পরকীয়ার ফাঁদে পড়ে নিখোঁজের দুই বছর পর মাটির গর্তে মিলল প্রেমিক মফিজুল ইসলামের মরদেহ। রোববার (৩ মার্চ) সকালে মরদেহের দেহাবশেষ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় এ ঘটনাটি ঘটে। উপজেলার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার একটি বালিকা মাদ্রাসার সেপটিক ট্রাঙ্কের পাশে হত্যাকাণ্ডের শিকার মফিজুলের মরদেহ পুঁতে রাখা হয়েছিল।

এ ঘটনায় মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী আবু তাহের খলিফা (৫৫), তার মেয়ে তানজিলা খাতুন (২৮), তানজিলার স্বামী আল হাবিব সরকার (৩৫) ও তাদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে (৪২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত মফিজুল চাঁচকৈড় পুরানপাড়া মহল্লার আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে।

জানা যায়, নাটোরের গুরুদাসপুরের খলিফা পাড়া মাফি বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরিতে চাকরির সুবাদে যুবক মফিজুলের সঙ্গে তানজিলা খাতুনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে তানজিলার সঙ্গে তার স্বামী আল হাবিবের মাঝে কলহ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে তানজিলার বাবা আবু তাহেরের কাছে অভিযোগ করেন জামাতা হাবিব।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল তানজিলার বাবা কৌশলে মফিজুলকে তার বাসায় ডেকে নেয়। গভীর রাতে সেখান থেকে আবু তাহের খলিফা তার কর্মস্থল চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদ্রাসার ভেতরে মফিজুলকে নিয়ে যায়। সেখানে হাত-পা বেঁধে ও মুখে কসটেপ দিয়ে আবু তাহের খলিফা, তানজিলা ও তার স্বামীসহ কয়েকজন মিলে মফিজুলকে হত্যা করে। পরে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মফিজুলের মরদেহ মাটিতে পুঁতে রাখে।

নৈতিকতা সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে দ্বীনি শিক্ষার বিকল্প নেই : জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান

ছেলে নিখোঁজের ঘটনায় মফিজুলের মা গুরুদাসপুর থানায় ২০২২ সালের ৭ মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের পর তানজিলা-হাবিব দম্পত্তির মধ্যে কলহ আরও বেড়ে যায়। এ কারণে ২০২২ সালের মে মাসে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন তানজিলা। এ মামলায় নাটোর কারাগারে যান আল হাবিব।

দীর্ঘদিন কারাবাসের সুবাদে গুরুদাসপুরের খলিফাপাড়া মহল্লার জাকির মুন্সি নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে জেলহাজতেই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে আল হাবিবের। আলাপচারিতায় আল হাবিব হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জাকির মুন্সিকে জানায়।

এদিকে জাকির মুন্সি জামিনে মুক্তি পেয়ে নিহত মফিজুলের পরিবারকে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে গত শুক্রবার রাতে নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযুক্ত তানজিলা খাতুন, তার স্বামী হাবিব ও তার বাবা আবু তাহের খলিফাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি পুলিশের কাছে স্বীকার করেন তারা।

পরে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ ছায়াতদন্ত শুরু করে। র‌্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্প সদস্যরা গোয়েন্দা তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামি আশরাফুল ইসলামকে শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জ থেকে আটক করে।

এ ঘটনায় নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম ও বাবা আব্দুল আজাদ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলের ফাঁসির দাবি জানান। একই সঙ্গে প্রতিবেশীরাও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে ধরা’র মানববন্ধন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাইনুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার রাতে নিহত মফিজুলের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ও র‌্যাব অভিযানে আবু তাহের খলিফা, তার মেয়ে তানজিলা খাতুন, তানজিলার স্বামী আল হাবিব সরকার ও তাদের আত্মীয় আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের দেওয়া তথ্যে হত্যাকাণ্ডের শিকার মফিজুলের পুঁতে রাখা শরীরের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

সূত্র: কালবেলা