মোহাম্মদ ইলিয়াছ

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ইউএন‘র নিজের রুটিন দায়িত্ব পালনের বৃত্তের বাইরে গিয়েও গত এক বছরে নানা উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। বিশেষ করে মাধ্যমিক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, ঠিক একবছর আগে লোহাগাড়া উপজেলায় শরীফ উল্যাহ ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পরদিন থেকে তিনি লোহাগাড়ার বাস্তব চিত্র বুঝতে এবং করণীয় ঠিক করতে বিভিন্ন ইউনিয়নে চষে বেড়ান। তিনি সরকারি নানা উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, ভূমি অফিস পরিদর্শনের পাশাপাশি তাঁর আওতাধীন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পরিদর্শন করেন। বিগত এক বছরে ভ্রাম্যমাল আদালতের অভিযান চালিয়ে ৮৭টি মামলায ৩৫ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় ও ৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছেন। । তিনি নিয়মিত স্কুল-মাদ্রাসা পরিদর্শন করেন, শিক্ষক অভিভাবকদের সাথে দফায় দফায় মতবিনিময় করেন। উপজেলার ৫৫ টি স্কুল-মাদ্রসায় প্রতিদিন সিলেক্টেড ভোকাবুলারি এভ্রি ডে ফাইভ ওয়ার্ডস ও প্রাথমিকে এভ্রি ডে থ্রি ওয়ার্ডস চালু করেন এবং ফলোআপ করতে উপজেলা ভিত্তিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। পড়ার সময় শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসছে কিনা জানতে দৈবচয়ন ভিত্তিতে সান্ধ্যকালীন হোম ভিজিট করে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারকে সচেতন করেছেন। শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ভীতি তাড়িয়ে প্রীতি বাড়াতে তিনি রাউন্ডভিত্তিক মভ ( মাস্টার অব ভোকাবুলারি) টেস্ট, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের একাডেমিক বিষয়ের উপর ইউএনও ছাত্র-ছাত্রী অ্যাওয়্ার্ড এবং এসএসসি,দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য ইউসেট ( ইউএনওস‘ স্পেশাল ইভ্যালুয়েশন টেস্ট) পরীক্ষার আয়োজন করেন এবং বিজয়ীদের পুরস্কারও তুলে দেন। শ্রেণি কক্ষ পরিদর্শনের সময় তিনি উপস্থিত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন এবং বিজয়ীদের হাতে উইনার্স ব্যাগ নামের শিক্ষা-উপহার সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন। তিনি প্রত্যন্ত এলাকায় মা সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে শিক্ষার গুরুত্ব, ঝরে পড়া কমানো, বাল্যবিবাহ রোধ, কিশোর অপরাধের বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করে চলেছেন। তরুণদের স্মার্ট ফোনের আসক্তি ও মাদকের কালো থাবা থেকে বাঁচাতে ইউএনও শরীফ উল্যাহ ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশেও কাজ করেছেন। মাঝেমাঝে নিজ উদ্যোগে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন এবং প্রতিযোগীদের পুরস্কৃত করেন।

এ ব্যাপারে মভ ও ইউসেট-২০২২ প্রতিযাগিতার সেরা শিক্ষার্থী সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রজ্ঞা প্রদীপ্তা আচার্য্য বলেন,উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে ইউএনও স্যারের বিভিন্ন পদক্ষেপ অত্যন্ত যুগোপযোগী। এতে শিক্ষার্থীদের লড়াইয়ের মন-মানসিকতা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি, উদ্দীপনা ও আকাঙ্খা জাগ্রত করেছে।

উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার রুপন কান্তি নাথ বলেন, ইউএনও শরীফ উল্যাহ গত এক বছরে বিভিন্ন জাতীয় দিবসে উপজেলার শিল্পীদের নিয়ে সংগীত,নৃত্য, আবৃত্তি চর্চা প্রতিযোগিতা করে শিল্পকলার চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন।

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাস্টার এসকে শামসুল আলম বলেন ইউএনও শরীফ উল্যাহ একজন ক্রীড়ামোদী, ক্রীড়াবিদ ও ক্রীড়াসংগঠক। গত এক বছরে ফুটবলসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে উপজেলার ক্রীড়া উন্নয়নে বেশ অবদান রেখেছেন।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, শরীফ উল্যাহ সৎ, উদ্যোমী, নিবেদিত ও শিক্ষাবান্ধব একজন ইউএনও। বিগত এক বছরে উপজেলার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সফল বিচরণ ছিল।

উপজেলার দক্ষিণ সাতাকানিয়া গোলামবারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সমশুল আলম বলেন ইউএনও শরীফ উল্যাহ গত এক বছরে উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে যথেষ্ট আবদার রেখেছেন। শিক্ষার্থেিদর লেখাপড়ার মান উন্নয়নে বিভিন্ন পরীক্ষার আয়োজন ও সন্ধ্যাকালীন হোম ভিজিট করে যাচ্ছেন। যা পরবর্তীতে পাবলিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফলে প্রভাব ফেলছে।

লোহাগাড়া প্রেসক্লাব সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, শরীফ উল্যাহ একজন শিক্ষা-উন্নয়নবান্ধব ও দূনীর্তিমুক্ত একজন নির্বাহী কর্মকর্তা। বিগত এক বছরে উপজেলার মাধ্যমিক-প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্ন্য়নের পাশাপাশি অবৈধ বালুমহাল,বালুখেকো,কৃষি জমির টপসয়েল কাটা ও পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। আমি আশাবাদী সামনেও তাঁর এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ উপজেলা কমান্ড কাউন্সিলের কমান্ডার আকতার আহমদ সিকদার বলেন, ইউএনও শরীফ উল্রাহ একজন মুক্তিযোদ্ধা বান্ধব, ন্যায়পরায়ণ,কর্মদক্ষ, শিক্ষাবান্ধব ও ধৈর্যশীল একজন নির্বাহী কর্মকর্তা। গত এক বছরে তিনি উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বেশ অবদান রেখেছেন। বালুখেকো,মাটিখেকো ও পাহাড়খেকোর বিরুদ্ধে সবসময় তাঁর অবস্থান ছিল শক্ত। তিনি এলাকার বহু সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করেছেন। বীরমুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মানের চোথে দেখেছেন এবং তাদের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক ছিলেন।

বৃত্তের বাইরে গিয়ে এসব কেন করছেন জানতে চাইলে ইউএনও শরীফ উল্যাহ বলেন, দেশের জনগণের করের টাকায় আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। আমার বেতনও হয় জনগণের টাকায়। দেশের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে। তাছাড়া শিক্ষা নিয়ে আমার বিশেষ আগ্রহের কারণ হচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি সুশিক্ষিত, উন্নত ও স্মার্ট জাতি গঠনে শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই। একজন শিক্ষার্থী সঠিক গাইডলাইন ও যতœ পেলে এবং পড়াশুনায় একটু মনোযোগ দিলে সে অবশ্যই শিক্ষাজীবনে ভালো করবে। তার সুন্দর ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে। আমার এইসব দৌড়াদৌড়ি কিংবা শ্রমে যদি একজন শিক্ষার্থীর ভালো স্থানে যায়, উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে পারে তাহলে আমার মানসিক শান্তি মিলবে।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক ,আলহাজ্ব মোস্তফিজুর রহমান কলেজ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম