কক্সবাজারে সাংবাদিকদের নিয়ে ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের কর্মশালা

মৎস্যজীবী নারীদের মানবিক, আইনগত ও স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ৩:২৮ pm , আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ৩:৫৮ pm

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


ইমাম খাইর, সিবিএনঃ
মৎস্যজীবী পরিবারের নারী সদস্যদের অধিকাংশ অবহেলিত। অনেকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কেও অবগত নয়। পারিবারিক শান্তি, অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে তাদের মানবিক, আইনগত ও স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

রবিবার (১৯ নভেম্বর) কক্সবাজার পৌরসভার কনফারেন্স হলে ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম (বিবিএফ) আয়োজিত ‘এম্পাওয়ারমেন্ট অব ফিশারউইমেন ইন কোস্টাল চট্টগ্রাম এন্ড কক্সবাজার (ইএফসিসিসি)’ প্রকল্প বিষয়ে সাংবাদিকদের নিয়ে কর্মশালায় এসব কথা উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পৌরসভার মেয়র মোঃ মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নারীদের ক্ষমতায়নে প্রচুর কাজ করছে। পৌরসভার পক্ষ থেকেও আমরা অনেক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন-সংস্থাগুলোকে নারীদের অগ্রযাত্রার পথে অন্তরায়সমূহ চিহ্নিত করে, তা সমাধানে এগিয়ে আসা দরকার।

মৎস্যখাতে কর্মরত নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করায় ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামকে ধন্যবাদ জানান মেয়র মোঃ মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী। সেই সঙ্গে পৌর এলাকায় পরিচালিত কর্মসূচিসমূহে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া বলেন, আমাদের সমাজে জেলে ও মৎস্যজীবী পরিবারের নারীদের জীবনযাত্রা খুবই নিম্নমানের। স্বাস্থ্য সম্পর্কে তারা অবগত নয়। লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে সরকার যে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিচ্ছে, তা জানে না অনেকে। সঠিক তথ্য না জানার কারণে সহজ সরল নারীরা প্রতারিত হচ্ছে। সঠিক তথ্যটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

তিনি বলেন, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

অনুষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পের বিভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেন বিবিএফ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট) সোহাইল উদ দোজা।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে চারশো ব্যক্তির উপর পরিচালিত বেইজলাইন সার্ভে/স্টাডিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংস ঘটনার একটি চিত্র তুলে ধরেন তিনি।

তুলনামূলক চিত্রে দেখা গেছে, এসব ঘটনার মধ্যে ৫৮.৭৫ শতাংশ কমিউনিটিতে, ৪১.৫ শতাংশ পরিবারের বাইরে, ৪৪.৫ শতাংশ পারিবারিক মন্ডলে এবং ২৮.২৫ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে। ৬৭.৭৫ শতাংশ নারী সরাসরি কায়িক কাজে নিযুক্ত। ২৩.৭৫ শতাংশের আয়মূলক কাজে মালিকানা ছিল। ০.৭৫ শতাংশকে নেতৃস্থানীয় (ব্যবসা, মাঝি ইত্যাদি) ভূমিকায় পাওয়া গেছে।

তাছাড়া, বেইজলাইন সার্ভে/স্টাডিতে মৎস্যজীবী নারীদের অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।

তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক রীতিনীতির কারণে পারিবারিক ও সামাজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের কণ্ঠস্বর এবং অংশগ্রহণ সীমিত, নারীরা প্রায়শই পেশাগত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, স্তন্যদানকারী মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর আলাদা জায়গা নেই, কর্মস্থলে নারীরা অসুস্থ হলে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে সহায়তা পায় না, একই সময়ে গার্হস্থ্য দায়িত্ব এবং অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা নারীদের জন্য কঠিন।

প্রকল্প অবহিতকরণে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে সোহাইল উদ দোজা জানান, মৎস্যজীবী ও মৎস্যঘাতে কর্মরত ১০০০ নারীকে টার্গেট করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে কাজ করছে বিবিএফ।  ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় ২০২২ সালের ১ অক্টোবর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্প মেয়াদ ৩১ মার্চ ২০২৪ ইং।

তবে, কক্সবাজার পৌরসভা ও উখিয়া প্রকল্প এলাকাভুক্ত হলেও বাস্তবতা বিবেচনায় কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি, ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী, মহেশখালী এবং টেকনাফ উপজেলাকে প্রকল্পের আওতায় আনার পরামর্শ দেন অংশগ্রহণকারীরা।

নারী জেলেদের অধিকার, মৎস্যজীবীদের নানা সমস্যা, বর্তমান অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম শাহীন।

কক্সবাজারের পাশাপাশি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে জেলেদের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সিএনএন বাংলার সম্পাদক ও প্রকাশক তৌহিদ বেলাল।

উল্লেখ্য, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরাম শান্তিপূর্ণ সমাজের স্বপ্ন দেখে, যেখানে জনগণ বৈষম্য, সংঘাত ও দারিদ্রমুক্ত একটি সুখী, স্বাস্থ্যকর ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন অতিবাহিত করে। সামাজিক পরিবর্তন, দক্ষতা উন্নয়ন, এডভোকেসি, উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে সচেষ্ট বিবিএফ।