অনলাইন ডেস্ক:

আগুন লাগার ১৮ ঘণ্টা অতিক্রম করার পরও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর এস আলম সুগার মিলে দাউদাউ করে জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট। খবর  কালবেলা

গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় লাগা আগুন রাত সাড়ে ১০টায় একবার নির্বাপণ করা গেলেও আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ফের দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ওই সুগার মিলে আগুন দাউদাউ করে জ্বলতে দেখা গেছে।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট শুরু থেকে কাজ করছে। পরে তাদের সঙ্গে কোস্টগার্ড ও বিমানবাহিনীর একাধিক ইউনিট যোগ দেয়। ১৬ ঘণ্টার চেষ্টাতেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন।

রিমোট দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা : মঙ্গলবার আগুনের লেলিহান শিখা আর গোডাউনের বাইরে ছড়ায়নি। সকাল সাড়ে ৭টায় নতুন করে আবারও শুরু হওয়ার আগে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সকাল সাড়ে ৯টা) রিমোট দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, অত্যাধুনিক যন্ত্র লুফ ৬০ দিয়ে রিমোটের সাহায্যে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সহযোগিতা করছেন ১২-১৫ জন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রতি মিনিটে ১ হাজার লিটার খুব স্পিডে মারা হচ্ছে। এটির সক্ষমতা প্রতি মিনিটে ৩ হাজার লিটার।

ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল মালেক বলেন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী। পরে যোগ দেয় নৌবাহিনীর একটি দল। রাত নয়টার দিকে যুক্ত হয় সেনাবাহিনীর একটি দল। রাত সাড়ে ১০টায় আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। কিন্তু সকাল থেকে আবারও আগুন নতুন করে বাড়তে শুরু করে। আশা করি বিকেলের মধ্যে আপনাদের সুখবর দিতে পারব।

চিনি গলে লাভায় পরিণত : এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, মিল চালু থাকা অবস্থায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি। গোডাউনে থাকা ব্রাজিল থেকে আমদানি করা এক লাখ টন চিনির কাঁচামাল ছিল। এগুলো রমজানকে সামনে রেখে আমদানি করা হয়েছিল। এখানে রিফাইন করে চিনিগুলো মার্কেটে যাওয়ার কথা ছিল।

এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান কর্ণফুলি নদীর পাড়ের ইছানগর এলাকায়। বিকেল ৪টার দিকে কারখানার একটি গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার সময় কারখানাটি চালু ছিল। সেখানে প্রায় সাড়ে ৫০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। আগুন লাগার পর কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুনের কারণে এসব চিনি গলে লাভায় পরিণত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য মারা পানিতে সেই চিনি মিশ্রিত হয়ে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা পানি আকারে সড়কের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মূলত গতকাল বলা হচ্ছিল আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু না, আসেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত আগুন একটি দেওয়াল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এর বেশিক্ষণ যদি এই আগুন জ্বলতে থাকে তখন তো ওই দেওয়াল ভেঙে ভয়ংকর রূপ নেবে। আশপাশে আগুন ছড়ালে বড় বিপদ হয়ে যাবে।

৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি : আগুন লাগার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শাকিলা ফারজানা বলেন, ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, রমজানকে সামনে রেখে এ গোডাউনে চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে, মজুদ করা এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।