অনলাইন ডেস্ক: ঢাকার সড়কে কলেজ শিক্ষিকাকে উদ্দেশ্য করে ‘টিপ পরছস কেন’ বলে হেনস্তা করেছিলেন পুলিশের পোশাক পরা মধ্যবয়সী এক ব্যক্তি। ওই শিক্ষিকার অভিযোগ, ‘তাকে এতো অশ্নীলভাবে গালিগালাজ করা হয়েছিল, সেই ভাষা তিনি স্বামীর কাছে প্রকাশ করতে ব্রিবত হবেন।’

সেই ঘটনায় শিক্ষিকা থানায় অভিযোগও করেছিলেন। পুলিশও হেনস্তাকারী ব্যক্তিকে খুঁজছিল। তাকে শনাক্ত করতে প্রযুক্তিগত তদন্তের সঙ্গে ম্যানুয়ালি তদন্তে দিন-রাত সমান করেছেন পুলিশের কর্মকর্তারা। প্রকাশ্যে রাজধানীর সড়কে কর্মজীবী নারীর সঙ্গে এমন বাজে আচরণে শুরু হয় আন্দোলন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলে সমালোচনার ঝড়।

তবে হেনস্তাকারী ব্যক্তি পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেক বলে শনাক্ত হয় সোমবার। এরপর তিনি পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ‘শনিবার সকালে ফার্মগেটে এক নারীর সঙ্গে ‘ঝামেলা’ হয়েছিল। কিন্তু তা নিয়ে যে তোলপাড়, এ নিয়ে যে তাকে খোঁজা হচ্ছিল-তা তিনি জানতেনই না!’

তদন্ত সংশ্নিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কনস্টেবল নাজমুলকে সোমবার পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসির কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হলে তিনি সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের বিষয়টি জানতে পারেন। তার বিচার চেয়ে যে আন্দোলন হচ্ছে, তাও তিনি তখন জানেন।
এর কারণ জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, অভিযুক্ত কনস্টেবল নাজমুল স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না, টেলিভিশনও দেখেন না। এজন্যই হয়তো ঘটনার রেশ যে এত বড় হয়েছে তা বুঝতে পারেননি।

পুলিশ জানায়, ২০১১ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেওয়া নাজমুল ছয় মাস ধরে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রটেকশন বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বলেন, এরইমধ্যে ওই কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। পাশাপাশি শিক্ষিকার করা জিডিতে অভিযোগের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।

নাজমুলের এক সহকর্মী জানান, নাজমুল আগে প্রচুর গান শুনতেন। সংস্কৃতিমনা হিসেবে পরিচিতি ছিল তার। বছরখানেক ধরে তার ভেতর পরিবর্তন দেখা যায়। একপর্যায়ে কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা শুরু করেন। নিয়ম অনুযায়ী অনুমতি নিয়ে দাঁড়িও রাখেন তিনি। তবে তার এই পরিবর্তনের বিষয়ে কেউ কখনও জানতে চাননি।

পুলিশ সূত্র জানায়, প্রটেকশন বিভাগে দায়িত্বরত নাজমুল সচিবালয় থেকে কার্জন হলের পূর্ব গেট পর্যন্ত ভিআইপি মুভমেন্টের সময় দায়িত্ব পালন করেন। শনিবার শিক্ষিকার সঙ্গে বাজে আচরণ করার পর রোববারও তিনি ওই এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন।

গত শনিবার সকালে তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। তার অভিযোগ, তিনি ফার্মগেটের সেজান পয়েন্টের সামনে গেলে পুলিশের পোশাক পরা মধ্যবয়সী এক লোক তার কপালের টিপ নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। এর প্রতিবাদ জানালে ‘টিপ পরসিছ কেন’ বলে অশ্নীল ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তার ওপর মোটরসাইকেল তুলে দিয়ে প্রাণনাশেরও চেষ্টা চালানো হয়। ওইদিনই তিনি শেরেবাংলা নগর থানায় তিনি ঘটনা জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন।

অবশ্য শনাক্ত হওয়ার পর পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল নিজ বাহিনীর কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, ‘ঘটনার দিন সকালে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গায়ে পা লাগা নিয়ে তার স্ত্রীর সঙ্গে এক নারী পথচারীর ঝগড়া হয়।’

লতা সমাদ্দার সমকালকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্য তাকে গালাগাল করার সময়ে, টিপ পরা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময়ে তিনি কঠোর প্রতিবাদ করেছেন। আশপাশের লোকজন তা পাশ থেকে দেখেছেন। একপর্যায়ে পুলিশের ওই সদস্য নিজের মোটরসাইকেলে একা চলে যেতে চাইলে তিনি সেটি টেনে ধরলে পুলিশ সদস্য পড়ে যান। তখন তো তার স্ত্রী বা কোনো নারীকে সেখানে দেখিনি। ঘটনা ঘটিয়ে তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন।’