বেড়েছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ও বাল্য বিবাহ
সাতকানিয়া প্রতিনিধি:
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী ভর্তির আসন সংখ্যা কমানোর অভিযোগে প্রতিকার প্রার্থনা করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে।গত সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) এ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা.আ.ম.ম মিনহাজুর রহমান প্রতিকার চেয়ে এ আবেদন করেন।এ ছাড়া একই পত্রের অনুলিপি দেয়া হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়।
শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিকট প্রেরণকৃত আবেদন ও এ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এ বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় চার সেকশনে পাঠদান ও ছাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ২ হাজার। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, ভৌগলিক অবস্থান, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রী সংখ্যার অনুপাত বিবেচনা করে এতদঞ্চলে নারী শিক্ষা বিস্তারে এ জনপদের প্রধানতম নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। এখন বিদ্যালয়টি আত্তীকরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
জাতীয়করণের সিদ্ধান্তের পর ২০১৯সাল থেকে ২০২১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আকস্মিকভাবে ১৬০জন করে ছাত্রী ভর্তি করা হচ্ছে। ষষ্ঠ শ্রেণি ছাড়াও অন্যান্য শ্রেণিতে ছাত্রী ভর্তি প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রজ্ঞাপন জারী করে জাতীয়করণকৃত বিদ্যালয়সমূহ পূর্ণ আত্তীকরণ না হওয়া পর্যন্ত আগের নিয়ম অনুসরণ করে পরিচালিত হবে বলে নির্দেশনা দেন। এছাড়াও শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) ড. মো. আবদুল মান্নান করোনাকালীন সময়ে এক ভিডিও বার্তায়ও একই নির্দেশনার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তবুও এ বিদ্যালয়টিতে অযাচিতভাবে ভর্তি সংকোচন নীতি অনুসরণ করায় ছাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি এলাকার অভিভাবকদের মাঝে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা, শুরু হয় বিরূপ প্রতিক্রিয়া। অন্যদিকে, বাড়তে থাকে বাল্য বিবাহ ও শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার।
অভিভাবকদের অভিযোগ, ছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মের দোহাই দিলেও আগের নিয়মেই নেয়া হচ্ছে পরীক্ষার ফি’সহ অন্যান্য অনুষঙ্গের টাকাও।
এ ব্যাপারে অভিযোগকারী ডা.মিনহাজ বলেন,জননেত্রী শেখ হাসিনা নারী শিক্ষার বিস্তারে স্কুলটি জাতীয়করণ করেছিলেন। কিন্তু বিগত ৩ বছরে যারা স্কুল পরিচালনার সম্পৃক্ত ছিলেন তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার মর্ম উপলব্ধি করতে না পেরে ভর্তি সংকোচন নীতি অনুসরণ করেছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিদ্যালয়ের অভিভাবক এডভোকেট সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, অনেক মেয়ে এ স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে গেরস্থালিতে মন দিয়েছে, আশংকাজনক বেড়ে গেছে বাল্য বিবাহের হার।
সাতকানিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল কান্তি পাল বলেন, বিষয়টি এ বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি সাহেব আমাকে জানিয়েছেন। এব্যাপারে সরকারি বিধি মোতাবেক ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে ইউএনও স্যারের সাথে আলাপ করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ- জোহরা বলেন, সরকারি নিয়ম অনুসরণ করেই ছাত্রী ভর্তি করা হবে। তবে,শিক্ষা উপমন্ত্রীর নিকট অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন বলে জানান।