সিবিএন ডেস্ক:
স্বাধীনতার পর থেকে ৫০ বছরে কালো টাকা ও অর্থ পাচারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কালো টাকার পরিমাণ ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর বিদেশে অর্থ পাচার হয়েছে পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনীতি সমিতির অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩–২৪ : বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল।

সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।

অধ্যাপক বারকাত বলেন, যেহেতু ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে প্রতিষ্ঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানমতে “প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ”, যেহেতু “প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র” (অনুচ্ছেদ ১১), এবং যেহেতু বৈষম্য ক্রমবর্ধমান, সেহেতু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বাজেট হতে হবে বৈষম্য নিরসন-উদ্দিষ্ট জনগণতান্ত্রিক বাজেট।

বিকল্প বাজেটে কালো টাকাকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ১৯৭২–৭৩ সাল থেকে ২০২২–২৩ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে কালো টাকার পরিমাণ মোট ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার মাত্র ২ শতাংশ সরকারকে উদ্ধারের প্রস্তাব করেছি। এটা যদি উদ্ধার করা সম্ভব হয়, তাহলে সরকার ২ লাখ ৬৫ হাজার ৭০ কোটি টাকা পাবে।

তিনি বলেন, বিকল্প বাজেট প্রণয়নে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিতে আমরা যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকি, এ বছর তার সাথে দুটো নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে: তৃণমূলমুখী করার লক্ষ্যে দেশের সব বিভাগে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সাথে প্রাক্-বিকল্প বাজেট মতবিনিময় সভা এবং বাজেট প্রণয়নের ভিত্তি-নীতি সরকার বরাবর লিখিতভাবে উপস্থাপন।

প্রস্তাবিত ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের মধ্যে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা, যা চলমান অর্থ বছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪.৪২ গুণ বেশি। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯৩.২ শতাংশের যোগান দেয় রাজস্ব। বাকি ৭.৮ শতাংশ ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি হবে ঘাটতি বাজেট।

প্রস্তাবিত বিকল্প বাজেটকে সংগঠনটি সমপ্রসারণশীল ও জনগণতান্ত্রিক বাজেট হিসেবে অভিহিত করেছে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

রাজস্ব আদায়ের উৎস হিসাবে অধ্যাপক আবুল বারকাত উল্লেখ করেন, এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের মধ্যে আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর অর্থাৎ আয়কর প্রস্তাব ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। দেশে কোটি টাকার বেশি আয়কর দেন ১০০ জনের মতো করদাতা। কিন্তু অর্থনীতি সমিতির গবেষণা বলছে, ৪ লাখ ১৮ হাজার মানুষ কোটি টাকার ওপরে কর দেয়ার কথা। কর ব্যবস্থায় সম্পদ কর নেয়া হয় না। এই খাতে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আসা সম্ভব। ভ্যাট খাতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান সরকারের বাজেটের মতোই।

অন্যদিকে এনবিআর বহির্ভূত কর– যেমন মাদক শুল্ক ১৫২ কোটি টাকা। যেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে এবং ভূমি রাজস্ব থেকে আসবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা বিদেশি অর্থায়ন ও ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার পক্ষে নই।

১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র, বন্ড, বিদেশে বসবাসরত নাগরিক ও কোম্পানি থেকে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে, যোগ করেন আবুল বারকাত।

আগামী ১০ বছরে ছয়টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য এ বিকল্প বাজেট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলেও জানান সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত।

সেই লক্ষ্য গুলো হচ্ছে ৭০–৮০ শতাংশ মানুষকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত করা, বৈষম্য সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনা, ধনিক শ্রেণির সম্পদ দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে বণ্টন, উন্নয়নে দেশজ অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক ও আলোকিত করার সুযোগ তৈরি ও মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

আবুল বারকাত বলেন, এখন মানুষের দুঃখুদুর্দশার মূল কারণ মূল্যস্ফীতি, মানুষ সঞ্চয় ভাঙছেন, ধারদেনা করে চলছেন। ভোগব্যয় কমিয়েছেন অনেকে, বিশেষ করে আমিষ খাওয়া বাদ দিয়েছেন অনেক মানুষ। ওষুধপত্র কেনার সামর্থ্যও হারাচ্ছেন অনেকে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের নেতারা অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।