– আজিজুল আম্বিয়া 

আল কোরআন কি ? কি আছে এই বইয়ের মাঝে? এটি তাবৎ মানুষের জিজ্ঞাসা ? কোরআন মাজিদ বা কোরআন ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ, যা আল্লহর বাণী বলে পৃথিবীর সকল মুসলমান বিশ্বাস করেন এবং তা যুগে যুগে প্রমাণিত।আর এই কোরআন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। পৃথিবীর মানুষ যখন পথহারা হয়ে বিভিন্ন পাপাচারে লিপ্ত ছিল তখন মানুষের কাছে এটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে এসেছিল এবং আজ অব্দি অবিকল রয়ে গেছে এই গ্রন্থটি। তাই এর মর্যাদা প্রতিদিন বিশ্বের মানুষের কাছে বেড়েই চলেছে। কোরআন পড়েছেন প্রায় সব মুসলমানই। আমিও এর বাহিরে নয় । কিন্তু কোরআন নাজিল হয়েছিল আরবি ভাষাতে তাই আরবরা এর অর্থ বুঝলেও অনারবরা এর বাহিরে। তাই এটি আমাদের জীবনে শতভাগ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি, অনেকে মনে করেন একমাত্র ভাষার বাঁধার কারণেই এর সুফল থেকে আমরা বঞ্চিত। আমরা অনেক সময় অনেক বিখ্যাত বইয়ের পাগল হয়ে যাই এবং বই পাঠক সমাদৃত হয়ে শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সম্মান নোবেল ও লাভ করেছেন। কিন্তু এই বইগুলি আমরা খুব বেশিদিন আত্মস্ত করে রাখতে পারি না কিংবা এর প্রয়োজন মনে করি না। এভাবে এক সময় ভুলে যাই বইটির কথা কিম্বা আরেকটি এর চেয়ে ভালো বই যখন বাজারে আসে তখন আমরা সেই বইটির মাঝে ডুবে যাই। এই ভাবে হারিয়ে যায় অনেক বিখ্যাত বইয়ের কদর। কিন্তু আল কোরআন ৬১০ খ্রিস্টাব্দে লাইলাতুল কদরের রাতে রমজান মাসে হযরত মুহাম্মদ (স.)এর উপর নাজিল হয় আল্লাহর ফেরেশতা জিব্রাইলের (আঃ) এর মাধ্যমে।পবিত্র আল কোরআনে মোট ১১৪ টি সূরা রয়েছে। আর এই কোরআনকে সারা বিশ্বের মানব জাতির ইহকাল ও পরকালের কল্যাণের আলোকবর্তিকা হিসাবে ধরে নেওয়া যায় । কোরআন সম্পর্কে আল্লাহ স্বয়ং বলেন, “আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক জ্যোতি এবং এমন এক কিতাব, যা (সত্যকে) সুস্পষ্ট করে । যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, তাদেরকে তিনি এর মাধ্যমে শান্তির পথ দেখান এবং নিজ ইচ্ছায় তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন এবং তাদেরকে সরল পথের দিশা দেন।” সূরা মায়েদা (৫):১৫-১৬। আর এই কোরআন লাইলাতুল কদরের রাতে নাজিল হয়েছিল বলে লাইলাতুল কদরের রাত এত মহিমান্বিত যে , এই এক রাতের ইবাদতের অন্য আল্লাহ অন্য এক হাজার মাস যা ৮৩ বছর ৪মাস ইবাদতের সমান নেকি দিয়ে দেন বান্দাদের আমলনামায়। এ ছাড়া বান্দা যখন কোরআন তেলাওয়াত করে তখন ফেরস্তারা আসমান থেকে দুনিয়াতে নেমে আসে তেলাওয়াত শুনার জন্য, এ ভাবে এক সময় ফেরেশতাদের ভিড় জমে যায় । তাই এই কোরআন যে কত মূল্যবান তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নাস্তিকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন ,আমি বহু সংখ্যক জিন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাঁদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলদ্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মতো বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর। সূরা আরাফ১৭৯। কোরআন শরিফ পাঠ ও শ্রবণ উভয়ই কল্যাণকর।পৃথিবীর যারা মুসলমান ধর্ম ও কোরআন নিয়ে গবেষণা করতেছেন কিম্বা করতে চান তাদেরকে বলবো আপনারা কোরআন পড়েন এবং এর অর্থ জানেন নিজস্ব ভাষায় । কোরআন এখন বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে বা হচ্ছে। তাই এখন বেশ সহজলভ্য আল কোরআন। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠীর পঠিত বিষয় হল এই কোরআন এবং কেয়ামত পর্যন্ত এটির জনপ্রিয়তা কমবে না ইনশাআল্লাহ।আর এ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক মানুষের জন্ম, মৃত্যু এবং মৃত মানুষকে জীবিত করার কথা ও উল্লেখ করেছেন, “আল্লাহই তোমাদের জীবন দান করেছেন । তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন । আবার তিনিই তোমাদের পুনরুত্থিত করবেন । তারপরও মানুষ অতি-অকৃতজ্ঞ!” সূরা হজ্জ আয়াত৬৬।এছাড়া সূরা আল বাইয়্যিনাহতে আল্লাহ জানিয়ে দেন,” কোরআন যে একটি পুর্ণাঙ্গ এবং চিরস্থায়ী কিতাব সে বিষয়ে ,”এতে (আল কোরআন ) চিরস্থায়ী শিক্ষা রয়েছে”।সামাজিক রীতিনীতির ব্যাপারে আল কোরআনে আল্লাহ পাক নির্দেশ দেন , মুমিনরা তো (পরস্পর) ভাই ভাই । অতএব (বিরোধ দেখা দিলে)তোমরা তোমাদের দু’ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দিও । আর আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যাতে তোমাদের প্রতি কৃপা করা হয় । ” সূরা আল হুজরাত১১।এই মহান গ্রন্থে নর ও নারীর অধিকার সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন, “আর পুরুষ হোক বা নারী, যে-ই মুমিন অবস্থায় সৎ কাজ করে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর বীজের ছিদ্র পরিমাণ ও অবিচার করা হবে না।” সূরা আন নিসা :১২৫। এছাড়া অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “পিতামাতা ও আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতামাতা আত্মীয়স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীর ও অংশ আছে, তা অল্পই হোক বা বেশিই হোক, এক নির্ধারিত অংশ।”(সূরা নিসা,আয়াত:৭)মহান আল্লাহ তাআলা সমাজের ঘৃণিত কাজ সুদ সম্পর্কে কোরআনে বলেছেন, “আল্লাহ সুদকে বিলুপ্ত করেন এবং দানকে সমৃদ্ধ করেন, বস্তুত: আল্লাহ কোন মহাপাপীকে আদৌ ভালোবাসেন না।” সূরা আল বাকরাহঃ২৭৭। আল কোরআনে আল্লাহ এক ভবিষ্যদ্বাণী ও করেন, “তিনি দুটি সমুদ্রকে মিলিয়ে দিয়ে উভয়কে একীভূত করবেন।” সূরা আর রহমান:২০। আজকে আটলান্টিক মহাসাগরকে ভূমধ্যসাগরের পানির সঙ্গে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। কিন্তু উভয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্য চোখে পড়ে । ভূমধ্যসাগরের পানি অধিক লবণাক্ত, বিস্বাদ ও ঘন কিন্তু এক হাজার মিটার গভীরে পৌঁছার পর ও উপরের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়নি । এটাই মহান আল্লাহর ক্ষুদ্রতি। এই দুই সুমদ্র এক হয়ে চলছে বাধাহীন ভাবে এই বিশ্বের বুকে, মহান আল্লহর ভবিষ্যৎ বাণীর প্রমাণ আমরা কি করে পাই ভাবুন । তাই সময় থাকতে মহান আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে সজাগ হোন সবাই ।যারা মুসলমান আপনারা জানেন বেহেশতে যাওয়ার প্রথম শর্ত হল নামাজ, আর এই নামাজ পড়তে হলে কোরআনের প্রথম সূরা ফাতেহা ছাড়া নামাজ হয় না, তাই প্রতি ওয়াক্তে এই সূরাটি যদি পড়তে হয় তাহলে ভেবে দেখুন শুধু ফরজ নামাজেই একজন মুসলমান প্রতিদিন এই সূরাটি পড়েন সতেরো বার, আর এই সূরা ছাড়া তো কোন নামজই শুদ্ধ হবে না, তাহলে দৈনিক কতবার একজন মুমিন এই সূরাটি পড়েন । এই সূরা মানুষ এত বেশি পড়ে কিন্তু কই বিরক্ত হতে তো শুনিনি। স্বভাবত প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে এটি কি এমন সূরা যে বিরক্ত আসে না ? উত্তর খুব সহজ এটা কোন মানব রচিত সূরা নয় তাই । এছাড়া এই সূরা দ্বারা বিভিন্ন রোগের ও উপশম হয় । এখানে আমাদের মহান প্রভুর রহমত ও বরকত রয়েছে তাই এত মধুময় কোরআন যত পড়ি ততই ভালো লাগে । আল কোরআন এমন এক গ্রন্থ যা পড়লে বারবার পড়তে ইচ্ছা হয়,কারণ এটির লেখক হলেন স্বয়ং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, যিনি এই নিখিল বিশ্বের রব। আর এই গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠকের জন্য আল্লাহর রহমত নাজিল হয় এবংএই কোরআন কাল কিয়ামতে আল্লাহর কাছে পঠিত ব্যক্তির জন্য বেহেশতের সুপারিশ করবে। তাহলে এটা বুঝা স্বাভাবিক যে এই বই কোন সাধারণ বই নয়, এটি হল মানুষের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ আর বিশ্ববিধাতার সন্তুষ্টি লাভের একটি সহজ পথ। এই বইটি শুরু হয়েছে আমাদের রব মহান আল্লাহর নাম দিয়ে, প্রথম সূরা শুরু হয়েছে আল্লাহর প্রশংসার মাধ্যমে, আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলীর পরিচয় দিয়ে এবং ভালো কাজের প্রতিদানের কথা দিয়ে।মানব জীবন বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। আর এই সাধারণ সমস্যা গুলো আমি তুলে ধরার চেষ্টা করব। যেমন,যা চাই তা হচ্ছে না এই যে হতাশা, অনেকে অসুস্থ অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করতেছেন, মানুষের সব আছে কিন্তু খুব একাকীত্ব অনুভব করে মানুষ বিভিন্ন সময়ে,বড়ো শক্তির গ্রাসের কাছে ছোট শক্তির অসহায় বোধ করা, জীবনের অনেক কষ্টের হিসাব মিলাতে না পারা, নিজের বিপদসংকুল জীবনে সাহায্যকারীর ভীষণ অভাব বোধ করা, নিজের চেয়ারা নিয়ে অনেকেই তৃপ্ত নই , নিজের অসীম পাপ নিয়ে দুশ্চিন্তা, কখন ও সুনিশ্চিত বিজয়ের পথ ও অনেক দূরে চলে যায় , খুশির জন্য মানুষ হন্য হলেও কোন খুশির খবর আসছেনা , অনেক বড়ো পরিকল্পনা সফল হচ্ছে না , নিজের মানুষের বড়ই অভাব ইত্যাদি। আল কোরআন আমাদের এই বড়ো সমস্যার সমাধান নিয়ে বসে আছে কিন্তু আমরা একটি দুর্ভাগ্য জাতি যে, আমাদের সমাজে দুধের চাইতে মদের কদর বেশি। তাই এই মহামুল্যমান গ্রন্থটি প্রায় সবার ঘরে থাকলেও এটি আমরা পড়ছি না কিম্বা এর অর্থ জানার প্রয়োজন ও মনে করছি না । শুধু ঘরে রেখে দিয়েই দায়িত্ব শেষ মনে করছি। তাই এর বড়ো নিয়ামত থেকে সহজেই আমরা বঞ্চিত হচ্ছি প্রতিনিয়ত। কিন্তু এটি মানব জাতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে মহান আল্লহ তায়ালার পক্ষ থেকে । আর এর মেসেঞ্জার হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যিনি নিজেকে মানব জাতির জন্য একজন পথ প্রদর্শক হিসেবে আআবির্ভূত হয়েছিলেন মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে । তাই যুগে যুগে তার প্রয়োজন শেষ হবে না । তিনি এই কোরআন নাজিলকৃত সময়ে খুবই সতর্ক ছিলেন বলেই আমরা বিশুদ্ধ কোরআন পেতে সক্ষম হয়েছি । তাই নিঃন্দেহে বলা যায় এই বই এবং এর মেসেঞ্জার গোটা মানব জাতির জন্য এক নিয়ামতসরূপ আমরা লাভ করেছি। যতই এই বই নিয়ে গবেষণা হচ্ছে ততই মানুষ উপকৃত হচ্ছে দিনদিন।জ্ঞান আর আল্লাহর উপদেশ সন্নিবেশিত এই বইটি মানব জাতির কল্যাণ সাধনে সদা প্রস্তুত রয়েছে সব সময়। আল্লাহ যাদেরকে তার হেদায়ত নসিব করেছেন কেবল তারাই এই কোরআনের সংস্পর্শে আসতে পারেন এবং কল্যাণপ্রাপ্ত হন। এটাই আমদের ধর্মবিশ্বাস বলতে পারি । কোরআনের সূরা ইখলাস এ আল্লাহর একত্ববাদের কথা বলা হয়েছে। আর তিনি যে কারো মুখাপেক্ষী নন তাও বলা হয়েছে , তিনি কাউকে জন্ম দেননি, এবং তাঁকে যে কেউ জন্ম দেননি, এবং উনার সমতুল্য যে কেউ নেই এটি ও পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে। তাই যারা এখনো আল্লাহ সম্পর্কে অবগত হন নাই তাঁদের জন্য এটি একটি খুশির খবর , তারা মহান আল্লাহ সম্পর্কে ব্যাপক ধারনা এখান থেকে নিতে পারেন । এছাড়া সূরা আর রহমান এ আল্লাহ মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন ,এবং পৃথিবী চলাচলের কথা বলেছেন, এবং মানুষ ছাড়াও যে বৃক্ষ ও তৃণলতা আল্লাহর ইবাদত করছে তা জানিয়েছেন মানবজাতিকে। এবং তিনি যে আকাশকে সমুন্নত করেছেন একথাটিও বলেছে এখানে, তাছাড়া ব্যবসার ক্ষেত্রে ন্যায্য ওজনের হুকুম ও করেছেন আল্লাহ । তাহলে এ কথাটি বলতে পারি আমরা, আল কোরআনের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা আমাদের জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন। এছাড়া আমরা যে উনার নিয়ন্ত্রণের অধীন সে কথা ও আল্লাহ বলেছেন, “তিনি তাঁর বান্দাদের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণকারী, তিনি হলেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিষয়ে অয়াকিফহাল।” সূরা আন’আম -১৭।এবং সূরা আল ওয়াকিয়্বাতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “কিয়ামতের কথা, বেহেশত বাসিদের কি দিয়ে আপ্যাহিত করা হবে তার বিবরণ, এবং দোজকিদের কী শাস্তি দেওয়া হবে তার ও ব্যাখ্যা দিয়েছেন।”এককথায় বলতে পারি আমাদের দৈনিন্দন জীবনে যে ঘটনাবলি ঘটে থাকে এবং এর সমাধান আল্লাহ এই কোরআনের মাধ্যমে দিয়ে দিয়েছেন । এই বইতে দুনিয়া ও আখেরাত সম্পর্কে যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে পৃথিবির আর কোন বইয়ে তা পাওয়া যায়নি । আর তাই যারা এই বিষয়ে গবেষণা করতে চান তারা মুসলিম আর অমুসলিম হোন বইটি পড়ুন অবশ্যই জ্ঞান লাভ হবে, সাধনা সার্থক হবে শতভাগ নিশ্চিত ।জীবন চলার পথে কিছু সমস্যার কথা পূর্বে যে আলাপ করেছিলাম আসুন তার সমাধান দেখি কিভাবে দিয়েছেন আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালা তার পবিত্র কোরআন শরিফে, ১। আল্লাহ বললেন,”বিশ্বাসীরা সফল হয়” (সুরা মু’মিনুন২৩:১)২। আল্লাহ বলেন, “কষ্টের সাথে আছে স্বস্তি” (সুরা এলাম নাশরাহ ),৩। আল্লাহ বলেন,” মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব।” (সুরা রুম ৩০:৪৭),৪। আল্লাহ বলেন, “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম আকৃতিতে”(সুরা তিন ৯৫:৪),৫।আল্লাহ বলেন, “ভয় করোনা, আমি মুমিনদের সাথে আছি”(সুরা তা-হা ২০:৪৬),৬।আল্লাহ বলেন, “আমি তওবাকারীদের ভালোবাসি”(সুরা বাকারা ২:২২২),৭। আল্লাহ বলেন, “আমি কুরআনকে রোগের নিরাময় হিসাবে পাঠিয়েছি” (সুরা বনী ইসরাইল১৭;৮২),৮। আল্লাহ বলেন , “তোমার জন্য পরকাল, ইহকাল অপেক্ষা শ্রেয়”(সুরা দুহা৯৩:৪),৯। আল্লাহ বলেন, “আমার সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী” (সুরা বাকারা ২:২১৪),১০। আল্লাহ বলেন, “শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত দিবেন যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে” (সুরা দুহা 93:5), ১১। আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না” (সুরা ইমরান ৩:১৩৯),১২।আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী” (সুরা ইমরান 3:৫৪),১৩।এছাড়া আল্লাহ বলেন ,”যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে,তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ ” (সুরা তালাক ৬৫:৩)। আমরা যদি এই কথাগুলির অর্থ বুঝি আর নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করি তাহলে আমাদের জীবনে আর কোন সমস্যাই থাকতে পারে না।মহান আল্লাহ যে কত মহান সে বিষয়ে প্রমাণে নিম্নের এই আয়াতই যথেষ্ট, “আল্লাহ অণু পরিমাণ ও জুলুম করেন না, আর কোন পুণ্য কাজ হলে তাকে তিনি দ্বিগুণ করেন এবং নিজের নিকট হতেও বিরাট পুরস্কার দান করেন।” সূরা নিসা:৪০।তাই বিনয়ের সাথে একথাটি বলতে চাই যে, কোরআন একটি বিশাল জ্ঞানের বই আমি তার কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি মাত্র । এই বইটি যদি কেউ বারবার পরে নিশ্চিত সে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ ও পৃথিবীর ভূমণ্ডল আর নভোমণ্ডল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে ।আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ সৃষ্টি করেছি এবং নিশ্চয় আমি একে সম্প্রসারিত করেছি” (সূরা জারিয়াত, আয়াতঃ৪৭) আর তা আজকে বিজ্ঞানীরা শত শত বছর গবেষণা করে মেনে নিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, “মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর বুকের দুধ পান করাবে।” (সূরা বাকারা, আয়াতঃ২৩৩)।আজকের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ঘোষণা হল,” মায়ের দুধের বিকল্প নেই।” তাই এই বিজ্ঞানময় আল কোরআন মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ বলে আজকে প্রমাণিত। তাই এটিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে এর বেশি বেশি প্রচার দরকার। দেশের ভিতরে যদি একটি কোরআনের জাদুঘর করেন কোরআন প্রিয় পাঠকরা আর তা হোক সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে, তাহলে মানুষ এখানে কোরআনের জাদুঘর দেখতে আসবে আর নতুন করে কোরআনের বিভিন্ন বিষয়ের সাথে পরিচয় ঘটবে, মানুষের আকর্ষণ জন্ম নিবে এই বইয়ের ব্যাপারে।তখন মানুষের জানার ও আগ্রহ দিনদিন বাড়তে থাকবে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ইসলামের জন্য অনেক কিছু করেছেন, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনের জন্য এরকম একটা ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করবেন জাতি এই আশা করে বসে আছে । এই দেশের মুসলিম জনতা জানে আপনার ভিতর আর বাহিরের ধর্মীয় রং এক, তাই আপনি যদি কোন স্বপ্ন দেখেন বা দেখান তা আল্লাহর ইচ্ছায় বাস্তবায়ন হয় এটি মানুষের বিশ্বাস। এছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে প্রত্যেক মুসলমান ছাত্রদের জন্য কোরআন পাঠ ও অর্থ জানা বাধ্যতামূলক ঘোষণা করে এই যুগের কোমলমতি মুসলিম বাচ্চাদের জীবনে একটি আমূল পরিবর্তন আনতে পারেন। তাতেই তৈরি হবে সুশীতল কোরআনের পাখি । আর তখন অন্যায় অবিচার মুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখতে পারবেন যে কেউ। ধনী আর গরিবের ব্যবধান ভুলে যাবে মানুষ।আর দেশের প্রতিটি উপজেলাতে যদি কমপক্ষে একটি কোরআন গবেষণা কেন্দ্র করা হয় আপনার দ্বারা । তখন কোরআন সম্পর্কে মানুষ অনেক কিছু জানতে পারবে,আর এর যথার্থ মর্যাদা ও বৃদ্ধি পাবে । আমাদের স্বার্থে এই কোরআনকে করতে হবে সবার পঠিত বিষয় । এটি শুধু আলিমরা পড়বে এই রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবার ।দেশের প্রতিটি জেলাতে প্রতি বছর ঝাকজমক ভাবে যদি করা যায় কোরআনের মেলা। তবে লোক সমাগম ঘটবে সেখানে বিজ্ঞ আলিম দ্বারা কুরআনের অর্থ শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে মানুষ উপকৃত হবে ।আর যারা কোরআনের হাফিজ তাদেরকে সরকার থেকে যদি কোন স্বীকৃতিমূলক ডিগ্রি দেওয়া হয় তবে অনেক ভালো হয় বিজ্ঞজন মনে করেন । তাছাড়া অনেক কোরআনের হাফেজ আন্তর্জাতিক কোরআনের তেলাওত প্রতিযোগীতায় পুরস্কার নিয়ে দেশের মান সম্মান বাড়াচ্ছেন, তাদের ও সরকারি ভাবে একটা সম্মান জানানোর নীতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন অনেক গুণীজন । অনেকে আবার মনে করেন, আমাদের দেশে এরকম প্রতিযোগীতার আয়োজন করলে অনেক গুণী তেলাওয়াতকারী বেরিয়ে আসবেন । আর যে মাদ্রাসাগুলিতে এই শিক্ষা চলছে, সেখানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়াতে হবে, তবেই আল কুরআনময় একটি সুন্দর বাংলা আমরা দেখতে সক্ষম হব। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নিজে বলেছেন, “কোরআন পরাক্রমশালী পরম দয়ালু আল্লাহর তরফ থেকে অবতীর্ণ।” (সূরা ইয়া-সীন আয়াত:০৫)।পরিশেষে বলতে চাই এই পবিত্র আল কোরআনের মানুষ যতদিন মূল্য দিবে ততদিন মানুষ পথভ্রষ্ট হবে না বরং আল্লাহর রহমত এবং বরকতে পরিপূর্ণ থাকবে মানবজীবন। তাই অনুরোধ করব প্রত্যেক মুসলিম নরনারীকে আসুন কোরআনের অর্থ নিজের ভাষায় জেনে নেই এবং প্রতিদিন কোরআন পড়ার অভ্যাস গড়ি । আর আমরা এ থেকে নিজে উপকৃত হই এবং জাতিকে করি উপকৃত ।

লেখক ও কলামিস্ট,
Azizul.ambya@yahoo.co.uk