চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামে বাসা-বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে রাখা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্রে পাওয়া গেছে এডিস মশার লার্ভার সর্বোচ্চ উপস্থিতি। এসব পাত্রে এডিস মশার লার্ভার হার ৩৭ ভাগ। এরপর বাসা-বাড়ির ভেতরে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে পাওয়া গেছে ৩০ দশমিক ৩১ ভাগ এডিস মশার উপস্থিতি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। ১৩ দিনের এই জরিপে নগরীর ২১টি ওয়ার্ডে পাওয়া গেছে এডিস মশার প্রজননস্থল।

মঙ্গলবার জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। যেখানে আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইনের ভিত্তিতে মশক নিধনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে সিটি কর্পোরেশনকে ৯ দফা সুপারিশও করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক।

গত ৮ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত এডিস মশার ওপর জরিপ পরিচালনা করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চার সদস্যের একটি দল। এই সময়ে তারা নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশার প্রজননস্থল শনাক্তের পাশাপাশি এডিস মশার লার্ভার নমুনা সংগ্রহ করেন। এতে ২১টি ওয়ার্ডের ৩২০টি বাড়ি এবং ৪০০টি পাত্র থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাসা-বাড়ির পাশাপাশি পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র ও ফুলের টবে সবচেয়ে বেশি এডিসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।

জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৩২০টি বাড়ির মধ্যে ৯৭টিতে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ ৩০ দশমিক ৩১ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি লার্ভার অস্তিত্ব মিলেছে প্লাস্টিক কনটেইনার বা পাত্রে। ৪০০ কন্টেইনারের মধ্যে ১৪৮টিতেই লার্ভা শনাক্ত হয়, যা শতকরা ৩৭ ভাগ। এর বাইরে পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিক কন্টেইনারে জমানো পানিতে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ৬২ ভাগ, পরিত্যক্ত টায়ারে ১৮ দশমিক ৯১ ভাগ, প্লাস্টিক ড্রামে শতকরা ১৭ দশমিক ৫৭ ভাগ, মাটির পাত্রে শতকরা ৮ দশমিক ১১ ভাগ; পানির হাউস, ফুলের টব ও অ্যালুমিনিয়াম সিটে ৬ দশমিক ৭৬ ভাগ; প্লাস্টিকের বালতিতে ৩ দশমিক ৩৮ ভাগ এবং লিফটের গর্তে জমানো শতকরা ২ দশমিক ৭ ভাগ এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এদিকে এডিস মশার প্রজননস্থল ২১টি ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে ২ নম্বর জালালাবাদ, ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ৮ নম্বর শুলকবহর, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া, ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখানবাজার, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম, ১৬ নম্বর চকবাজার, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া, ২২ নম্বর এনায়েতবাজার, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গীবাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ও ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড।

বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের অভ্যন্তর ও আঙিনায় মশার প্রজনন উৎস নির্মূল করার লক্ষ্যে ব্যবহার্য পাত্র বা উৎসের পানি ৪/৫ দিন অন্তর অন্তর পরিবর্তন করা ও মাঝে মাঝে পাত্রের ভেতরের দিক ভালোভাবে ঘষে মেজে ধুয়ে নেওয়া। বাসা-বাড়ির আঙিনায় গাড়ির পুরাতন যন্ত্রাংশ, পরিত্যক্ত টায়ার, টিনের বা প্লাস্টিকের কৌটা প্লাস্টিকের বোতল, মাটির কলস, নারিকেলের খোসা, ফুলের টব/ট্রে ইত্যাদি ধ্বংস করা অথবা উৎসগুলোতে যেন পানি না জমে, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রতিদিন সকাল বেলা যতটুকু সম্ভব দরজা-জানালা খুলে ঘরে আলো-বাতাস প্রবেশ করানো এবং দরজা-জানালার পর্দা, ঝুলন্ত কাপড়-চোপড় নাড়ানো ও টেবিল, ড্রয়ার, খাট, আলমারির নিচে ঝাড়ু দেওয়া। বাড়িঘর অফিস-আদালতসহ যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দরজা-জানালায় পর্দা ব্যবহৃত হয় সেগুলো পাইরোথ্রোয়েড জাতীয় কীটনাশকে চুবিয়ে নেওয়া।

দিনের বেলা, বিশেষ করে সকালে ও অপরাহ্ণে মশার দংশন প্রতিরোধে যে কোনো রেপিলেন্ট ব্যবহার করা। ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করা, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিলবোর্ড প্রদর্শন, নিয়মিত মাইকিং, লিফলেট বা পোস্টার বিতরণ এবং কাউন্সেলিং করা।

এছাড়াও মশক নিধনের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশকের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা, লার্ভিসাইড এবং এডাল্টিসাইড সময়োপযোগী প্রয়োগ করা, সূর্যোদয়ের পরপর এবং সূর্যাস্তের পূর্বে এডালটিসাইড ফগিং করা, দক্ষ মশক নিধনকর্মী দ্বারা কীটনাশক ছিটানোর সময় মনিটরিং টিম গঠন করে সুপারভিশন জোরদার করা এবং সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠনপূর্বক আধুনিক ও সময়োপযোগী গাইড লাইনের ভিত্তিতে মশক নিধন কার্যক্রম করা।