মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন, বাঁশখালী, (চট্টগ্রাম): বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি-ছনুয়া বেইলি সেতুতে চলাচলে জনসাধারণের ভোগান্তির শেষ নেই। যান চলাচল তো দূরের কথা, জনসাধারণের হাঁটাচলাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে কোন না কোন দূর্ঘটনা। এ পর্যন্ত সেতুটি পারাপার হতে গিয়ে পাটাতনে পা আটকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ ও স্কুলছাত্রী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। অবশেষে এলাকার কিছু উঠতি বয়সী তরুণ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ দিয়ে সেতু মেরামতে এগিয়ে এসেছেন।
রবিবার ( ৭ নভেম্বর) দুপুর থেকে ছনুয়া ইউনিয়নের ছেলবন গ্রামের খোরশেদ আলী চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম, আরফাতুল ইসলাম, আবদুল কাদের, মোজাহিদ, রিদুয়ান সহ ২৫ থেকে ৩০ জন তরুণ নেমে পড়েন সেতু সংস্কারে। তাদের সহযোগিতা করে হাত বাড়িয়েছে ‘খোরশেদ আলী চৌধুরী পাড়া ইসলামি তরুণ কাফেলা’ নামের একটি সামাজিক সংগঠন। ওই সংগঠনের মোট ৩০ জন সদস্য স্বেচ্ছাশ্রমে সেতু সংস্কারে এগিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি আর্থিক সহযোগীতা করেছেন ছনুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী।
স্বেচ্ছায় সেতু মেরামত কাজে অংশ নেওয়া খোরশেদ আলী চৌধুরী পাড়া ইসলামি তরুণ কাফেলার সভাপতি দিদারুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ব্রীজটি পার হতে গিয়ে পাটাটনে পা আটকে প্রচন্ড ব্যথা পায়। বর্তমানে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও পুঁইছড়ি পণ্ডিতকাটা গ্রামের এক ছেলে মাথায় করে লাকড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পা ফসকে পড়ে যায়। বিষয়টি আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী সাহেবকে জানালে তিনি আর্থিক সহযোগীতা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। তিনি ৩০ হাজার টাকার বাঁশ কিনে দিয়েছেন। বাঁশের বেড়া বানিয়ে আমরা জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সংগঠনের ২৫ থেকে ৩০ জন সদস্য স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউ এসবের সমাধান দিচ্ছে না। অবশেষে উপায়ন্তর না দেখে নিজেরাই এগিয়ে এসেছি। আজকে পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। পুরোটা মেরামত করতে আরো দু-এক দিন সময় লাগতে পারে। বাঁশের সংকট হতে পারে।’
জানা যায়, আরবশাহ্ বাজার থেকে ১০০০ মিটার উত্তরে অবস্থিত পুঁইছড়ি-ছনুয়া স্টিল ব্রীজটি ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। লবণ বোঝাই ট্রলি চলাচলের কারণে ব্রীজটির পাটাতন নষ্ট হয়ে গেলে ২০১৭ সালে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মাওলানা জহিরুল ইসলাম ব্রীজটি সংস্কার করেন। কয়েক বছর যেতে না যেতেই লবণাক্ততার কারণে মরীচিকা ধরে যায় পাটাটনে। বর্তমানে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেতুটি। এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করেন ছনুয়া ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। তাছাড়া সেতুটি রাজাখালী ফৈজুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, রাজাখালী বিইউআই ফাজিল মাদরাসা, ছনুয়া কাদেরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রাজাখালী আরবশাহ্ বাজার, ছনুয়া মনুমিয়াজী বাজার যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম।
এ বিষয়ে বাঁশখালী উপজেলা প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘ঐটা শিগগিরই হয়ে যাবে। ঢাকা থেকে একটা টিম গঠন করছে। ঐটা ২-৩ দিনের মধ্যে ভিজিট করতে আসার কথা। প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার প্রাক্কলন প্রস্তুত করে পাঠিয়েছি। ৩৫ থেকে ৪০ লক্ষ টাকার প্রাক্কলন ঠিক আছে কিনা, নাকি আরো বেশি লাগবে সেটা দেখার জন্য ঢাকা থেকে এলজিইডির টিম আসবে। উনারা পরিদর্শনের পর অনুমোদন দিয়ে দেবেন আশাকরি। আশা করছি শিগগিরই হয়ে যাবে। ব্রীজটি লবণ বোঝাই ট্রলি চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লবণ বহন করার সময় লবণের নিচে পলিথিন ব্যবহার করলে আর ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।’
এ বিষয়ে জানার জন্য বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদুজ্জামান চৌধুরীকে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।