ছবি : সংগৃহীত
-জাফর ওয়াজেদ
সেই একাত্তরে একটি ডাকে জেগেছিল সাত কোটি প্রাণ রণাঙ্গনে। ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন স্বদেশ পঞ্চাশ বছর আগে। বাঙালী জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ একটি উজ্জ্বল ইতিহাস। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা বিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী অধ্যায়। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কত কঠিন সংগ্রাম আর আত্মদান করতে হয়েছে, জানে তা বাঙালী। কিন্তু এই অবদান চিত্র ক্রমশ ধূসর হয়ে আসছে, ‘বাঙালীর ইতিহাস নাই’ বলে এককালে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র আক্ষেপ করেছিলেন। আর আজ বাঙালীকে দুঃখ করতে হয় মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পঞ্চাশ বছরেও রচিত হয়নি। সেই ত্রিশের দশকের বিপ্লবীদের স্মরণে গাওয়া গানের মতো, ‘মুক্তির মন্দিরে সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজল এ।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবলই অশ্রুজলে, রক্তগঙ্গায় লেখা। তথ্য ও গবেষণাসমৃদ্ধ তেমন কোন কাজ হয়নি বলে একালের প্রজন্ম জানে না সঠিক ইতিহাস, সঠিক তথ্য। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না বলে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বার বার উচ্চারিত হয়। কিন্তু তাদের উপলব্ধিতে আসে না যে সেই ইতিহাস রচিত হয়নি বলেই বার বার বিকৃতির শিকার হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার কাজটি হয়েছে দু’যুগের বেশি সময় ধরে। আর সে কারণেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ইতিহাস পৌঁছেনি। রচনার কাজ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। পঁচাত্তর পরবর্তী সামরিক জান্তাশাসক ও তাদের উত্তরসূরিরা একদিকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পথটি রুদ্ধ করে দিয়ে বিকৃত এক ইতিহাসকে উপস্থাপন করেছিল। তারা গণহত্যাকারী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে হানাদার হিসেবে উচ্চারণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। নানা বিভ্রান্তির বেড়াজাল ও বিভ্রমের কুয়াশায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আদর্শ এবং অঙ্গীকারকে ভূলুণ্ঠিত করে পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশকে যেভাবে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল, তাতে হানাদারদের দোসর যুদ্ধাপরাধীরাও সমাজ, রাজনীতিতে, ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিল। একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা ক্ষমতার অলিন্দে বসে জনমত থেকে মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু মুছে দিতে পেরেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি, নির্যাতন, গ্রেফতার, গুম, হত্যা সবই চালিয়েছে সামরিক জান্তাশাসক। স্বাধীনতা পরবর্তী দ্রুতগামী সময়ের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সুনির্দিষ্ট তথ্যাবলী সংগ্রহ ও বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রগুলো নানাভাবে বিপন্ন ও বিপর্যস্ত হয়েছে। সামরিক জান্তা শাসনামলে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয় প্রদানও ছিল বিপজ্জনক। তাই বিস্ময়করভাবে এবং বেদনাদায়কভাবে বাঙালীর ইতিহাস রচনায় সম্ভাবনার ক্যানভাসটি কালিমালিপ্ত করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের বহু দলিল-স্তাবেজ জ্ঞাত অথবা অজ্ঞাতসারে অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। দেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের অবস্থান বহাল থাকায় ইতিহাস রচনার কাজ সহজসাধ্য হয়ে উঠছে না। গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ; মাত্র নয় মাসে বাংলাদেশ রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এই নয় মাস সৃষ্টি করেছে আর কতদিন, কত মাস, কত বছর, তার আদ্যোপান্ত তথ্য অদ্যাবধি সংগ্রহ করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ পূর্বাপর ইতিহাস যথাযথভাবে তুলে না আনায় প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রটি আসলেই বিশালাকার। এর বিস্তৃতি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছিল। বিশ্বের আর কোন স্বাধীনতা সংগ্রামে এভাবে তৃণমূল থেকে যোদ্ধা তৈরি হওয়ার ঘটনা জানা যায় না। বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, নারী, সাধারণ গৃহস্থ, দিনমজুরও এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। যে কারণে পুরো মুক্তিযুদ্ধই ছিল জনযুদ্ধ। সাধারণ মানুষ, খেতে না পাওয়া মানুষও মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে সহযোগিতা করেছে তা অতুলনীয়। জনসম্পৃক্ততার সেসব ইতিহাস অপ্রকাশিতই থেকে গেছে।
সাড়ে সাত কোটি প্রাণ প্রহরী প্রদীপ হয়ে জ্বলে উঠেছিল একাত্তরে নেতার একটি ডাকে ও অঙ্গুলি হেলনে। ভাষা আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থান হয়ে একাত্তর এসেছিল জাতির জীবনে। মুক্তিযুদ্ধ হয়ে উঠেছিল স্বপ্ন ও বাস্তবের দোলাচল। এই দোলাচল থেকে নতুন প্রজন্মকে মুক্ত করতে না পারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেষাবধি আত্মঅস্বীকারের চেতনায় পরিণত হওয়ার দিকেই ধাবিত হচ্ছে। পরাজিত শক্তি নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের শুদ্ধতম ধারণাকে পর্যুদস্ত করেছে। সেই শুদ্ধতম ধারণাকে বলিষ্ঠতম কাঠামোর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন মূলত প্রত্যক্ষভাবে আদর্শ ও অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের নানা গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা সঙ্কলিত হয়নি। ফলে মুক্তিযুদ্ধের একটি বিন্যস্ত চিত্র পাওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন যারা তারা একে একে চলে যাচ্ছেন অনন্তের পথে। যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের স্মৃতিকথা ধারণ করার কাজে কেউ এগিয়ে আসছে না।
স্বাধীনতার পরপরই ইতিহাস রচনার কাজটি শুরু করা যায়নি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকায়। পরবর্তীকালে সদ্য প্রয়াত হাসান হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনের দলিলপত্র সংগ্রহ ও গ্রন্থভুক্ত করার কাজ চলে। তারা পনেরো খন্ডের যে দলিলগুলো উপস্থাপন করেছেন, তাও সংগৃহীত তথ্যের একটি অংশমাত্র। বাকি হাজার হাজার তথ্য গায়েব হয়ে গেছে। বস্তাবন্দী সেসবের কিছু উইপোকায় কেটেছে। কয়েক বছর পরিশ্রম করে তারা যে সংগ্রহ গড়ে তুলেছিলেন, সেসব গ্রন্থভুক্ত হলে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার কাজ এগিয়ে যেত। এই কাজের পর আসলে আর কোন কাজ হয়নি। এসব কাজ প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়া করা অসম্ভব। সরকারী, বেসরকারী উদ্যোগে বা যৌথভাবে কিংবা সরকারের একক উদ্যোগেও হতে পারে ইতিহাস রচনার কাজ। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ১৯৯৭ সালের দিকে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মুক্তিযুদ্ধ গবেষণার কাজে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পৃক্ত ইনস্টিটিউট গড়ার কাজটি শুরু করেছিলেন। কিন্তু, জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয় সব কাজ। বাংলা একাডেমি জেলাভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনার প্রকল্প নিয়েছিল। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় এসে এই প্রকল্পটিও বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীকালে তথ্য সংগ্রাহকরা প্রকাশকদের মাধ্যমে বইগুলো প্রকাশ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি গ্রন্থ রয়েছে। অধিকাংশই বর্ণনা, স্মৃতিচারণ ও তথ্যের। সে অর্থে গবেষণা হয়নি খুব একটা। সবচেয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষয়ে। ৪৫ বছর পার হবার পরও এখন পর্যন্ত রাজাকারের পূর্ণাঙ্গ তালিকাই তৈরি হয়নি। বিস্তারিত ঘটনা নিয়েও বই তেমন একটা নেই। তবে প্রেস ইনস্টিটিউট সম্প্রতি একটি বড় ধরনের কাজ করেছে। তারা,‘সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা একাত্তরের ঘাতকদের জবান জুলুম’ নামক একটি সংকলন প্রকাশ করেছে। গবেষণার সুযোগ থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক সমর্থনের অভাবে কাজ হচ্ছে না। যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার ও দালালদের নিয়ে গবেষণারত শাহরিয়ার কবির যেমনটা জানালেন, স্বাধীনতার পর থেকে পাকিস্তানপন্থীরাই বেশি সময় দেশের শাসন ক্ষমতায় থেকে ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করেছে। ক্ষমতায় এসে মৌলবাদী জামায়াত-বিএনপি প্রকৃত ইতিহাস মুছে ফেলে দেখাতে চেয়েছে পাকিস্তান নয়, ভারতই হলো বাংলাদেশের শত্রু। ইতিহাস না থাকায় এই অপপ্রচার এখনও চলছে। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের মতে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যখন বর্ণিত হয় তখন সম্মুখযুদ্ধগুলোর ওপরই গুরুত্বারোপ করা হয়; গেরিলাযুদ্ধের প্রতি ততটা নয়। এগারোটি সেক্টরে যে যুদ্ধ হয়েছিল অন্তিমে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের কাঠামো। যে ইতিহাস লেখা হয় তাতে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা থাকে অস্পষ্ট। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা ইতিহাসবিদ এবং ইতিহাস রচনা সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জও বটে। এই ইতিহাস রচনার পদ্ধতি কি হবে সে ব্যাপারেও কোন প্রখ্যাত পন্ডিত এখন পর্যন্ত কোন গ্রহণযোগ্য দিকনির্দেশনা দেননি। এই ইতিহাস যথাযথভাবে তৃণমূল পর্যায় থেকে লিখতে হলে এবং এর অনন্য স্রষ্টা কৃষকসন্তান ও ব্রাত্যজনের ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে হলে ফিল্ড ওয়ার্ক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। ইতিহাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গবেষকরা এ ধরনের কাজ অদ্যাবধি করেননি। প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে বস্তুনিষ্ঠ অনুসন্ধান। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুধু রণাঙ্গনের ইতিহাস নয়। তার আরও অনেক দিক রয়েছে। সেসব উদ্ঘাটনের কাজ অপর্যাপ্ত। সংবাদপত্র এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা পালন করে আসছে নব্বই পরবর্তীকাল হতে। দৈনিক জনকণ্ঠ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্য। যার মধ্যে কুমিল্লার রসুলপুর বধ্যভূমি নিয়ে লেখা প্রকাশের পর সেখানে স্মৃতিসৌধ করা হয়। এই লেখার কাজে জড়িত সাংবাদিক ও গবেষক এবং শিশু সাহিত্যিক মোস্তফা হোসেইন জানান, তথ্য সংগ্রহ করে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনায় সময় লাগতেই পারে। তবে যেভাবে ধীরগতিতে এবং সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সমন্বয়হীন কাজ হচ্ছে তাতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা শেষ হবে কিনা সে নিয়ে সংশয় রয়েছে।
একাত্তরের প্রজন্ম ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার কারণে এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করায় তথ্য সংগ্রহের কাজ দুরূহ হয়ে পড়ছে। যারা বেঁচে আছেন তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকতার অভাবে তা করা যাচ্ছে না। অনেক দলিলপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের স্মারকও। মুজিবনগর সরকারের অনেক দলিলপত্র যুদ্ধ শেষে দেশে আনা হয়নি। সামরিক বাহিনীর কোন দলিলও বেসামরিক হাতে দেয়া হয়নি। প্রতিশ্রুতি থাকলেও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরী শংকিত যে, ইতিহাস চর্চার যে সম্পদ বা রসদ লাগে তার অন্তিমলগ্নে এসে দাঁড়িয়েছি আমরা। এরপর আলোচনা হতে পারে। বিশ্লেষণ হতে পারে। কিন্তু মৌলিক ইতিহাস গবেষণা সম্ভব নাও হতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেসব লেখা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই যুদ্ধসংক্রান্ত। মুজিবনগর সরকার নিয়ে সে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা এইচটি ইমাম দলিলপত্রসহ বেশ বড়সড় গ্রন্থ লিখেছেন; যা গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ। শরণার্থী জীবন ও সমস্যা নিয়ে কিছুই লেখা হয়নি। ভারত সরকারের ভূমিকা, যুব শিবির, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভূমিকা, প্রবাসী বাঙালীদের তৎপরতা, স্বদেশে আটকেপড়া বাঙালীদের ওপর বর্বরতা, পাকিস্তানী কারাগারে বঙ্গবন্ধুর বানোয়াট বিচার, দালালির বিষয়গুলো নিয়ে কোন কাজ হয়নি।
আজকের প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাসের কিছুই জানে না। জানার সুযোগও নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংর্ঘষ বিভাগের স্মাতকোত্তর রেজা এনায়েত হোসেন তাদের পাঠে মুক্তিযুদ্ধের অনেক তথ্যই পাননি। এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও তথ্য-উপাত্ত মেলেনি। তার মতে, আজকের প্রজন্ম শুধু সাতই মার্চের ভাষণ শুনে একটা কাঠামো দাঁড় করায়। যে ভাষণ আজ ইউনেস্কোর প্রামাণ্য ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের সৌভাগ্য, ওই ভাষণে পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের ইতিহাসের রূপরেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এই বিশাল মুক্তিযুদ্ধের অনেক দিকই তাদের অজানা। যে কারণে একাত্তরের দালাল, রাজাকাররা জনজীবনে মিশে যেতে পারছে। তাদের নামে স্থাপনা হচ্ছে। পরাজিত শক্তিরা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম ওঠাতে পারছে।
পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যদি থাকত, তবে বিকৃত ইতিহাস তৈরির কাজটি বিএনপি-জামায়াতসহ পরাজিত শক্তিরা করতে পারত না। এমনকি অনেক বিষয়ে বিদেশী সাংবাদিকরাও অযাচিত মতামত ও মন্তব্য পেশ করতে পারত না। বর্তমান ১৪ দলীয় সরকার মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে চায়। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই যদি রচিত না হয় তবে সেসব বাস্তবায়ন অনেকটাই কাগুজে ভাষ্যে পরিণত হতে বাধ্য। দেশ, জাতির স্বার্থে সরকারের উচিত দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ, যাতে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচিত হতে পারে। নতুবা সবই বৃথা আস্ফালনে পরিণত হবে। বীরের জাতির অবস্থান ক্রমশ নিম্নমুখী হবে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। ইতিহাস রচনা যাদের দায়িত্ব তাদের উদাসীনতা, অবহেলা ক্ষমার অযোগ্য অবশ্যই। ইতিহাস বিকৃতির বিপরীতে প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগে ইতিহাস প্রণয়নের কাজ শুরু। এ জন্য যা যা করণীয় তা করা না হলে সবই অক্ষমতার নামান্তর হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারেন ইতিহাস রচনার কাজটি এগিয়ে নিতে। জনগণ সেদিকেই তাকিয়ে!
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও মহাপরিচালক প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।