অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন
ডিসকভারী ইন্ডিয়ার লেখক এবং ভারতের সাবে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর মতে বৌদ্ধ ধর্মে মুর্তি পুজার কোন স্থান নেই। বুদ্ধের মৃত্যুর অনেক পরে বিদেশী প্রভাবে বৌদ্ধদের মধ্যে মুর্তি পুজার প্রচলন ঘটে। । গৌতম বুদ্ধের জন্মের পুর্বে ভারত বর্ষে নিরাকার ইশ্বরের বিশ্বাসের চরম বিকৃতি ঘটে।
‘মগের মুল্লুক’ এর আভিধানিক অর্থ ‘অরাজক রাষ্ট্র,’ যে রাজ্যে আইনের শাসন সু-প্রতিষ্ঠিত নয়, যেখানে যথেচ্ছাচার হয় ব্যবহারিক অভিধান-বাংলা একাডেমী)। দেশটির সাবেক নাম ছিল বার্মা, বর্তমান নাম মিয়ানমার। সাবেক আরাকানের পরিবর্তিত নাম রাখাইন। অধিবাসীরা রোহিঙ্গা মুসলমান নামে খ্যাত। প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মিয়ানমারের অধিবাসী। দেশটির শাসন ভার তাদের হাতে। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতম বুদ্ধ। তার ধর্মানুসারীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। বহুকাল পূর্ব থেকে জাতিগত সহিংসতার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব হরণ করার পর তাদের পৈত্রিক বাড়িঘর জালিয়ে-পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি তারা, বরং বিগত ২৫ আগস্ট থেকে নবপর্যায়ে মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠী শুরু করেছে রোহিঙ্গা নিধন ও উচ্ছেদ অভিযান, যা এখনো চলছে।একহিন্দু ধর্মগুরুর চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা থেকে কিছু
বর্ণনা……….“মঠস্থ লামাদের অনেকেই চিত্রাঙ্কনে বিশেষ পটু। ইহার পার্শ্বের ঘরটি অতি ক্ষুদ্র ও প্রবেশদ্বারা খুব ছোট, মাথা হেঁট করিয়া ঢুকিতে হইল। ঢুকিয়া যা দেখিলাম-তাহাতে মাথা ঘুরিয়া গেল। প্রায় দেড়শত খাপযুক্ত তলোয়ার, ২০/২৫ খানি ঢাল, ৮/৯ টি তিব্বতী বন্দুক, কতকগুলি ছোরা ও মধ্যস্থলে একটি সোনার সিংহাসনে সোনার বুদ্ধমূর্তি। ঘরের দুই কোণে দুইটি কালো পাথরের কলসী রহিয়াছে। অনুমানে বোধ হইল উহাতে গুপ্তধন সঞ্চিত আছে। … কোনো সাধু সন্ন্যাসীদের মধ্যে যে এতগুলি অস্ত্র ও এত অধিক ধনরত্ন থাকিতে পারে তা আমরা স্বপ্নেও ভাবি নাই।”(সূত্র: ‘কাশ্মীর ও তিব্বতে, স্বামী অভেদানন্দ, পৃষ্ঠা ১২৬) রামকৃষ্ণ পরমহংসের শিষ্য ও বিবেকানন্দের সহযোগী স্বামী অভেদানন্দ তার তিব্বত ভ্রমণের সময়ে বৌদ্ধ মঠের যে অস্ত্রসজ্জিতঅবস্থা প্রত্যক্ষ করেছিল, তা সে তুলে ধরেছিল তার ভ্রমণকাহিনীতে। উল্লেখ্য, এই তিব্বতী বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকেই শান্তির প্রতীক (!) হিসেবে নোবেল প্রাইজ দিয়েছে বর্তমানের কথিত বিশ্বনেতারা। বৌদ্ধদের দ্বারা মুসলিম নির্যাতনের বিষয়টি আড়াল করতেই ইউরোপ-আমেরিকার বিধর্মীচালিত মিডিয়ায় বৌদ্ধধর্মকে শান্তিরধর্ম বলে প্রোপাগাণ্ডা চালানো হচ্ছে। তাছাড়া অভেদানন্দের বর্ণনানুযায়ী লামারা শুধু অস্ত্র মজুদই করতো না, তাদের ধর্মীয় আচারও ছিল অত্যন্ত পাশবিক। “তিব্বতের প্রত্যেক শশ্মান বা গোরস্থানে একটি বৃহৎ প্রস্তরখণ্ড আছে। তাহার উপর শবদেহকে উলঙ্গ করিয়া উপুড় করিয়া শোয়ানো হয়। পরে একজন জল্লাদ লামা আপাদমস্তক দাগ দিয়া মন্ত্র উচ্চারণ করিতে করিতে বৃহৎতরবারি দিয়া টুকরা টুকরা করিয়া শবদেহকে কাটিয়া ফেলে, পরে ঐ সকল টুকরা শকুনি, গৃধিনী (তানকার) ও কুকুরদিগকে খাইতে দেওয়া হয়।অবশেষে মস্তকটি চূর্ণ করিয়া মস্তিষ্ক ও হাড়ের সহিত মিশাইয়া তাহাদিগকেই খাওয়ানো হয়। (সূত্র: ঐ, পৃষ্ঠা ১৮৬-৮৭) যে শান্তিবাহিনী কয়েক দশক ধরে পাহাড়ে গণহত্যা এবং সন্ত্রাস চালিয়েছিল, লামাদের মতোই তাদের অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বৌদ্ধ মঠগুলো। মিয়ানমারের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তিব্বতী লামাদের দ্বারা মৃতদেহের মগজ বের করার মতোই রাখাইন বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের শহীদ করে, মগজ বের করে রাস্তায় ফেলে রাখে। (নাউযুবিল্লাহ!)ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা নৃশংস গণহত্যাকারী চেঙ্গিস খান ছিল বৌদ্ধ, তার পৌত্র বাগদাদ ধ্বংসকারী হালাকু খান ছিল বৌদ্ধ। বাংলার ইতিহাসে ‘মগের মুল্লুকে’র জনক কুখ্যাত মগ নৌ-দস্যুরা ছিল বৌদ্ধ, আর সেসব মগ নৌ-দস্যুদের বংশধররাই হলো আজকের মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হত্যাকারী রাখাইন বৌদ্ধ সন্ত্রাসী সম্প্রদায়।
এ যাবত দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে এবং বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে বাধ্য হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বিশ্বে ভূয়শী প্রশংসা লাভ করেছে। তবে বাংলাদেশের কাঁধে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে মহা সংকট চাপিয়ে দিয়েছে তা কাটিয়ে উঠার ব্যবস্থা করাও তাদের ওপর নির্ভর করছে। অর্থাৎ মিয়ানমারের এসব শরণার্থীকে তারা যতদ্রুত তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবে, বাংলাদেশের জন্য ততই মঙ্গল বয়ে আনবে। এদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রদান করলেও ফিরিয়ে না নেওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া কঠিন। কেননা, অতীতের বহু রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ বহাল তবিয়তে বিদ্যমান।
প্রাসঙ্গিকভাবে আমরা রাখাইন তথা রোহিঙ্গাদের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতির প্রতি ইঙ্গিত করেছি মাত্র। আসলে আমার প্রতিপাদ্য“ যুলকিফল” সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা, যার সাথে গৌতম বুদ্ধের সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে; যিনি হচ্ছেন বার্মীদের ধর্মের প্রবর্তক। তাই প্রথমেই যুলকিফল এর কথায় আসা যাক।
যুলকিফল কে ছিলেন?
এটি একটি বহুল বিতর্কিত বিষয়। এ প্রশ্নের জবাব দিতে হলে পবিত্র কোরআনের তফসীর ও কাসাসুল আম্বিয়া কাহিনী এবং ইতিহাসের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। কেননা, পবিত্র কোরআনের সূরা আম্বিয়া ও সূরা সাদ এ যুলকিফল নামটি দুইবার উল্লেখিত হয়েছে। এর অধিক বিবরণ নেই। ফলে তিনি নবী ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। এজন্য কোরআনের ভাষ্যকার ও ইতিহাস লেখকগণের মধ্যে নামটি নিয়ে বিরোধ পরিলক্ষিত হয়। হাদীসেও তার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কাজেই বিষয়টি গোলকধাঁধায় পরিণত হয়েছে।
উপমহাদেশের কোটি কোটি বনি আদমের পথ প্রদর্শক হিসাবে অবতার রুপে গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব ঘটে নেপালের কপিলাবস্তু নগরে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর কপিলাবস্তুর জনমনে তাঁকে নিয়ে নানা কুসংস্কার ও বিভ্রান্তির জন্ম নেয় । কালক্রমে এক মহৎ ব্যক্তির কল্পিত মুর্তির ব্যবসা জমে উঠে। ব্রাক্ষণ্যবাদ ভারত বর্ষের ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রন করায় গৌতম বুদ্ধের নিরাকার ইশ্বরের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে নির্মিত সেই মহান আদর্শ বিকৃত হয়ে যায়। এর উজ্জ্বল উপমা রাম ও রাবনের যুদ্ধ। রাম বহিরাগত আক্রমনকারী এবং রাবণ স্বদেশ রক্ষাকারী বীর যোদ্ধা, কিন্তু এই ইতিহাসকে মহাকাব্য রচনা করা হয়েছে। ভারত বর্ষের ইতিহাস বিকৃতির এটাই অন্যতম সূত্র।
আসলে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা , তাঁর জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য, মুল্যবোধ সবই বিকৃতির অতল গ্রাসে তলিয়ে যাচ্ছে।স্বামী বিবেকানন্দ বিশেষ উদ্যোগী হয়ে গৌতম বুদ্ধ বিষয়ে যে সব বক্তব্য শিকাগোর ধর্ম সভায় তুলে ধরেছিলেন তার সবই অন্ধের হাতি দেখার মত। উদ্ধোধন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ”ভগবান বুদ্ধ তাঁর বাণী” বইটি পড়লেই জানা যায়। গৌতম বুদ্ধ যে যুগে আবির্ভুত হয়ে মানব জাতির উপর যেরুপ প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হয়েছিলেন, সে যুগের কোন নাস্তিকের পক্ষে তা ছিল অসম্ভব। বিশিষ্ট সাহিত্যিক আখতার ফারুক প্রায় একুশ বছর আগে তাঁর “জাতীয় সংস্কৃতির রুপান্তর’ নিবন্ধে গৌতম বুদ্ধের ইশ্বরাবতার বা ভগবান হবে তবে তাঁকে আবার সত্যের অনুসন্ধানে ঘুরে বেড়াতে বা সাধনায় মগ্ন হতে হবে কেন?
মুলতঃ গৌতম বুদ্ধ ভগবান অথবা নাস্তিক , অথবা অজ্ঞেয়বাদী এর কোনটাই ছিলেন না । ব্রাক্ষণ্যবাদীরা যারা নিজেরাই একসময় বেদ বিকৃত করেছে, প্রথমে তাঁকে বেদ বিরোধী অতএব নাস্তিক বলে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। কিন্তু গৌতম বুদ্ধের পরিচয়ে দেখা যায়, তিনি নাস্তিক বা ভগবান কোনটাই ছিলেননা বরং তিনি একজন মার্গাধ্যায়ী বা পথ প্রদর্শক ভাববাদী ছিলেন। ঐ শিলালিপি গুলোতে আরো জানা গেছে গৌতম বুদ্ধ এক প্রশ্নের জবাবে জানান তিনিই একমাত্র মার্গাধ্যায়ী নন, তাঁর পূর্বেও মার্গধ্যায়ী বা নবী এসেছেন এবং পরে ও আসবেন( আর্য রহস্য – নাসীর আহমেদ)তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মমত প্রচার করবেন।|(The Gospel of Buddha by corus p. 117-18)কথাটি ইসলামী ভাবতত্ত্বের সাথেই বেশী মিল।
আদম নুহ (মনুহ), আব্রাহীম(আব্রাহাম) মুসা(মুজেস), মরিয়ম পুত্র ঈসা(যীশু) গৌতম বুদ্ধ সহ অজস্র নবী বা সমাজ বিজ্ঞানী যে ধারাটিকে অবলম্বন করে মানব জাতিকে সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন- হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সেই ধারাকেই পরিপুর্নতা দান করেছেন মাত্র। বৌদ্ধ ধর্মের অপর এক প্রামাণ্য গ্রন্থ ’দিঘা নিকায়া’ তেও মুহাম্মদের সর্বশেষ মার্গধ্যায়ী বা আখেরী নবীর হবার প্রমাণ আছে। ” মানুষ যখন বুদ্ধের ধর্ম ভুলিয়া যাইবে, তখন আরেক বুদ্ধ আসিবেন, তাহার নাম ” মৈত্তেয়” (সংস্কৃত মৈত্রেয়) । অর্থাৎ শান্তি ও করুণার দূত। কবি গোলাম মোস্তফা তাঁর বিশ্বনবী গ্রন্থে মৈত্তেয় শদ্বের ব্যাখ্যায় লিখেছেন- এই শান্তি ও করুনার বুদ্ধ (মৈত্রেয়) যে মহাম্মদ, তাতে কোন সন্দেহ নাই। কোরআন শরীফে মুহাম্মদ(সাঃ) এর বিশেষণ ও অবিকল এরুপ রয়েছে ” রাহমাতাল্লিল আলামীন” সারা বিশ্ববাসীর জন্য করুনা ও আশির্বাদের মূর্ত প্রতীক।এ ছাড়াও ব্যপারটা খৃস্টানদের বাইবেলে ,পার্সীদের জিন্দাবেস্তায়, ইহুদীদের তাওরাতে অনুরূপ ভবিষ্যত বানী ঘোষিত হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধ শুধু ইশ্বরের নির্বাচিত দূত ছিলেন না, বরং তিনি প্রাচীন ভারতে সনাতন ইসলামের একজন বিশিষ্ট নবী তথা রাজ প্রতিনিধি ছিলেন। থাইলেন্ডের মাহিদুল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডঃ ইমতিয়াজ ইউসুফের ” The Encounter Between Islam and Buddhism নিবন্ধে উল্লেখ আছে The Encounter Between Islam and Buddhism “wbe‡Ü D‡jøL Av‡Q ,Ó More recently, Prof, Hamidullah absences that in line with the Quranix view of Propethood, The Buddha can be regarded as one among the prophets. অর্থাৎ ডঃ হামিদুল্লাহ্ কোরআনের দৃস্টিকোন থেকে মন্তব্য করে্েরছন য়ে, গৌতম বুদ্ধ কোরআনে বর্ণিত পুর্ববর্তী নবীদের একজন হতে পারেন। হামিদুল্লাহর মন্তব্য তুলে ধরে , The Muslim reader wj‡L‡Q, According to him the mention of the big tree in chapter 95 vers-1 of the Quran allowed to the prophet hood of the Buddha , He comes to his conclusion since Buddha is said to have received his enlightens under a wild big tree. And that the big tree does figure prominently in the lines of any named prophets অর্থাৎ তাঁর মতে কোরআনের ৯৫ সুরার প্রথম আয়াতে বুদ্ধের নবীত্ব অনুমোদন করে। কারণ তিনি একটা প্রাচীন অশ্বথ্ব গাছের তলায় জ্ঞান লাভ করেছিলেন। কিন্তুু কোরআনের আর কোন নবীর নামের সঙগে ঐরুপ বৃক্ষের যোগের উল্লেখ পাওয়া যায়না। কোরআনে অশ্বথ্ব গাছকে ”তীন” গাছ বলা হয়েছে। এমন নামের পার্থক্য খুবই স্বাভাবিক। এই তীন গাছের উল্লেখ শুধু শুধুই হয়নি, তাঁকে কেন্দ্র করে কোন নবী বা তৎকালিন সমাজ বিজ্ঞানীর কর্মকান্ড নিশ্চই জড়িয়ে থাকা চাই। কোরআনে জয়তুন বা তুর পাহাড়ের পাদ দেশের গাছকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন নবীর বিশেষ কর্মকান্ড জড়িয়ে আছে। এজন্য প্রফেসর হামিদুল্লাহর গবেষণা খুবই অর্থবহ।এই তীন গাছটি কি? এ নিয়ে আজ পর্যন্ত তফসিরকাররা একমত হতে পারেনি। কেউ বলেছেন আনজির গাছ, কউ বলেছেন ডুমুর গাছ, কেউ বিরোধ এড়াতে বৃক্ষবিশেষ বলে এড়িয়ে গেছেন। অথবা পুর্ববর্তী ভষ্যকারদের উক্তি উল্লেখ করেই দাযিত্ব শেষ করেছেন। তারা নতুন করে গবেষনায় লিপ্ত হতে চাননি। আসলে ”তীন” শদ্বের অর্থ তুচ্ছ বীজ বা সুস্বাদু নয়। ডুমুর যদিও তুচ্ছ তবুও এতটা বিস্বাদ নয়। মানুষ ডুমুর রান্না করে খায়। কিন্তু মানুষ আসুদ ফল খায় না। আসুদ ফল,ফল হিসেবে ডুমুর ও বট ফলের থেকে আকারে ছোট । এর দানা সর্বাধিক তুচ্ছ। কিন্তু এই তুচ্ছ দানা থেকে মহীরুহের মতো জন্ম নেয় বিশাল বৃক্ষ।এই বিশাল অশ্বথ্ব গাছের তলায় নবী যুলকিফল বা কপিলাবাসী নবী গৌতম বুদ্ধ ওহী বা প্রত্যাদশে লাভ করেন। এখান থেকেই প্রাচ্য জ্ঞানালোক উদ্ভাসিত হয়। অশ্বথ্ব মানে হচ্ছে এমন গাছ যা বহুকাল বেচেঁ থাকে।এ্ই অশ্বথ গাছ বোধি বৃক্ষ নামে পরিচিত। এই বোধি বৃক্ষ কোরআন নাজিল হবার সময় পর্যন্ত বর্তমান ছিল।”) সুরা তীনের মর্মকথা নাসীর আহমেদ। এই যুলকিফল নবীর কথা কোরানের সুরা আম্বিয়ায় ৮৫ নং আয়াতে ইসমাঈল ও ইদ্রিস দুই নবীর সংগে যুলকিফল নবীর কথাও বলা হয়েছে।কিফল ও কপিলাবাসী নবীর কথা ”সুরা সাদ” এও উল্লেখ আছে। সুরা সাদ এর ৪৮ নং আয়াতে ইসমাঈল ও ইয়াসার সাথে যুলকিফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তীন বৃক্ষের মতোই যূলকিফল নবী সম্পর্কে কোরআনের ব্যাখ্যা কারীরা কোন সুনির্দ্দিস্ট অভিমত ব্যক্ত করতে ব্যর্থ । অথচ কোরআনে এই নবী সম্পর্কে একাধিক স্থানে উল্লেখ রয়েছে।
গৌতম বুদ্ধ একজন মহান সাধক ও সংস্কারক ছিলেন। তার মানবতাবাদের কথা এবং তার মানব সম্পর্কিত অমিয়বাণী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বার্মার বৌদ্ধরা মুখে উচ্চকণ্ঠে আওড়াতে থাকে এবং সে দেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি সহিংসতার স্টিম রোলার প্রয়োগ করে তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিচ্ছে, গণহত্যা চালিয়ে উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে লাখে লাখে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।গৌতম বুদ্ধকে বলা হয়, বিশ্বমানবপ্রেমিক, শান্তিরদূত। খ্রি. পূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে তিনি নেপালের কাপল নামক স্থানের রাজা শুদ্ধধনের গৃহে জন্ম গ্রহণ করেন এবং খ্রি. পূর্ব ৪০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার আসল নাম ছিল সিদ্ধার্থ। তিনি জাতপাতের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি খোদ শহরে শহরে এবং বস্তিতে বস্তিতে গমন করে ঘুরে ঘুরে তার আকীদা বিশ্বাস বা মতবাদ প্রচার করতে থাকেন এবং বৌদ্ধ মতবাদকে দূরদুরান্ত পর্যন্ত পৌঁছান। তবে কোনো কোনো গ্রন্থে গৌতম বুদ্ধের যুগ খ্রি পূর্ব ৪৮৬-৫৬৬ শতক উল্লেখ করা হয়েছে।
খুব সম্ভব নবী যুলকিফল আরব থেকে দুরে আমাদের এই ভারত বর্ষে আবির্ভুত হওয়ায় এই নবী সম্পর্কে তথ্যের অপ্রতুলতা আরো বেশী প্রকট। ব্রাক্ষন্যবাদের সংগে তীব্র সংঘাতে কপিলাবাসী বুদ্ধের ধর্মমত সফল হলেও পরবতী কালে বুদ্ধের অনুসারীদের মধ্যে যে চরম শিথিলতা ও বিকৃতি দেখা দেয় তা ব্রাক্ষন্যবাদের মোকাবিলায় প্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলে। পরিণামে উৎস ভুমি ভারত বর্ষেই বৌদ্ধদের প্রানান্তকর দশা ঘটে। রাজা অশোকের হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে বোদ্ধ ধর্ম গ্রহণের প্রাক্কালে যে বীভৎস গণহত্যা , রক্তপাত হয়েছিল সেই যুদ্ধের মুল কারণ আজো ঐতিহাসিক গন সঠিক ভাবে উদ্ঘাটন করতে পারেননি।হতে পারে যুলকিফল নবীর অনুসারীদের সাথে রাজা অশোকের সেনাবাহিনীর অসংখ্য ধর্মযুদ্ধ হয়েছিল। গৌতম বুদ্ধ প্রচারিত তাওহিদ আদর্শের অনুসারীদের পরাস্ত করার জন্য মুর্তি পুজারক রাজা অশোক বারবার যুদ্ধ করেছেন। অবশেষে অশোক তার দলবল সহ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে নিরাকার ইশ্বরের ধর্ম তথা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেন।পরবর্তীতে কয়েক যুগ ধরে ভারতকে রাজা অশোকের পুন্য ভুমি বলা হতো আজো রাজা অশোকের স্মৃতিঐতিহ্য নিয়ে ভারত গর্ব করে থাকে। রাজা অশোক ও তাওহীদের ধর্ম নবী যুলকিফলের ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের কট্টর অনুসারী ছিলেন। বোদ্ধের কাকরওয়াডিতে অবস্থিত দুইশত বৎসরের প্রাচীন একটি বৌদ্ধ ধর্মশালার স্তম্ভে ডোনারের নাম রাখা হয়েছিল আল্লা রাখা। বিশাল এবং প্রাচীন মন্দির অথচ কোন মুর্তি নেই। অল ইনডিয়া আর্য সমাজের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী স্বামী অগ্নিপ্রসাদ জামায়াতে ইসলামী হিন্দের ওয়েস্ট ইসডিয়া কনফারেন্সে বলেছেন,” ইসকো পুজো উসকো পুজো ,কিউ পুজেগা ? হযরত মোহাম্মদ আওর গৌতম বৌদ্ধ এক আল্লাহ কা পূজারী থে, আও হাম সব এক হোকর তাওহীদ কি সাথ চলে।”
বস্তুতঃ কোরআন মজিদে উল্লেখিত যুলকিফল যদি গৌতম বুদ্ধেরই নাম বলে সাব্যস্ত হয়ে থাকে তা হলে তিনি দুনিয়ার পূর্ব দিগন্তে আল্লাহর প্রেরিত অন্যান্য নবীর মতো একজন নবী ছিলেন যেমন জনৈক ভারতীয় ভাষ্যকারের অভিমতের কথা কাসাসুল কোরআন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। এ তথ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষভাবে পরম আনন্দ ও গর্বগৌরবের কথা। আর যদি বুদ্ধকে যুলকিফল সাব্যস্ত করা সম্ভব না হয় তাহলেও নেপালের কাপলে জন্ম গ্রহণকারী বুদ্ধ প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মূল্যবান বাণী চিরন্তনীগুলো দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তার মানব প্রেম ও জীবে দয়ার শিক্ষা বুকে ধারণ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রতি অতীতের সকল নির্যাতন ও বর্বরবর্গীপনার জন্য দোষী অভিযুক্ত বৌদ্ধদের ঈশ্বরের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং সম্মানজনক উপায়ে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানের মাধ্যমে, বুদ্ধের আশীর্বাদ লাভে এগিয়ে আসার আহবান রইল। বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী পুরাতন ও বর্তমান সকল রোহিঙ্গাকে যত দ্রুত সম্ভব, তাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরিয়ে নিয়ে সত্যিকারের মানবতা প্রদর্শন করা হোক, এ কামনা করি।