– নঈম আল ইস্পাহান

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।মগবাজার থেকে মৌচাকের উদ্দেশ্যে হাঁটছি।মৌচাক পৌঁছে কোথাও না তাকিয়ে সোজা আড়ংয়ের শো-রুমে চলে গেলাম।

সিদ্ধান্ত নিলাম শিখার জন্য একটা ব্রেসলেট কিনবো।কিন্তু কোনভাবেই পছন্দ হচ্ছিলোনা।এক সুন্দরী আপুর সহায়তা নিলাম।আপু কেইস কী বুঝতে পেরে হাসিমুখে পছন্দ করে দিলেন।

সোজা চলে গেলাম শাহবাগে ফুলের দোকানে।রেগুলার গোলাপ গুলো নাকি নেই।চায়না গোলাপ নিলাম।পিস পঞ্চাশ টাকা করে নিয়ে ফেললো।ভাবছি,এতো বেশি একটা গোলাপের দাম হলে প্রেমিকরা তো মরে যাবে।

গিফট ও ফুলগুলো একটা গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধের [সেকলোর] বক্সে নিলাম।ছোট একটা চিরকুটে লিখলাম “আমাকে কখনো ভুলে যেওনা”। গিফট পেপারে মুড়িয়ে নিলাম।রোকেয়া হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।যেকোন সময় শিখা চলে আসতে পারে।

দীর্ঘ একবছর পর শিখা আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে।ব্রেকআপের পর এটাই আমাদের প্রথম দেখা।খুবই অস্থির লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো,আজই প্রথম আমাদের দেখা হচ্ছে।আগে কখনোই তার সাথে আমার দেখা হয়নি।

পেছন থেকে এক ছেলে ডাক দিলো।বললো,আপনি তৌসিফ ভাইয়া না?আমি আপনার ফেসবুক ফ্রেন্ড।চিনতে পেরেছেন?

না সূচক মাথা নাড়লাম।ছেলেটি নাছোড়বান্দা।নিজেকে চিনিয়েই ছাড়বে।মোবাইল বের করে ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিষ্ট ঘেটে আমার আইডিতে ডুকে দেখালো।বললাম,এখন চিনতে পেরেছি।

ছেলেটি ঢাবির স্টুডেন্ট।কেন,কী কারণে আমি এখানে সবটা জিজ্ঞেস করলো।বললাম,তোমার ভাবীর জন্য অপেক্ষা করছি।কথাটা বলে মনে হচ্ছে বিপদ বেড়েছে।ছেলেটা যাবার নামই ধরছেনা।বললো,ভাবী কই?কল দেন।আসুক…

অনেক কষ্টে ছেলেটিকে বিদায় করলাম।রোকেয়া হলের সামনে পায়চারি করছি।টেনশনে থাকলে আমি সবসময়ই এমনটা করি।শিখা আসতে দেরি করছে।

একটু পর খেয়াল করলাম আমার দিকে লক্ষ্য করে কে যেন এগিয়ে আসছে।সামনে আসতেই চিনতে পারলাম শিখাকে।বুক কাঁপছে।মনে হচ্ছে এ যেন অপরিচিত কোন নারী।যার সাথে কথা বলতে গেলেই রেগে গিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে।

কেমন আছো,কতক্ষণ ধরে আছো এমন কোন কথা নেই।সোজা সামনে এসেই বললো,কই এনেছো?আমি থতমত খেলাম।কি আনার কথা বলছে শিখা আমার একদমই মনে নেই।

কই,আমার ডায়েরি কই?বলেছিলাম না,আমার ওটা ফেরত চাই।এতক্ষণে বুঝলাম।বাহানা ছাড়া শিখা কখনো দেখা করেনা।এবারের বাহানা ছিলো,তার আমাকে দেওয়া একটা ডায়েরি ফেরত দিতে হবে।জবাবে বললাম,এনেছি।ব্যাগে আছে।

চলো কোথাও বসি।

-না,বসতে পারবোনা।

চটপটি কিংবা ফুচকা খাবা?

-বললাম না কিছুই খাবোনা।আমার ডায়েরি দাও,চলে যাবো।

তোমাকে দারুণ লাগছে।আগের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দরী হয়েছো।

-ব্রেকআপের পর প্রত্যেকেরই তার প্রাক্তনকে সুন্দরীই মনে হয়।এটা কমন।

না।সত্যিই সুন্দরী হয়েছো।

এবার রেগেমেগে দাঁত কড়মড় করে বললো,কই আগে তো কোনদিন তোর সামনে কতো সেজেগুজে গেলাম জীবনেও তো সুনাম করলিনা।তোর মুখ দিয়ে তো কখনোই আমার সুনাম বের হয়নি।আজ কেনো তোর এতো সুন্দরী মনে হচ্ছে।

রেগে গেলে শিখা তুই তুকারি করে কথা বলে।তখন আমার ভীষণ মজা লাগে।তাকে যতো বেশি রাগাতে পারি আমার ততোই মজা লাগে।আর শিখার দাঁতগুলো দেখার মতো সুন্দর।একদম ছোট ছোট।ঠিক যেন ইঁদুরের দাঁতের মতো।

ব্যাগ থেকে গিফটের প্যাকেটটা বের করে শিখার হাতে তুলে দিলাম।শিখা বললো,কি এটা?বাচ্চাদের বুঝানোর মতো করে বললাম,তোমার ডায়েরি।পেপার মুড়িয়ে দিলাম।আর কিছু না।

ডায়েরি না এটা জানার পরও যখন শিখা গিফটটা নিয়ে তার ব্যাগে ডুকালো আমার সাহস বেঁড়ে গেল।ব্যাগ থেকে আমার ব্যবহার করা একটা লিপ জেল বের করে বললাম,এটাও তোমার।তুমি দিয়েছিলে।

এবার রীতিমতো মজা করা শুরু করে দিলাম।লিপ জেল নেওয়ায় আমি আবারও প্রশ্রয় পেলাম।শিখা মাঝেমধ্যে রেগে গেলে এই কথাটা বলে,”তোমাকে খেতে দিলে তুমি মাথায় উঠতে চাও”।

এখন অবস্থাটা হয়েছে তেমন।এবার ব্যাগে একটা কলম ও টিস্যুর প্যাকেট খুঁজে পেলাম।প্রথমে কলম দিয়ে বললাম,এটাও তুমি দিয়েছিলে।তারপর টিস্যুর প্যাকেট দিয়ে বললাম,এটাও তুমিই দিয়েছিলে।শিখা মিষ্টি হেসে সব ব্যাগে ভরে নিলো।

রোকেয়া হলের সামনে থেকে কথা বলতে বলতে আমরা ভিসি চত্বর ক্রস করলাম।অনেক অনুরোধ করলাম কোথাও একটু বসি।কোন লাভ হলোনা।শিখা বললো,চলে যাবো।খবরদার,আমার পিছু পিছু আসবেনা।

পিছু পিছু আসবেনা বলাতে আমি উল্টোটা বুঝলাম।পিছে পিছে আসো…!শিখা হাঁটছে।আমি শিখার পিছু পিছু যাচ্ছি।একটু পরপর জোর করে রাগ দেখানোর জন্য সে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে।আমিও থেমে যাচ্ছি।মনে হচ্ছিলো কোন নাটকের শুটিং হচ্ছিলো।

এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমরা নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে চলে গেলাম।পেছন থেকে গোপনে শিখার হেঁটে যাওয়ার ভিডিও করছিলাম।যেন শিখা বুঝতে না পারে।বুঝতে পারলে আমার কলিজা কেটে খাবে।

নীলক্ষেত গিয়ে শিখা দাঁড়িয়ে রইলো।আমিও একটু দূরত্বে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছি।মিনিট দুয়েক পরেও যখন সে নড়ছেনা আমার বুঝতে বাকী রইলোনা সে কি চাইছে।আমি ভদ্র ছেলের মতো সামনে গেলাম।

রাস্তার ছেলেদের মতো করতেছিস ক্যান?পিছু পিছু কী!আরেকবার পিছু পিছু আসলে আমি চিৎকার দিয়ে লোক জড়ো করে তোকে মাইর খাওয়াবো…

-না মানে এমনি তোমাকে এগিয়ে দিচ্ছি।আর কিছু না।

তোমার এগিয়ে দিতে হবেনা।আমি যেতে পারবো।তুমি তোমার মতো চলে যাও।

শিখা,একটা রিকশাওয়ালা মামার সাথে দরাদরি করছিলো।কিন্তু দরদাম ঠিক না হওয়াতে সামনে হাঁটতে লাগলো।আমি জানতাম না শিখা কোন জায়গায় থাকতো।তাই রিকশাওয়ালা মামার কাছে জিজ্ঞেস করলাম,একটু আগে যে মেয়েটা আসলো সে কোথায় যাওয়ার কথা বললো?রিকশাওয়ালা মামা বললো,আজিমপুর…

এদিক-সেদিক তাকিয়ে শিখাকে আর দেখতে পেলাম না।কোথায় যেন চলে গেল।হারিয়ে ফেলে মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রিকশাওয়ালা মামার সাথে সময় নষ্ট না করলে হয়তো আরও কিছুক্ষণ পিছু নেওয়া যেতো।

জিয়া হলের দিকে পা বাড়ালাম।পকেটের অবস্থা ভালো না।পয়ত্রিশ টাকায় খিচুড়ি খেয়ে বাসে করে মগবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।

ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম।বাসায় পৌঁছেই ফ্রেশ না হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম।মোবাইল বের করে চুরি করে করা ভিডিওটা বার-বার দেখছিলাম।তখনই মেসেঞ্জারে মেসেজ আসার শব্দ হলো।শিখার টেক্সট “ভীতু কোথাকার”। ভয় পেয়ে আর পিছু পিছু আসোনি তাইনা?

টেক্সটের কোন রিপ্লাই না দিয়ে মুচকি হাসছি।ভাবছি,বোকা মেয়ে একটা।সবসময়ই খালি চোখে যেটা দেখা যায় সেটাই বিশ্বাস করে।যদিও এটা ভেবে ভালো লাগছে,পাগলিটা আগের মতোই থেকে গেছে।তেমন একটা বদলায়নি।

 

নঈম আল ইস্পাহান, রাজারকুল,রামু।