিসারের আদেশ বহাল রেখে তাঁর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন। অথচ ২০১১ এবং ২০১৬ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ ইসমাইলের একইভাবে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র বৈধ রাখা হয়েছিলো। মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে মোহাম্মদ ইসমাইল হাইকোর্টে আপিল করেলে আদালত তাঁর বাতিল করা মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে রোববার এ আদেশ দেন।

হাইকোর্টে মোহাম্মদ ইসমাইল এর পক্ষে রীট পিটিশনটি শুনানী করেন-সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সম্পাদক এডভোকেট মো: সাইফুর রহমান রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এডভোকেট বিপুল বাগমার। সোমবার ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে কোনো আপীল করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। আগামী ২৬ ডিসেম্বর টেকনাফ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, রিটার্নিং অফিসার ও কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এস. এম শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, উচ্চ আদালত কর্তৃক মোহাম্মদ ইসমাইল এর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত মোহাম্মদ ইসমাইল এর আইনজীবীর ল’ইয়ার সার্টিফিকেট তিনি পেয়েছেন। তারা নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন এবং উচ্চ আদালতের আদেশের কপি প্রাপ্তি সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে রিটার্নিং অফিসার এস. এম শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন।

প্রার্থীতা ফিরে পাওয়া মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর মনোনয়নপত্রে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হিসাবে ‘মোবাইল ফোন’ প্রতীক চাওয়ায় তাকে মোবাইল ফোন প্রতীকই বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।

মোহাম্মদ ইসমাইল টেকনাফ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র এর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন।

মোহাম্মদ ইসমাইল এর মনোনয়নপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে অবৈধ ঘোষণার পর নিয়মানুযায়ী প্রতীক বরাদ্দের দিনে রিটার্নিং অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন গত ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ ইসলাম একক প্রার্থী হওয়ায় টেকনাফ পৌরসভার মেয়র পদে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষনা করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ ইসমাইল তাঁর প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে এখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

মোহাম্মদ ইসলাম টেকনাফ পৌরসভার বর্তমান মেয়র এবং কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি’র চাচা। টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার মরহুম সুলতান আহমদ এর পুত্র।

প্রসঙ্গত, টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারমধ্যে, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি’র ভাই আবদুস শুক্কুর এবং মোহাম্মদ ইসমাইল এর মনোনয়নপত্র গত ২৯ নভেম্বর বাছাই এর সময় ত্রুটি থাকায় রিটার্নিং অফিসার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। অপর মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শাহজাহান গত ৬ ডিসেম্বর তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। টেকনাফ পৌরসভা নির্বাচনে মোট ১৬ হাজার ৮৬ জন ভোটার রয়েছে।