ইউসুফ আরমান, মক্কা থেকে:
পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌদি আরব সব সময়েই একটি কাঙ্খিত গন্তব্য। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র জন্মভূমি, ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল, পবিত্র কুরআন শরিফ নাজিল সহ এরকম আরও অনেক ইতিহাস রয়েছে যেজন্য মুসলমানদের কাছে সৌদি আরব একটি প্রিয় নাম। এছাড়া পবিত্র মক্কা শরিফ, মদিনা শরিফ এবং পবিত্র হজ ও উমরাহের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলি তো আছেই।
সকল মুসলিমরা, তাদের স্বাস্থ্য ও আর্থিক সামর্থ্য যদি থাকে তবে প্রত্যেকেই তারা তাদের জীবদ্দশায় একবার হলেও হজ বা উমরাহ যাত্রায় যাওয়ার আশা রাখবেন। এই ধর্ম যাত্রা প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়, মুসলিম ধর্মের প্রতি বছরের অন্তিম মাসে লক্ষ লক্ষ মুসলমানেরা এই ধর্মীয় তীর্থযাত্রা করতে আসেন। উল্লেখযোগ্য আকর্ষণীয় বিষয় হল যে এই ভ্রমণযাত্রার পরিকল্পনা বেশ কিছু মাস, এমনকি কখনও কখনও বছরেরও আগে থেকে তৈরি করা প্রয়োজন। সকল মুসলমানদের ইসলাম ধর্মের প্রমাণের জন্য নথিপত্রের প্রয়োজন হয় এবং সমষ্টিগত সফরের সঙ্গে ভ্রমণে যাওয়া। মক্কার প্রাচীন শহরটিতেই অধিকাংশ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় এবং অধিকাংশ ভ্রমণার্থীরাই পবিত্র মসজিদ আল হারাম এ প্রার্থনা করে বেশির ভাগ সময় কাটান। এটি শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এবং মসজিদের অভ্যন্তরে একসঙ্গে প্রায় দশ লক্ষ প্রার্থনাকারীদের জন্য প্রার্থনার জায়গা আছে। এই পবিত্র স্থলে একটি ১২ইঞ্চি কালো পাথর রয়েছে। এছাড়াও হজের ন্যায় ভ্রমণযাত্রায় মক্কার বাইরে অন্যান্য পবিত্র ভ্রমণমূলক স্থানসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মিনায় শয়তানের প্রতীকী ৩টি স্তম্ভে কঙ্কর নিক্ষেপ করা। হজের অন্যতম আমল হচ্ছে জামরায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ। এভাবেই হজের সময় শয়তানকে পাথর মারার প্রথা চলে আসছে। পবিত্র হাদিস শরীফে এ আমলের বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। পাথর নিক্ষেপের সওয়াব আখেরাতের জন্য সঞ্চিত থাকবে মর্মে ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আর তোমার পাথর নিক্ষেপ, তা তো তোমার জন্য সঞ্চিত করে রাখা হয়।’ (মুজাম কাবির : ১৩৩৯০)।
আরেক হাদিসের সূত্রমতে নিক্ষিপ্ত প্রতিটি পাথর একেকটা গোনাহে কাবিরা মোচন করবে। ‘আর জামরায় তোমার পাথর নিক্ষেপ, এতে তোমার নিক্ষিপ্ত প্রতিটি পাথরের বিনিময়ে এক একটা ধ্বংসকারী কবিরা গোনাহ মোচন করা হবে।’ (সহিহুত-তারগিব ওয়াত-তারহিব : ১১১২)।
জাবালে নূর। এটি এখন বিশ্বব্যাপী জাবালে নূর বা জাবালে হিরা নামেই বেশি চেনে। জাবালে নূর অর্থ হলো নূর বা আলোর পাহাড়। কেননা এ পাহাড়েই আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর সর্বপ্রথম বরকতময় আলোকিত কুরআন নাজিল হয়। যা শুধু মুসলিম উম্মাহ নয় বরং বিশ্ব মানবতার জন্য নূর বা আলো। সে কারণেই এ পাহাড় বিশ্বব্যাপী জাবালে নূর নামেই পরিচিত।
এটি এখন বিশ্বব্যাপী জাবালে নূর বা জাবালে হিরা নামেই বেশি চেনে। জাবালে নূর অর্থ হলো নূর বা আলোর পাহাড়।
জাবালে রহমত। আরাফাতে অবস্থান ও ১ম ভাষণ : যিলহাজ্জ শুক্রবার সকালে রাসূল (স) মিনা হ’তে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ওয়াদিয়ে নামেরাহ’তে অবতরণ করেন। যার একপাশে আরাফাত ও অন্যপাশে মুযদালিফাহ অবস্থিত। অতঃপর সূর্য ঢলে পড়লে তিনি ক্বাছওয়ার পিঠে সওয়ার হয়ে আরাফাত ময়দানের বাতনে ওয়াদীতে আগমন করলেন। এটি ছিল একটি পাহাড়ী টিলা। যা জাবালে রহমত বলে খ্যাত। তার উপরে উটনীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় রাসূল (স) সম্মুখে উপস্থিত ১ লক্ষ ২৪ হাজার অথবা ১ লাখ ৪৪ হাজার ভক্ত মুসলমানের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। আরাফাতের ময়দানের উক্ত ঐতিহাসিক ভাষণে বিশ্ব ব্যাপি সমাধৃত।
মক্কা হল বিশ্বের সবচেয়ে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরিভ্রমণমূলক শহর এবং রমজান ও হজ্জের সময় এই স্থান পরিদর্শনের সেরা সময় হতে পারে। শীতকালে এই শহর বেশ উষ্ণ থাকে এবং আবহাওয়া সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র হয়। সারাবছর ধরে মক্কায় নামমাত্র বৃষ্টিপাত হয়।
সুতরাং ইসলামের কিছু নিদর্শনের দর্শনে প্রত্যেকের জীবদ্দশায় একবার হলেও হজ বা উমরাহ যাওয়া অপরিহার্য।
লেখক পরিচিতি
ইউসুফ আরমান
কলামিস্ট ও সাহিত্যিক ,মক্কা, সৌদি আরব
yousufarmancox@gmail.com , 0578019055
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।