শাহনেওয়াজ জিল্লু:
মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার কথা বলে রেললাইন তৈরি করা হলো। কিন্তু এসব রেললাইনে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত মারা যাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সাথে আছে গরু ছাগল হাতির মতো অসংখ্য অবুঝ প্রাণীর নির্মম নিয়তি।
এরপরে আসি যোগাযোগ ব্যবস্থার আরও এক ভয়ঙ্কর মাধ্যম বিহঙ্গযানের বিষয়ে। এটি করতে আকাশ সীমা ও স্থলে বিশাল একটি রানওয়ে প্রয়োজন হয়। এসব রানওয়ে এবং আকাশসীমায় কত মানুষের প্রাণী ঘটেছে তার হিসেব নেই। সেই সাথে মারা যাচ্ছে অসংখ্য অবুঝ প্রাণী।
একইভাবে সড়ক পথের কথা যদি বলি এখানে আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
একই ভাবে ইঞ্জিনচালিত নৌযানের কথা যদি সেখানেও একইদশা বিরাজমান।
বিদ্যুত, ইন্টারনেটসহ প্রযুক্তির আরও অন্যান্য আবিষ্কারগুলোর মারাত্মক ঝুঁকির গল্পতো আরও বিস্তর।
এইযে রেল বিমান গাড়ি নৌযান ইত্যাদি এগুলোকে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির স্মারক হিসেবে আমরা ভাবছি এর নেপথ্যে রয়েছে অসংখ্য নিরীহ অবুঝ প্রাণ প্রকৃতির নির্মম বলিদান। মানুষ যেহেতু এসবের আবিষ্কারক সেহেতু এগুলোর সুবিধা অর্জনকারী মানুষগুলোর প্রতি আমার নুন্যতম ভালবাসা নেই। রয়েছে একরাশ ঘৃণা। এবং সুবিধা নেওয়া মানুষগুলো যদি কখনও এসবের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে আমি পুলকিত হই। আনন্দ পাই। এদের প্রতি আমার নুন্যতম মমতার উদ্রেক করে না। কিন্ত এই নিরীহ কিছু আদম সন্তান ও অবুঝ প্রাণী এসব আবিষ্কার থেকে নিয়মিত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে এর দায় কে নিবে? এসব আবিষ্কারের সময় কি অবুঝ এসব প্রাণীর কথা মাথায় রাখা উচিত ছিলো না? তারা কথা বলতে পারে না। তবে ভালো মন্দ তারাও বুঝতে পারে। কঠিন প্রতিশোধ এরা নিবে একদিন। আমিও অভিশাপ দিচ্ছি এসব কুবুদ্ধি চর্চার মাধ্যমে কুআবিস্কারকারী মানব সম্প্রদায়ের প্রতি।
সম্প্রতি কক্সবাজারে রেল লাইন তৈরি করতে গিয়ে অসংখ্য নিরীহ প্রাণী তথা হাতী মারা গেছে। যার বেশিরভাগই পরিকল্পিত হত্যার শিকার। এছাড়াও দুয়েকদিন আগে কক্সবাজার রানওয়েতে বিমানের ধাক্কায় দুটি গরুকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগেও ছোটো বড় অনেক ঘটনাই আছে। উক্ত ঘটনায় আমাদের মিডিয়া ও স্যোসাল মিডিয়ার এক্টিভিস্টদের ভুমিকা আমাকে চরম ভাবে হতাশ করেছে। তারা বিমানে থাকা 94 যাত্রী অক্ষত থাকায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে। কিন্তু দুটি নিরীহ প্রাণীকে বিনা অপরাধে যেভাবে হত্যা করা হলো এর জন্য কাউকেই আইনের আওতায় আনার বিষয়ে টু শব্দটিও করেনি। কেনো করেনি? হয় অজ্ঞতা; না হয় ধ্বংসবাজ বেনিয়াগোষ্ঠীর তাবেদারী। এছাড়া আর কিছুই নয়। আমি বরং ওই 94 দানবের প্রাণের বিনিময়ে যদি ওই দুটি গরু প্রাণে রক্ষা পেতো তাহলে কষ্ট কিছুটা কম পেতাম তো বটেই সাথে অনেক বেশিই খুশি হতাম। প্রকৃতি যেনো তাদের সঠিক শিক্ষা দেয় সেই আশায় থাকলাম।
অবাক করা বিষয় হলো- কেউ এখনও পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে সিরিয়াস নয়। অথচ এদেশে কত শত সরকারী বেসরকারী সংস্থা কাজ করছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা সহ আরও কত কিসিমের কথিত প্রাণ প্রকৃতি প্রেমী সংস্থা রয়েছে। এরা কেউই দুষ্কৃতীকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসছে না। নুন্যতম কথাটুকুও বলছে না। ক্ষতিগ্রস্ত এই প্রাণ প্রকৃতি কি আপনাদের বদলা না নিয়ে ছেড়ে দিবে বলে ভাবছেন? একদম ভুল করছেন।
আমি মনেকরি এধরণের প্রতিটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত। মামলার নিষ্পত্তি হোক না হোক সেটা বড় কথা নয়। বরং মামলার মাধ্যমে প্রতিটি ঘটনাই নথিভুক্ত করা হোক। প্রয়োজনে সরকারকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাদা করে প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা মন্ত্রণালয় করা হোক। সেভাবে আইন রচনা করা হোক।
কেউ কেউ বলছে- রানওয়েতে গরু ছাগল প্রবেশ করলো কীভাবে? এদের প্রশ্ন শুনে মানবরুপি এসব হিংস্র জানোয়ারদের প্রতি চরম ঘৃণার উদ্রেক করে। মন চায় এদের মুখে থুথু ছিটাই। নিরীহ প্রাণীর বিচরণ ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ করতে চাইছেন কোন অধিকারে? যেখানে এমন প্রাণ প্রকৃতির অস্তিত্ব বিচরণ এবং প্রাণহানীর শঙ্কা রয়েছে সেখানে এমন কোনো প্রযুক্তিগত আয়োজন কোন যুক্তিতে? আজ নিরীহ এসব পশু পাখি প্রাণীগুলো যদি কথা বলতে পারতো, আইন আদালতের সুবিধা নিতে পারতো তাহলে কেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো একবারও ভেবেছেন?
দয়া করে নতুন করে ভাবুন। পৃথিবীটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবেন না আর। দুর্বলদের প্রতি সদয় হউন। আর নির্দয় হয়েন না। বন্ধ করুন প্রযুক্তি চর্চা ও সুবিধার নামে প্রাণঘাতী এই নিষ্ঠুর আয়োজন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।