সিবিএন ডেস্ক:

শরীফ উদ্দিনকে উপসহকারী পরিচালকের পদ থেকে অপসারণের দুই দিন পর তার বিরুদ্ধে ১৩ টি অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শরীফ উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিটি অভিযোগের বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তিনি কোনো ধরনের অনৈতিক কাজ বা অপরাধ করেননি।

নিউজবাংলার পক্ষ থেকে দুদকের আলোচিত এ কর্মকর্তার কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। রোববার মধ্যরাতে তিনি নিউজবাংলাকে এসব বিষয়ে তার অবস্থান স্পষ্ট করেন।

শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্ত নির্দেশিকা মতো কাজ না করলে এতো বড় বড় ঘটনার তদন্তভার আমাকে কীভাবে দেয়া হলো? আর যদি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাতাম ৭ বছর চাকরি করতেই তো পারতাম না। আমার প্রসিডিওরাল (পদ্ধতিগত) ভুল থাকতে পারে। কিন্তু সেটি কোনভাবেই উদ্দেশ্যমূলক ছিল না।’

অভিযোগ প্রমাণে তথ্য সংগ্রহের জন্য শরীফ ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিসকে রিমান্ডে নির্যাতন করেছেন। জানুয়ারিতে, এই অভিযোগের তদন্তকারী দুদকের একজন কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন, যেখানে ইদ্রিসের চিকিৎসা চলছিল। গত ২৯ জানুয়ারি মেডিক্যাল অফিসার মো. মমিন উল্লাহ ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে দুদককে জানানো হয় যে, ইদ্রিসকে নির্যাতনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

ব্যাংক হিসাব স্থগিতে নিয়ম না মানার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শরীফ বলেন, ‘আদালতে আবেদন করার আগে দুদক থেকে অনুমতি নিতে হবে। এটি সময়সাপেক্ষ। আসামি যাতে তড়িঘড়ি করে টাকাগুলো উত্তোলন করতে না পারেন, সে জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি ব্যাংক ব্যবস্থাপককে চিঠি দিয়েছেন। টাকাগুলো তো আমি ব্যবহার করিনি। সরল বিশ্বাসেই তা করেছি এবং সেটি রাষ্ট্রের স্বার্থে। এটি না করলে এই টাকা তহবিল তছরুপ হত। আমার প্রতিবেদনে এটি উপস্থাপন করেছি।’

জব্দ করা টাকা নিজের কাছে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগাযোগ করেছিলাম। ব্যাংক থেকে জানানো হয় জব্দ করা টাকা আসল কিনা তা যাচাই করে নিরাপত্তা জামানত কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে সিলগালা অবস্থায় জমা দিতে। এ প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বদলি হওয়ার পরে টাকাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়ে আসি। আমার ডিডি স্যারও এটা জানতো। আর জব্দ তালিকায় এ টাকার কথা উল্লেখ থাকায় অন্য কোনো উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। টাকা তো অফিসেই ছিল, আমার বাসায় না। দুদকের বিভিন্ন অফিসেও এটি করা হয়ে থাকে।’

পটুয়াখালীতে বিলম্বে যোগদানের বিষয়ে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘২০২১ সালের ১৮ ও ১৯ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। যা চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন প্রত্যয়ন করেছেন।

‘তবে ১৪ জুলাই ই-মেইলের মাধ্যমে আমার যোগদানপত্র এবং আর্টিকেল ৪৭ পটুয়াখালির অফিশিয়ালি প্রেরণ করি। দুদক কর্তৃক এসব যাচাই করে সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে। লকডাউন ও ১৮ জুলাই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কারণে বদলীকৃত কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না।’

নথি জমাদানে সময়ক্ষেপণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ৩০ আগস্টের মধ্যে তার নিকট থাকা ৯৩ লাখ টাকা, ওই মামলা সংক্রান্ত ৫৮৯ পাতার প্রতিবেদনসহ ১২০ সিডি, সাত বস্তা আলামত, পাঁচ হাজারের অধিক মূল আবেদন ১০ হাজার পাতার অধিক রেকর্ড, রোহিঙ্গা এনআইডি ও পাসপোর্ট সিরিজের ১৮ মামলার নথি, কেজিডিসিএলের বিভিন্ন অনিয়ম সংক্রান্ত ৪০০ পাতার অনুসন্ধান প্রতিবেদনসহ পাঁচ হাজার পাতার অধিক রেকর্ড ও আলামত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ সংক্রান্ত অনিয়মের জব্দ করা ১২০০ পাতার আলামতসহ বিভিন্ন নথি তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটিকে বুঝিয়ে দিয়ে এসেছেন।

রোহিঙ্গাদের এনআইডি ও পাসপোর্ট প্রদান বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শরীফ উদ্দিন। তার দাবি, তিনি গণমাধ্যমে এ ধরনের কথা কখনোই বলেননি। ৬ সদস্যের ওই কমিটিতে তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন এবং সম্মিলিতভাবে জালিয়াতি উদঘাটন করেন।

কক্সবাজারে জমি অধিগ্রহণের তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে শরীফ বলেন, ‘২০১৯ সালে ওই জমি অধিগ্রহণ কেলেঙ্কারিতে ১৫৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক ৩টি অভিযোগপত্র দুদকে জমা দেই। যে ৩ জন কমিশনে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন, তাদের নাম ওই ১৫৫ জনের ভেতর আছে। দুদক ওই অভিযোগপত্রগুলো অনুমোদন না দিয়ে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেয়। তবে এর কোনো কারণও দেখানো হয়নি।’

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘যারা দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জন করছিল, তারা আমাকে অনেকভাবে হুমকি ও প্রলোভন দিচ্ছিল। কানাডায় বাড়ি কিনে দেবে, নগদ কোটি টাকা দেবে, এমন সব প্রলোভনের পরেও আমি কাউকে ছাড় দিইনি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছি, তাদের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করেছি।’

আর কোনো প্রভাব খাটিয়ে পরিবার বা আত্মীয়-স্বজন কারো চাকরি নিয়ে দেয়ার কোনো প্রশ্নই উঠে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইকে চাকরি দিতে হলে আমি তো তাদের সঙ্গে আপস করতাম। বরং তাদের দুর্নীতি অনিয়ম অনুসন্ধান করায় আমাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। এমনকি চাকরি খেয়ে নেয়ারও হুমকি দেয়।’