-দিব্যেন্দু দ্বীপ

না, এসব কিছুই না,

কেউ ডেকে বলছে না, কেমন আছো?

নীরব সে আকুতির কেউ উত্তর করছে না,

একাকীত্ব এবং অবহেলা সইতে না পেরে

গলায় দড়ি দিয়ে আজ মারা গেলো যে বৃদ্ধ

তার জন্য কোনো শহর থমকে যাচ্ছে না।

আমার ব্লাড প্রেসার ১৫০-এর নিচে নামছে না,

ঈশপের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না,

বন থেকে মনে, মন থেকে কলমে

এরপর বইয়ে

গল্পগুলো প্রকাশ পাচ্ছে না।

না, এসব কিছুই না,

কেউ ডেকে বলছে না, কী করবা?

মাঝে মাঝে শরীর আর চলছে না।

আজকে হঠাৎ ফেরিঘাট মোড়ে

মাথা ঘুরে পড়ে গেলো যে রিক্সাচালক

তাকে কেউ ধরতে এগিয়ে আসছে না।

মানুষ ছুটছে আপন গতিতে, লক্ষ্যে,

প্রাণপণে, প্রতিষ্ঠিত হতে, আরও;

কেউ কারো ভালো চাচ্ছে না,

তবু ঈর্ষাকাতর একদল চাকরিজীবী

শিক্ষিত বন্ধু প্রাতঃভ্রমণ শেষে

চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় তুলছে,

কিন্তু ত্রিদিব স্ট্রোক করে হাসপাতালে থাকলে

দেখতে যাওয়ার সময়টা হচ্ছে না।

মানুষ একলা, কর্মে, বিভ্রান্ত, তবু ধর্মে,

চড়া দামে কিনে আনা ইলিশের পেটিটার

কোণা ভেঙে গালে দিতে দিতে

সাইদুল ভাবছে, চাকরিটা আর ভালো লাগছে না।

না, এসব কিছুই না,

কেউ ডেকে বলছে না, চলো,

না-হয় বাড়িতে মিথ্যা বলেই চলো,

আগে জীবনটা বাঁচুক,

তারপর আবার খাঁচায় দু’জনে সুন্দর সুন্দর

ছবি এঁকে ভোলাবে না হয় দু’জনকে।

রাষ্ট্রযন্ত্র পক্ষে না,

কোনো হিসেবই মিলছে না,

তিনশো টাকা মালিককে দিয়ে

একশো টাকা পকেটে নিয়ে

দিনশেষে অটোচালক কোরাইশি ভাবছে

বেহেশত আছে, তবু সাবধানে পা ফেলছে,

মরে গিয়ে কেউ বেহেশতে যেতে চাইছে না।

না, এসব কিছুই না,

পথভ্রষ্ট কুকুরটা রোজকার মতো হাঁটছে

আমার পিছে পিছে,

নিয়মিত হঠাৎ আমি শূন্য পকেটে,

অবশেষে কুকুরটাও বুঝে গেছেÑ

ওর আজ পাঁউরুটি খাওয়া হচ্ছে না।

আমাকে কারো কোনো কাজে আর লাগছে না।

ছেড়ে দিতে হবে আমার ঈশ্বর এক,

আমি ক্লান্ত পথিক,

প্রার্থনায় পেরে উঠব না মুমিনদের সাথে,

সুস্থ শরীরে, নিয়মে

ওরা উঠতে পারে পাঁচবার এবং প্রাঃতে।

ওদেরই কেউ কেউ পৌঁছে যাবে

আমারই সৃষ্টি করা ঈশ্বরের আস্তানায়,

নানান বাহানায়।

আমি সত্যি অনন্যোপায়, আবার ভিন্ন ভীষণ,

পরাজিত পথিককে

পথ চেনাতে পথে হয় যায় দেরি,

ওরা বলে, আমি নাকি নাস্তিক ভারী!

না তা নয়, এমন এক ঈশ্বরের

আখ্যান যে লিখতে পারে

সে নাস্তিক কীভাবে হয়?

কখনো নয়, জেনে রেখো তা কখনো নয়।

ঠিক কতটা ভালো না লাগা তৈরি হলে

ঠিক কতটা বেসামাল হলে

একটা কাক দিগি¦দিক হারিয়ে

এগারোশো ভোল্টেজের বিদ্যুৎ-এর তারে

ঝুলে পড়ে জীবন দিতে পারে

কোনো মানুষ কি তা বুঝতে পারে?

আমি এমন একটি কাককে

একদিন মরতে দেখেছিলাম।

আচ্ছা, ওটা কি দুর্ঘটনা ছিলো,

নাকি আত্মহত্যা?

অনেক আত্মহত্যাও কি দুর্ঘটনা নয়?

এমন আমার হয়,

ভালো না লাগার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গিয়ে ভাবি

এ জীবন না রাখলে কেমন হত?

মানুষ কি তখন ব্যর্থ ও কাপুরষ বলত?

আরও ভাবি- কিছু দায়িত্ব পালন এখনো বাকী,

নইলে জীবনটাকে আমার মনে হয় পুরোটাই ফাঁকি।